প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৩ ১৪:৩৬ পিএম
‘প্রোসেস’ – ভারতের বিপক্ষে সিরিজ ড্রয়ের ঠিক পরদিনই মারুফা আক্তারের ফেসবুক পোস্ট ছিল এমন। সেখানে সায় দিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতিও। সে প্রক্রিয়াই যে বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দিয়েছে ভারতের বিপক্ষে! সে প্রক্রিয়ার জোরেই এবার গোটা বিশ্বকেও নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়ার হুঙ্কার কোচ হাশান তিলকরত্নের।
আরও পড়ুন : দুর্দান্ত খেলেও জয়বঞ্চিত আর্জেন্টিনা
দলটার ভেতর এমন সাফল্য এনে দেওয়ার রসদ আছে, তা আগেভাগেই বুঝতে পেরেছিলেন কোচ। সম্প্রতি ক্রিকবাজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাই জানান তিনি। বলেন, ‘বিশ্বকাপ বাছাই, এশিয়া কাপে যখন তাদের দেখেছি, তখন মনে হয়নি তাদের কোনো স্কিলের কমতি আছে; স্রেফ একটু ঘষামাজার দরকার ছিল। কাজটা চ্যালেঞ্জের ছিল, তবে আমার এটা ভালো লেগেছে, কারণ তাদের ভেতর শেখার তাড়নাটা ছিল। আর এটাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
ভারতের বিপক্ষে সাফল্যটা সে ঘষামাজারই ফল। এই সাফল্যটা আরও এক কারণে গুরুত্বপূর্ণ হাশানের চোখে। এই সিরিজ যে ক্রিকেটারদের ভেতর বিশ্বাসের বীজটাও বুনে দিয়েছে! কোচের ভাষায়, ‘আমি মনে করি এই ফলাফলটা বিশাল কিছু। কারণ ভারতের মতো শীর্ষ র্যাঙ্কিংয়ে থাকা দলের বিপক্ষে এমন ফলাফলটা আসলেই বড় চ্যালেঞ্জের ছিল। এই জয়টা অনেক বড় কিছু, কারণ মেয়েরা নিজেদের বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। আমরা জানি সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে, কিন্তু আপনি যখন বড় দলের বিপক্ষে ভালো করতে শুরু করবেন, তখন প্রস্তুতি নেওয়াটা সহজ হয়ে যায়, কারণ তখন আপনার কেবল প্রক্রিয়াটা অনুসরণ করলেই হয়ে যাচ্ছে।’
কাছে গিয়েও ম্যাচ খোয়ানো বাংলাদেশ ক্রিকেট তাদের ইতিহাসে কম দেখেনি, সেটা ছিল পুরুষদের ক্রিকেটে, এবারের ভারত সিরিজে দেখা গেল নারীদের ক্রিকেটেও। এরপর অবশ্য জয়ও ধরা দিয়েছে নিগারদের হাতে, সম্ভাবনা ছিল সিরিজ জয়েরও। তবে এমন কিছু ভিন্ন এক বার্তাও দেয় বৈকি! শেষ পর্যন্ত বুক চিতিয়ে লড়ে যাওয়া ইঙ্গিত দেয় পরের ধাপে যাওয়ার কক্ষপথেই আছে দল। কোচেরও মনে হচ্ছে তা-ই। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা পরের ধাপে উন্নীত হয়েছি, এটা অর্জন করায় মেয়েদের বড় একটা পদক্ষেপও নেওয়া হয়ে গেছে।’
ভারতের বিপক্ষে এই সিরিজে বাংলাদেশ স্কোয়াডেই ছিলেন না জাহানারা আলম, স্কোয়াডে থেকেও মাঠে নামা হয়নি অভিজ্ঞ সালমা খাতুনের। তাদের ছাড়াই ভারতকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। কোচ জানালেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা মাথায় রেখেই এই প্রক্রিয়ায় হেঁটেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। তাই বলে অবশ্য অভিজ্ঞদের জন্য দরজাটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে না একেবারে।
কোচের ভাষ্য, ‘২০২৪ বিশ্বকাপ সামনে রেখেই আমরা এগোচ্ছি, বেশ কিছু তরুণ খেলোয়াড় উঠে আসছে। হ্যাঁ, আমাদের তারুণ্য আর অভিজ্ঞতাকে এক সুতোয় বাঁধতে হবে, আমরা তাই রাস্তাটা একেবারে বন্ধও করে দিচ্ছি না। যদি কেউ ভালো হয়, পারফর্ম করে, তাদের জন্য দরজাটা খোলাই থাকবে। তারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অনেক কিছু করেছে, তাদের জন্য আমার মন থেকে সম্মানও আছে। যদি তারা পারফর্ম করে, তাহলে দেশের জন্য খেলতে তাদের সামনে কোনো বাধাই থাকবে না।’
যে প্রক্রিয়ায় ভারতকে রুখে দেওয়া গেছে, সেই প্রক্রিয়া ধরেই এবার আরও বড় দলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চান হাশান। তার বিশ্বাস, সেটা করার জন্য পর্যাপ্ত রসদ তার দলে আলবৎ আছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের দুইয়ে থাকা দলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছি, অন্যদের কেন পারব না? তারা সেটা করতে পারবে। আমার বিশ্বাস, নিজেদের দিনে বিশ্বের যেকোনো দলকে চ্যালেঞ্জ জানানোর স্কিল আর সম্ভাবনা আছে তাদের মাঝে। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। এটা চলার সময় আপনি অনেকগুলো চ্যালেঞ্জিং ধাপের মধ্য দিয়ে যাবেন, সেই ধাপগুলোকে আপনার নিজের স্কিল আর জ্ঞান দিয়ে চ্যালেঞ্জ জানাতে হবে।’