× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিপিএলকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন এবং তা দ্রুতই

মোহাম্মদ ইসাম

প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৪৪ পিএম

আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৫৮ পিএম

বিপিএলকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন এবং তা দ্রুতই

৪ ফেব্রুয়ারি বিপিএল শুরুর আগের দিন সাকিব আল হাসানের বিস্ফোরক মন্তব্যে শুরু হয় বিতর্ক। ওই বক্তব্যে হিন্দি সিনেমা ‘নায়ক’-এর উদাহরণ টেনে অল্প সময়ে সমস্যায় জর্জরিত বিপিএলের সবকিছু সমাধান সম্ভব বলে ঘোষণা দেন সাকিব। সেই সঙ্গে বিপিএলের নানান দিকের দুর্বলতা তুলে ধরে এন্তার অভিযোগ করেন এই তারকা ক্রিকেটার।

—বিপিএল কেমন লিগ?

এই প্রশ্নের উত্তরে সাকিবের জবাব ছিল, এটা যা-তা লিগ!

সাকিবের অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিল দেরিতে প্লেয়ার ড্রাফট আয়োজন ও সম্প্রচারের নিম্নমান। পাশাপাশি অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের সঙ্গে বিপিএল সাংঘর্ষিক হওয়া থেকে বাঁচানো সম্ভব বলেও সাকিব জানান। বিপিএল নিয়ে বিসিবির প্রচারণা না থাকার অভিযোগও ছিল। বিপিএলের কোনো আসরেই টিভি রেটিং কত ও ম্যাচপ্রতি কত দর্শক স্টেডিয়ামে আসে সেটা কখনই জানা যায় না। টুর্নামেন্টের মান বাড়াতে সেটা জরুরি বলে সাকিবের মত ছিল।

ঢাকার পাশাপাশি বিপিএলের ভেন্যু ছিল সিলেট ও চট্টগ্রাম। সব সময় ভেন্যু দুটিতে দর্শকদের খেলা দেখার উৎসাহ অনেক বেশি থাকে। তবে এবারের আসরের চিত্র ছিল ভিন্ন। ছুটির দিন ছাড়া দর্শকদের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। অন্য আসরগুলোতে ঢাকায় প্লে অফ ম্যাচে দর্শকদের মাঠে আসার উৎসাহ অনেক বেশি থাকলেও এবার সেটা ছিল না। এর আগে টুর্নামেন্টের প্রথম দিন ম্যাচের সময় পরিবর্তন করে বিতর্ক তৈরি করে বিসিবি। সময়সূচি পরিবর্তন করলেও সেটা সংবাদমাধ্যম ও খেলা দেখতে আসা দর্শকদের জানাতে ভুলে যায় বিসিবি। এ ছাড়া টুর্নামেন্টে ক্রিকেটের মান ও খেলোয়াড়দের আচরণ নিয়েও ছিল নানা প্রশ্ন।

আরও পড়ুন: সাকিব সিদ্ধান্ত জানালেন, বিপিএল যা-তা, চেয়ার পেলে চেহারাই বদলে দেবো

বিপিএলের সাবেক ফ্র্যাঞ্চাইজি রাজশাহী কিংসের প্রধান নির্বাহী তাহমিদ হক বলেন, ‘প্রস্তুতির দিক থেকে বিপিএল সব সময় শেষ মুহূর্তের টুর্নামেন্ট। এ বছরও সেটার ভিন্ন ছিল না। বিপিএলের মতো টুর্নামেন্টে ডিআরএসের ব্যবহার জরুরি। না থাকায় যে বিতর্কগুলো সৃষ্টি হয়েছে সেটা আমি দেখেছি। এটার কোনো উন্নতি দেখছি না।’

বড় কোনো টুর্নামেন্টের জন্য পুরোপুরি একটি ডিআরএস দরকার। কিন্তু বিপিএলের লিগ পর্বে সেটা ছিল না। টিভি আম্পায়াররা ভিন্ন ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত দেন। পাশাপাশি টুর্নামেন্টে প্রতিযোগিতার অভাব ছিল চোখে পড়ার মতো। এটা অবশ্যই হতাশাজনক।

টুর্নামেন্টের নিচের তিন দল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, ঢাকা ডমিনেটর্স ও খুলনা টাইগার্স বিপিএল থেকে ছিটকে গেছে লিগ পর্বে আট ম্যাচ বাকি থাকতেই। এর আগে কখনই এত আগে বিপিএলের প্লে অফের দল নিশ্চিত হয়নি। সাধারণত দুই-তিন ম্যাচ বাকি থাকতে অন্তত শেষ দল নিশ্চিত হয়।

প্লে অফে উঠতে ব্যর্থ হওয়া দলগুলোর মূল সমস্যা মানহীন বিদেশি ক্রিকেটার। গত বিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় থাকা ৮ বিদেশি ক্রিকেটারের মাত্র তিনজন এবার খেলতে আসেন। বেনি হাওয়েল রংপুর রাইডার্স, আন্দ্রে ফ্লেচার খেলেছেন ফরচুন বরিশালের জার্সিতে। লিগ পর্বে না থাকলেও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের জার্সিতে প্লে অফ খেলতে এসেছেন মঈন আলি। সবাই অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগকে প্রাধান্য দিয়ে পরে বিপিএলে খেলতে আসেন। লিগ পর্বে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের পাওয়া গেলেও প্লে অফেও তারা ছিলেন না। বিকল্প বিদেশি পাওয়া নিয়েও তৈরি হয় শঙ্কা। যাদেরকে এক-দুই ম্যাচের জন্য আনা হয়, তারাও যে ভালো খেলবে তার নিশ্চয়তা ছিল না। বরিশালের ভানুকা রাজাপাকসে, রংপুরের ডোয়াইন ব্রাভো ও স্যাম বিলিংসরা এক-দুই ম্যাচের জন্য এসে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। 

প্রথম ম্যাচের দুই দিন আগে আমি এসেছি। খেলোয়াড়দের দেখার জন্য এটা আমার জন্য মোটেও আদর্শ সময় না। অন্তত এক সপ্তাহ সময় দেওয়া দরকার। তাহলে ক্রিকেটারদের বোঝা যায় ও তারা কোন রোলে খেলবে সেটা জানা সম্ভব।

বিপিএল শুরুর আগে বিসিবি কোনো কিছু ঠিক করতে না পারায় ফ্র্যাঞ্চাইজিরা নিজেদের মতো দল গুছিয়ে নিতে পারেনি। ওই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে এগিয়ে গেছে বিগ ব্যাশ, এস টি-টোয়েন্টি ও আইএল টি-টোয়েন্টির মতো লিগগুলো। এই নিয়ে হতাশ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স কোচ জুলিয়ান উড, ‘প্রথম ম্যাচের দুই দিন আগে আমি এসেছি। খেলোয়াড়দের দেখার জন্য এটা আমার জন্য মোটেও আদর্শ সময় না। অন্তত এক সপ্তাহ সময় দেওয়া দরকার। তাহলে ক্রিকেটারদের বোঝা যায় ও তারা কোন রোলে খেলবে সেটা জানা সম্ভব।’

তার মতে বিপিএল কখন আয়োজন করা হবে সেটা নিয়েও ভাবা উচিত। একই সময় চারটা ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট হওয়ায় খেলোয়াড় পাওয়া ও দল সাজানো কঠিন হয়ে পড়ে।

বিপিএলে ব্যর্থতার জন্য চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের উদাহরণই টেনে আনা যাক। প্রস্তুতির অভাবের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড়ের অভাব ছিল। বাংলাদেশে ওই রকম বিশ্বমানের টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড় নেই, সেটা মানতে হবে। এটা বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দেখেও স্পষ্ট হয়। এ কারণে বিদেশি ক্রিকেটারদের ওপর ভরসা করতে হয়। এই বছর ঘরোয়া ক্রিকেটের অচেনা কেউ পারফর্ম করতে পারেননি।

আরও পড়ুন: বিপিএল নয় যেন আয়ারল্যান্ডের প্রেস কনফারেন্স

এর পাশাপাশি ডিআরএস সমস্যা ও খেলোয়াড়দের আচরণগত সমস্যাও ছিল। ডিআরএসের বদলি হিসেবে এডিআরএস ব্যবহার করা হয়েছে। এটা টিভি আম্পায়ারদের কাছে থাকা প্রযুক্তির ব্যবহার। সেই সিদ্ধান্তগুলো খেলোয়াড়রা মানতে না পারায় নানা সময় মাঠে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। সৌম্য সরকার এডিআরএসের সিদ্ধান্ত না মেনে মাঠে থাকা আম্পায়ারের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন। একই দিন সাকিব লেগ আম্পায়ারের সঙ্গেও করেছেন বাজে ব্যবহার। নুরুল হাসান সোহান তো বোলার ব্যবহার নিয়ে আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্কই জুড়ে দেন। একই ম্যাচে এনামুল হক বিজয়ও আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারেননি। এগুলো বেশ হতাশাজনক ছিল। 

খেলোয়াড়দের পাশাপাশি কোচিং স্টাফের সদস্যরাও সমালোচনা করেন। চট্টগ্রামে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স কোচ সালাউদ্দিন এডিআরএসের সমালোচনা করে জরিমানার মুখে পড়েন। এত এডিআরএস! প্লে অফে নাজমুল হোসেন শান্ত তো ডিআরএসের সিদ্ধান্তই মানতে নারাজ ছিলেন। লিগ পর্বের ৪২ ম্যাচে ডিআরএস নিয়ে বিসিবির সিদ্ধান্ত ছিল বড়ই হতাশাজনক। টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ আগেই নির্ধারণ করলেও বিসিবি টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিন জানায়, লোকবল জোগাড় করতে না পারায় বিপিএলে থাকবে না ডিআরএস। যদিও স্টেডিয়ামের প্রোডাকশন রুমে ডিআরএসের সব যন্ত্রপাতি পুরো টুর্নামেন্টের সময় ছিল।

বিপিএল নিয়ে বিসিবির আলাদা কোনো পরিকল্পনা আছে কি না সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। রাজশাহী কিংসের প্রধান নির্বাহী তাহমিদের মতে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না থাকা ও দলগুলোর সঙ্গে লভ্যাংশ ভাগাভাগির কোনো পরিকল্পনা না থাকায় ফ্যাঞ্চাইজিগুলো আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে তিন বছরের জন্য দল দেওয়া হলেও বরিশালের মালিক সামনের বছর না খেলার হুমকি দিয়ে রেখেছেন। এটা বিপিএলের জন্য ভুল বার্তা। আমি এখানে কোনো সঠিক পরিকল্পনা দেখি না। বিপিএল নিয়ে বিসিবির ভাবনা কী?’

আরও পড়ুন: ‘তারা বলুক চায় না, এডিআরএস বন্ধ করে দেব’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘বুঝতে হবে এই ধরনের টুর্নামেন্ট আয়োজনে ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হওয়ার বিষয় থাকতে হবে। অন্যথায় ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো বরিশালের মতো খেলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। লাভের দিক থেকে তারা সব সময়ই বঞ্চিত।’

সমস্যা উত্তরণের পথও বাতলে দেন তাহমিদ। বলেন, ‘বিপিএলের ভবিষ্যৎ আছে। অনেক জায়গায় উন্নতি করতে হবে। প্রোডাকশনের মান বাড়াতে হবে। ক্রিকেটের বাজার ভারতের পরই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়। যদি আমরা এটা ব্যবহার করতে না পারি, তাহলে সেটা আমাদের জন্য ব্যর্থতা।’

তাহমিদ আরও যোগ করেন, ‘এখানে সব সময়ই প্রতিযোগিতা থাকে। আমাদের উন্নতির দরকার। অবশ্য বিপিএলের ভবিষ্যৎ আছে। এর আগে অবশ্যই বিপিএলের মান ভালো করতে হবে, তাহলেই অন্য লিগের চেয়ে এটা ভালো হবে।

বিপিএলের সব সময় ব্যস্ত আন্তর্জাতিক সূচির মধ্যে ফাঁকা জায়গা খুঁজে আয়োজন করা হয়। আইসিসিও বিপিএল আয়োজনের একটি নির্দিষ্ট সময় করে দিয়েছে। অন্য লিগগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলেও আগামী পাঁচ বছর এই সময়েই বিপিএল আয়োজন করতে হবে। এর মধ্যেই বিসিবিকে ডিআরএস ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তৈরি করতে হবে। তাহলেই এগিয়ে যাবে। না হলে বিপিএল দিনকে দিন শুধু পিছিয়েই পড়বে।

মোহাম্মদ ইসাম: জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা