সংবাদ সম্মেলনে তামিমকে কটাক্ষ করে মন্তব্য
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ১২:৫৪ পিএম
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৪১ পিএম
সাকিব আল হাসান। ছবি: সংগৃহীত
দল হারুক বা জিতুক। একটা জিনিস বাংলাদেশের নিত্যসঙ্গী। সেটা আর কিছু নয়- বিতর্ক। বিতর্ক যেন কিছুতেই ভুলতে পারে না বাংলাদেশ। বিতর্ক যেন দেশের ক্রিকেটাঙ্গনের লোকজনের দারুণ পছন্দের রেসিপি! জীবনের অত্যাবশ্যকীয় এক অনুষঙ্গ। যেটা ছাড়া যেন চলাই দায়। বিতর্ক আসে। বিতর্ক একটা সময় মিলিয়ে যায়। কিন্তু একটা বিতর্ক যেন কখনও শেষ হওয়ার নয়। এবারের বিশ্বকাপে তো সেই রীতি চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে যেই যাচ্ছেন, তাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে তামিমকে নিয়ে। প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরাম, ক্রিকেটার নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদি হাসান মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ থেকে সাকিব আল হাসান- সবাইকে সাকিব-তামিম ইস্যু নিয়ে উত্তর দিতে হচ্ছে। মাঠের লড়াইয়ে তামিমের অভাব অনুভূত হচ্ছে কি না- এই প্রশ্নের উত্তরটা অন্তত দিতে হচ্ছে।
তামিম ইকবালের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের দ্বন্দ্ব নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। বিশ্বকাপের আগে থেকেই দুই ক্রিকেট তারকার সম্পর্কে ফাটল নিয়ে কেচ্ছা-কাহিনীর ডালপালা গজিয়েছে অনেক। বাংলাদেশের ক্রিকেটের আকাশে পাখা মেলেছে নানা গুঞ্জন। অনেকের মতে, তামিমকে বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে বাদ দিয়েছেন আসলে সাকিবই। পরে এ নিয়ে গণমাধ্যমে বিতর্কিত একটি সাক্ষাৎকারও দেন বাংলাদেশ ক্যাপ্টেন। যেটা সেই বিতর্কটাকে আরও উসকে দেয়। বিশ্বকাপে এর আগে তামিমকে নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে সাকিবকে। ব্যাপারটা এখানেই শেষ নয়। দুজনের মধ্যে চলমান ‘ঠান্ডা লড়াই’ নিয়ে ফের প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন সাকিব।
টানা পাঁচ হারের পর দলের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি নিয়েই উঠে গেছে প্রশ্ন। ক্রিকেটার, কোচ আর বিসিবি কর্তাদের তোলা হচ্ছে কাঠগড়ায়। কিন্তু সেসব ভুলে শনিবার রাতে কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে নেদারল্যান্ডসের কাছে ৮৭ রানের লজ্জার হারের পর সংবাদ সম্মেলনে তামিমকে নিয়ে সাকিব যে মন্তব্য করলেন, সেটা নিয়ে এখন বেশ সরগরম বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন। বাংলাদেশের ওয়ানডে টিমকে অনেক নেতৃত্ব দিয়েছেন তামিম ইকবাল। নিশ্চয় দলে তার অনুসারী রয়েছে। তামিম দলে না থাকায় তার অনুসারীদের প্রভাব কি দলে পড়েছে? তারা ভালো না করায় কি দলের এই ভরাডুবি? প্রশ্নটা শুনে সাকিব যেটা বললেন সেটা শুনে সবাই হতবাক, ‘ফেলতেই পারে। অস্বাভাবিক কিছু নয়। আসলে ব্যক্তির মনের ভেতর কী আছে সেটা বলা মুশকিল। কিন্তু আপনি যেটা বলছেন তার সঙ্গে দ্বিমত করি না। সেটি ফেলতেই পারে।’
তবে বিশ্বকাপের জন্য নিজেদের প্রস্তুতির ঘাটতির বিষয়টি এড়িয়ে যাননি সাকিব। বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার বলেন, বিশ্বকাপে ভালো করার জন্য যেমন প্রস্তুতি প্রয়োজন ছিল, সেটি নিয়ে ভারতে যেতে পারেনি তারা- ‘আমাদের প্রস্তুতির অনেক ঘাটতি ছিল। কিন্তু এখন আসলে এই অজুহাতগুলো দিয়ে খুব বেশি লাভ হবে না। কিন্তু আমরা অবশ্যই আন্ডার প্রিপেয়ার্ড ছিলাম।’
১৯৯৯ সাল থেকে গত ২৪ বছরে সাতটি বৈশ্বিক আসরে খেলেও বাংলাদেশ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের টিকিট পায়নি। সর্বোচ্চ সাফল্য কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা। সেও ২০১৫ বিশ্বকাপের কাহিনী। এবার কীভাবে বিশ্বমঞ্চের শেষ চারে উঠতে পারেন লাল-সবুজ প্রতিনিধিরা। সে ব্যাপারে বাংলাদেশ কাপ্তান বলেন, ‘এটা তো বলা মুশকিল। আপনি ভুল মানুষকে হয়তো প্রশ্ন করেছেন। আমার জায়গা থেকে যদি আমি বলি, অনেক কিছু পরিবর্তন করলে হয়তো বদলাবে। কিন্তু এখন আসলে এগুলো বলার সময় নয়। এটা অবশ্যই হতাশার। আমাদের মানুষেরা যেভাবে ক্রিকেট পছন্দ করে, সবাই যেভাবে ক্রিকেটে মনোযোগ দেয়, আমাদের এর থেকে ভালো করা উচিত ছিল।’
এবারের বিশ্বকাপ বাংলাদেশের সবচেয়ে বাজে আসর কি না? সাকিবের উত্তর- ‘হ্যাঁ, সেটা আপনি নির্দ্বিধায় বলতে পারেন এবং আমি দ্বিমত করব না এটাতে।’ এখন দলের যে পরিস্থিতি, তাতে করে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। সাকিব বলছেন তেমনটাই- ‘সত্যি কথা বলতে, খুবই কঠিন এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো। তিন ম্যাচ আছে। সুযোগ এখনও আছে আমাদের। তবে খুবই কঠিন। আমাদের চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই। আজকের দিনটা যদি ভুলে যেতে পারি, সামনের ম্যাচটায় মনোযোগ দিতে পারি, তাহলে ভালো হবে। আমরা যেখানে আছি সেখান থেকে খুবই কঠিন।’
হারের দুষ্টু চক্রে আটকে পড়েছে টাইগাররা। আগামীকাল মঙ্গলবার পাকিস্তানকে মোকাবিলা করবে দল। এই ম্যাচ নিয়ে ভাবনা কী? উত্তরে সাকিব বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের প্রতিপক্ষ নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই। আমাদের শুধু নিজেদের খেলাটা খেলতে হবে। নিজেদের চাঙা রাখতে হবে। আর কোনো সুযোগ নেই।’ হাতে বাকি আর তিন ম্যাচ। এই তিন ম্যাচ থেকে সমর্থকদের ভালো কিছু উপহার দিতে চান সাকিব, ‘আমাদের তিন ম্যাচ খেলতেই হবে। যদি আমরা বাংলাদেশের মানুষকে কিছু ফিরিয়ে দিতে পারি, সেটা দারুণ হবে।’
২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার সুযোগ পেতে হলে বিশ্বকাপ শেষ করতে হবে শীর্ষ আটে থেকে। সেটাই এখন করার চেষ্টা করবেন সাকিব ও তার দল- ‘ধরেন, পয়েন্ট তালিকায় আটের ভেতর থাকতে হবে যদি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে হয়। সেই জায়গাটা থেকেও এখনও তিনটা ম্যাচ আছে। যদিও আমি আগেই বলেছি, এ রকম জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন, খুবই কঠিন হবে আমাদের জন্য। আসলে খেলা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তো কিছু বলা যায় না। আমাদের চেষ্টাই করতে হবে।’
বিশ্বকাপের মাঝে ঢাকায় অনুশীলন শেষে ফেরার সময় মিরপুরে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে সাকিবকে দুয়ো দিয়েছিলেন কয়েকজন সমর্থক। এরপর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৫ রান নিয়ে আউট হয়ে ফেরার পথে ইডেন গার্ডেনসের দর্শকরা ফের সাকিবকে ভুয়া ভুয়া বলে দুয়ো দেন। এমন ঘটনার সাক্ষী এবারই প্রথম টাইগার অধিনায়কের। দর্শকদের এমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া নিয়ে সাকিব বলেন, ‘হতাশাজনক (দর্শকদের প্রতিক্রিয়া)। তারা আসলে প্রত্যাশাও করে ভালো কিছু। স্বাভাবিকভাবে সেটি না হলে তাদেরও অধিকার আছে তাদের মতো করে বলার। তাদের ক্ষেত্রে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমি মনে করি যেভাবে আমরা খেলেছি এটা আমরা ডিজার্ভ করি।’