মণিপুরে সহিংসতা
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৩ ১১:২০ এএম
আপডেট : ২০ জুলাই ২০২৩ ১৫:৪০ পিএম
মণিপুরে দুই কুকি নারীকে নগ্ন করে হাঁটানোর ভিডিওচিত্রের স্ক্রিনশট। ছবি : সংগৃহীত
জাতিগত সহিংসতায় বিধ্বস্ত ভারতের মণিপুরে এবার উন্মত্ত জনতা দুই কুকি উপজাতি নারীকে নগ্ন করে রাস্তায় হাঁটিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আক্রান্ত ওই দুই নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয় বলেও দাবি করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে ওই ঘটনার ‘প্রমাণ’ হিসেবে বুধবার (১৯ জুলাই) কিছু ছবি এবং ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে।
নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ছবি ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে ভারতজুড়ে।
মণিপুর সফররত তৃণমূল প্রতিনিধি দল থেকে শুরু করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী মণিপুরের ওই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে মণিপুর সফররত তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘নারীদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ আমাদের নজরে এসেছে। সংসদের অধিবেশনে আমরা বিষয়টি তুলব।’
তৃণমূলের টুইটার হ্যান্ডলে লেখা হয়েছে, ‘মণিপুরের রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া সেই দৃশ্য। যেখানে দুই নারীকে নগ্ন করে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাদের ওপর একদল পুরুষ যৌন নির্যাতন চালাচ্ছে।’
মণিপুর সফররত তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের নেতা রাজ্যসভা সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে আমরা বলব, মন কি বাত অনেক হয়েছে, এবার মণিপুর কি বাত বলুন।’
অন্যদিকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বুধবার বলেন, ‘উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারতীয় ভাবধারা আক্রান্ত। এ পরিস্থিতিতে ২৬ দলের নবগঠিত বিজেপিবিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ চুপ করে থাকবে না।’
তবে বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিটি গত ৪ মে তোলা বলে বিভিন্ন সূত্রের দাবি। থৌবল জেলায় নংপোক সেকমাই থানার অদূরের ওই দুই নারীর ওপর হামলা হয় বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন- মণিপুরের আদিবাসী নারীদের সঙ্গে যা হয়েছে তা ক্ষমার অযোগ্য : মোদি
যদিও একটি সংগঠনের দাবি, ঘটনাটি কঙ্গকপি জেলার। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং এ ঘটনায় পুলিশি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি টুইটারে লিখেছেন, ‘দুই নারীর ওপর ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। তদন্ত চলছে। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি ঘটনার ন্যায়বিচার হবে।’
মণিপুর পুলিশ জানিয়েছে, অপহরণ, বিবস্ত্র করে হাঁটানো, গণধর্ষণ এবং হত্যার মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
মণিপুরের ইম্ফল উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হল মৈতৈ জনজাতি। তবে তারা সম্প্রতি দাবি তুলেছে তাদের তফসিলি উপজাতির মর্যাদা দিতে হবে। তাদের এ দাবির বিরোধ জানিয়েছে স্থানীয় কুকি-জো আদিবাসীরা।
এ পরিস্থিতিতে গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন একটি মিছিলের আয়োজন করেছিল। সেই মিছিল ঘিরেই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে চূড়াচাঁদপুর জেলায়।
আরও পড়ুন: ভারতে নগ্ন করে ঘোরানো হলো দুই আদিবাসী নারীকে, গ্রেপ্তার হয়নি কেউ
এদিকে তফসিলি উপজাতির ইস্যুর পাশাপাশি সংরক্ষিত জমি এবং সার্ভে নিয়েও উত্তাপ ছড়িয়েছে। এ অবস্থায় গত এপ্রিলে চূড়াচাঁদপুর জেলাতেই মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সভাস্থলে আগুন লাগিয়েছিলেন ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরামের সদস্যরা।
এদিকে এ জেলা থেকে আদিবাসী বনাম মৈতৈদের এ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য জেলায়ও। আর এখন পর্যন্ত সেখানে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক মানুষ।
সূত্র : ন্যাশনাল হেরাল্ড ইন্ডিয়া