প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৩ ১৯:০১ পিএম
কদিন আগে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো বলেছিলেন, ‘এক বছরের মধ্যে সৌদি প্রো লিগ তুর্কি ও ডাচ লিগকে ছাড়িয়ে যাবে। উঁচু মাপের আরও অনেক খেলোয়াড় আসবে সৌদিতে।’রোনালদোর এমন দাবির প্রমাণ ইতোমধ্যে মিলছে। কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থের ঝনঝনানি হোক কিংবা নতুন চ্যালেঞ্জ— ইউরোপ ছেড়ে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমানো খেলোয়াড়ের তালিকা ক্রমেই বড় হচ্ছে। পর্তুগিজ মহাতারকার পর সৌদি আরবে নাম লিখিয়েছেন গতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী করিম বেনজেমা। বায়ার্ন মিউনিখ ছেড়ে সৌদির পথে পাড়ি জমাতে যাচ্ছেন সাদিও মানেও।
আরও পড়ুন - ডেঙ্গু আক্রান্ত জাতীয় দলের ক্রিকেটার
একের পিঠে আরেক করে নামের তালিকাটা যতটা বড় হচ্ছে ততই মধ্যপ্রাচ্যের লিগটি মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে ইউরোপের ক্লাবগুলোর। সৌদি লিগের ব্যাপারে ইউরোপের ক্লাবগুলোকে তো সতর্ক হতে পরামর্শ দিয়েই দিয়েছেন পেপ গার্দিওলা। ম্যানচেস্টার সিটিকে ট্রেবল জেতানো গার্দিওলার মতে, দলবদলের বাজার ওলটপালট করে দিয়েছে সৌদি লিগ। তবে গার্দিওলার সঙ্গে এখানে একমত নন এরিক টেন হাগ। অন্যান্য লিগের তুলনায় জনপ্রিয়তা, অর্থ এবং মানের দিক থেকে এগিয়ে থাকায় প্রিমিয়ার লিগের জন্য এটা সমস্যা হবে না বলেও মনে করছেন ইউনাইটেড কোচ। কিন্তু তিনি মনে করেন, অর্থের দাপটে খেলোয়াড়দের ‘হাইজ্যাক’করে নিচ্ছে ক্লাবগুলো। যা রীতিমতো মাথাব্যথার। কিন্তু বিষয়টি খোলাখুলিভাবে মানছে বা বলছে না কেউ।
মাসখানেক আগে, উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্দার সেফেরিন বলেছিলেন, সৌদি ক্লাবগুলো বুড়ো ফুটবলারদের ইউরোপ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আদপে দেখা যাচ্ছে তেমন না। তারা টার্গেট করছে তারকা, তা বুড়ো কিংবা তরুণ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে পর্তুগিজ মহাতারকা রোনালদোকে নিয়ে আসার মধ্য দিয়ে দেশটির ফুটবলে দিনবদলের হাওয়া লাগে। যে পালে জোর হাওয়া জুড়ছে অর্থ। মূলত সৌদি প্রো লিগকে নক্ষত্রপুঞ্জ বানাতে আরও অন্তত ৫০ জন তারকা ফুটবলারকে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করে রেখেছে ক্লাবগুলো। সেই পথেও অনেকখানি এগিয়ে গেছে দেশটির ক্লাবগুলো।
রোনালদোর পর করিম বেনজেমা, এনগোলো কান্তে, রবার্তো ফিরমিনো, এডোয়ার্ড মেন্দি, মার্সেলো ব্রোজোভিচ, কালিদু কুলিবালি, রুবেন নেভেসদের মতো তারকাদের নিয়ে এসে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে অনেক দূর এগিয়েও গেছে সৌদি আরব। আল ইত্তিফাকের কোচ হয়েছেন লিভারপুল কিংবদন্তি স্টিভেন জেরার্ড। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি লিওনেল মেসিকেও নেওয়ার প্রক্রিয়া করেছিল। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ককে কেনার কথা ছিল আল নাসরের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী আল হিলালের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন না হলেও অন্য ক্ষেত্রে বেশ সফল সৌদি। প্রিমিয়ার লিগের জায়ান্ট পাঁচ ক্লাবের অন্তত দশজন ফুটবলারকে দলে ভিড়িয়েছে সৌদি প্রো লিগের দলগুলো। এমনকি তাদের টার্গেটে রাখা খেলোয়াড়ও নিজেদের ডেরায় নিয়ে যাচ্ছে।
পুরো বিষয়টি নিয়ে চিন্তার কথা বলেছেন গার্দিওলা, ভবিষ্যতে আরও সেরা মানের খেলোয়াড় সৌদিতে যাবে। এজন্য ক্লাবগুলোর সতর্ক হওয়া দরকার যে, কী ঘটতে চলেছে। সিটিজেনদের তারকা রিয়াদ মাহরেজও যোগ দিয়েছেন আল আহলিতে। তার ব্যাপারে পেপ বলেছেন, “রিয়াদ মাহরেজ অবিশ্বাস্য প্রস্তাব পেয়েছে। এ কারণে আমরা ওকে ‘যেয়ো না’বলতে পারিনি। সৌদি লিগ দলবদলের বাজার একেবারে বদলে দিয়েছে।”
ইউনাইটেড থেকে সৌদির আল নাসরে চলে গেছেন অ্যালেক্স তেলেস। টেন হাগের পাখির চোখ করা সোফিয়ান আমরাবাতকেও ‘হাইজ্যাক’করতে যাচ্ছে সৌদি ক্লাব আল আহলি। তবু, ছন্দে থাকা খেলোয়াড়দের নিয়ে যাওয়ায় ইউরোপীয় ফুটবলে সমস্যা হচ্ছে বলে মানছেন না টেন হাগ। বার্তা সংস্থা পিএ-কে ইউনাইটেড বস বলেন, ‘ইউরোপে এর একটা প্রভাব পড়ছে। কারণ সৌদি আরবে প্রচুর অর্থ আছে, যেটা খেলোয়াড়দের আকর্ষণ করছে। আমার মনে হয় না প্রিমিয়ার লিগের জন্য এই মুহূর্তে সমস্যা আছে।’
মানা বা না মানা ব্যক্তিগত বিষয় হলেও আদপে ইউরোপের দলবদলের বাজারে বড় প্রভাব ফেলেছে সৌদি। যার ‘ভুক্তভোগী’হচ্ছে ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় ক্লাবগুলো। দিন দিন সেটা বাড়তির পথেই।