প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৩ ০৮:৫০ এএম
জাসপ্রীত বুমরাহ আর তামিম ইকবাল- সীমান্তের এপার-ওপারে দুই ক্রিকেটারকে এক সুতোয় বেঁধেছিল চোট। সে চোটের ধরনটা এক, ঘটেছেও আবার প্রায় একই সময়ে। দুজনকে আবার আলাদা করেছে সে চোটের প্রতিকার। দুজনের চোট যে সামলানো হয়েছে ভিন্ন দুই পথে। ফলাফলটা তো এখন দেখতেই পারছেন!
আরও পড়ুন : ক্রিকেটকে বিদায় বললেন রুমানা
সীমানার ওপারের বুমরাহকে দিয়েই শুরু করা যাক। পিঠের চোটটা বুমরাহর অনেক পুরোনো। ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো এ চোট পথ আগলে দাঁড়ায় তার। এরপর ২০২২-এর জুলাইয়ে আবার চোট ফিরে আসে তার। জুলাইয়ে ইংল্যান্ড সফরে তৃতীয় ওয়ানডেতে খেলেননি ‘ব্যাক স্প্যাজম’-এর কারণে। সে চোট গেল বছরের আগস্টে এশিয়া কাপেও খেলতে দেয়নি তাকে, দল যখন আমিরাতে খেলছে এশিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের আসরে, তখন তাকে পুনর্বাসনের জন্য থাকতে হয় বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমিতে।
সেপ্টেম্বর ২০২২-এ বুমরাহ দুই মাস পর ফেরেন ভারতীয় দলে। তবে দুটো ম্যাচ খেলেই ছিটকে যান। তখন বিষয়টা স্রেফ ব্যাক স্প্যাজম নাকি স্ট্রেস ফ্র্যাকচার, সেটা নিয়ে কানাঘুষা চলছিল তখনই; তবে বুমরাহ ঠিকই বিশ্বকাপের স্কোয়াডে নাম লেখান। এরপরই অবশ্য জানা যায়, স্ট্রেস ফ্র্যাকচারের কারণে বিশ্বকাপে খেলা হচ্ছে না তার।
ততদিনে বিসিসিআইয়ের টনক নড়ে গিয়েছিল, তাড়াহুড়োর ফল কী হয়, সেটা টের পেয়ে গিয়েছিল চেতন শর্মার নেতৃত্বাধীন নির্বাচক বোর্ড। চেতন জানান, ‘বিশ্বকাপে খেলানোর জন্য তাকে নিয়ে তাড়াহুড়ো করেছিলাম আমরা, দেখতেই তো পেলেন, কী হলো! তো এখন আমাদের বুমরাহকে নিয়ে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।’
ভারতের সে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল চলতি বছরের শুরুতে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রাথমিক দলে না থাকলেও চূড়ান্ত দলে তোলা হয়েছিল তার নাম; বলা হয় এনসিএ তো তাকে ‘পুরো ফিট’ ঘোষণা করেই দিয়েছে। তবে অনুশীলনে আবারও পিঠে সমস্যা অনুভব করেন তিনি। যে কারণে আরও একবার দল থেকে ছিটকে যেতে হয় তাকে।
যে ভুল দুবার করে মাশুল গুনেছিলেন চেতন শর্মারা, সে পথে আর হাঁটেননি তারা। মার্চের শেষদিকে তাকে পাঠানো হয় নিউজিল্যান্ডে, পিঠে অস্ত্রোপচার করাতে। লোভনীয় আইপিএলের একটা আসর জলাঞ্জলি দিয়েছেন বুমরাহ, তাকে পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও, ভারত শেষমেশ পায়ওনি তাকে; তবে সেসবের তোয়াক্কা না করেই অস্ত্রোপচারটা করানো হয়েছে তার, যেন বিশ্বকাপটা ঠিকঠাক খেলতে পারেন। আসছে আয়ারল্যান্ড সিরিজ দিয়ে তিনি ফিরছেন দলে, হচ্ছেন অধিনায়কও। তবে বিশ্বকাপে খেলা যে নিশ্চিত অনেকটাই, তা পরিষ্কার একেবারে।
এবার আসুন তামিমের গল্পে। টাইমলাইনটা দেখুন। তামিম ইকবাল প্রথম চোটে পড়লেন সেই গেল বছরের নভেম্বরে। ভারত সিরিজে খেলতে পারলেন না। ফিরলেন বছর শুরুর বিপিএল দিয়ে। চোট সামলে খেলছেন বলেই কি না বিসিবি থেকে তাকে বার্তা দেওয়া হয়েছিল বিপিএলে তার দল খুলনা টাইগার্সের হয়ে শেষ দুটো ম্যাচে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য, তিনি তা নিয়েছিলেনও।
কিন্তু চোট সামলে আর কতদিন খেলা যায়? আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজের আগে ফিরল তার চোট। কথায় আছে না, ‘সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়’; ওই দশ ফোঁড় হয়েই ফিরল এবার। টেস্টটায় খেলতে পারলেন না। ওয়ানডেতে খেললেন চোট থেকে পুরো ফিট না হয়েই।
এরপর অনেক কিছু হলো। লন্ডনে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে দেখতে পেলেন চোটের গভীরতা বেশ, প্রয়োজন অস্ত্রোপচারের, না হলে নিদেনপক্ষে ইনজেকশন। বিশ্বকাপের আর দুই মাসের কিছু বেশি সময় বাকি, অস্ত্রোপচার করালে আধটা বছর চলে যেত, তাই তিনি ইনজেকশনই নিলেন, কাজ হবে কি না, তা নিশ্চিত হয়েই।
এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকে আর যা-ই হোক, দলের অধিনায়কত্ব ধরে রাখা চলে না। তামিম তা রাখেনওনি। ছেড়ে দিয়েছেন গত বৃহস্পতিবার। তবে সে সংবাদ সম্মেলনে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন যা জানালেন, তাতে পিলে চমকে ওঠারই কথা। তামিম তার চোটের খবর নিয়মিতই জানাতেন ক্রিকেট অপারেশনস বিভাগে। কিন্তু সে খবরটা আর পাপন পর্যন্ত পৌঁছত না। বোর্ড সভাপতি বিষয়টা জানতে পেরেছেন এই কিছুদিন হলো। পুরো বিষয়টা ইঙ্গিত দেয়, তামিমের সমস্যার গভীরতাটা ক্রিকেট অপারেশনস বিভাগ ধরতে দেরি করে ফেলেছে অনেক। বুমরাহর গল্পের সঙ্গে তামিমের সবচেয়ে বড় ফারাকটা এখানেই। দুজনের ফলাফলটাও হলো ১৮০ ডিগ্রি উল্টো। বুমরাহ যেখানে খেলছেনই বিশ্বকাপে, তামিমের সেখানে খেলাটাই অনিশ্চিত।
তামিমের সঙ্গে যা হয়েছে এমন কিছু অবশ্য আগেও ঘটেছে দেশের ক্রিকেটে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে সাকিব আল হাসানের পাওয়া বাঁ হাতের কনিষ্ঠাঙুলে চোট অনেক দিন ধরেই ইনজেকশন দিয়ে সারানো হয়েছে, যা বড় হয়ে উঠেছে সে বছরের এশিয়া কাপে। এতটাই যে আরেকটু হলে আঙুলটাই হারাতে হতো সাকিবকে। ভাগ্যিস, সাকিব অল্পের ওপরই ‘বেঁচে’ গেছেন, তামিমের ক্ষেত্রে তা হলো না।
তামিম-বুমরাহর গল্পটাও আলাদা হয়ে গেল এখানে। বিসিসিআই যেখানে নিজেদের ভুলটা বুঝেছে আগেভাগেই; বিসিবি সেটা বোঝেনি, আগের একটা ভুলের পরও।