প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৩ ১০:০০ এএম
আপডেট : ১৭ জুন ২০২৩ ১০:০৫ এএম
প্রথম ইনিংসে নাজমুল হোসেন শান্তর সামনে ছিল ডাবল সেঞ্চুরির সুযোগ। আফগানিস্তানের নির্বিষ বোলিংয়ে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। ম্যাচ শেষে তাই শান্তর উদ্দেশে অনেকেই বলেছিলেন, ‘ইনিংসটা বড় হতে পারত।’ ওই উত্তরে অবশ্য শান্তর স্পষ্ট জবাব ছিল, ‘যা হয়েছে তাতেই সন্তুষ্ট।’
আরও পড়ুন : রেকর্ড জয় দেখছে বাংলাদেশ
প্রথম ইনিংসের সন্তুষ্টি সরিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে শান্তর ফের সেঞ্চুরি। তিন অঙ্কের ওই ম্যাজিক ফিগার শুধু ফর্মে থাকা শান্তকে প্রমাণ করেনি। এর মাঝে লুকায়িত অনেক প্রশ্নের উত্তরও। সমালোচনার হাজারো জবাব এক টেস্টে শান্তর জোড়া সেঞ্চুরি। এটা একটি রেকর্ডও বটে।
প্রথম ইনিংসের পর আফগানদের নির্বিষ বোলিংয়ের দেখা মেলে দ্বিতীয় ইনিংসেও। সহজ-সাবলীল বল পেয়ে শান্তর মাঝেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে রানের ক্ষুধা। আগের দিন ৬৪ বলে ৫৪ রানে দিন শেষ করে শান্ত সেঞ্চুরির পথে এগোন আরও আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায়। ১১৫ বলে পূর্ণ করেন সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ১৫১ বলে ১২৪ রান করে ফেরেন প্যাভিলিয়নে। ৮২.১১ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট চালানো শান্ত বল সীমানা পার করেন ১৫ বার। তবে ইনিংসে ছিল না কোনো ছক্কার দেখা। ছক্কা না থাকলেও বলা যায়, ওয়ানডে স্টাইলের এক আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলেছেন শান্ত।
তবে শান্তর ওই ইনিংস থামতে পারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই। ষষ্ঠ ওভারে নিজের খেলা ১১তম বলে নিজাত মাসুদ ফেরাতে পারতেন তাকে। বোলিং করে নিজাতের পক্ষে সম্ভব হয়নি ফিরতি ক্যাচ ধরার। ফলে শান্তর আর ফেরা হয়নি ড্রেসিংরুমে। যখন আউট হয়ে ফিরেছেন তখন শান্তর সঙ্গী দুই দুইটি রেকর্ড। একই টেস্টে দুই সেঞ্চুরির সঙ্গে এক টেস্টে সর্বোচ্চ চারের রেকর্ডটা তার দখলে। একই টেস্টে দুই সেঞ্চুরির রেকর্ডে অবশ্য বাংলাদেশের পক্ষে শান্ত একাই নন। তার সঙ্গী হিসেবে আছেন সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক। যিনি নিজেও গতকাল পেয়েছেন টেস্ট সেঞ্চুরি। তাও ২৫ মাস ও ২৬ ইনিংস পর। ইনিংস ঘোষণার আগ পর্যন্ত মুমিনুল অপরাজিত ছিলেন ১২১ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে জীবন পাওয়ার সুযোগে আর ভুল করেননি। ঠিকই তুলে নেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি। একই ম্যাচে তৃতীয় ও চতুর্থ সেঞ্চুরি পাওয়া শান্তর দুই ইনিংসই ছিল আক্রমণাত্মক। তবে সেঞ্চুরি পূর্ণ করা পর্যন্ত দ্বিতীয় ইনিংসেরটাই ছিল বেশি আক্রমণাত্মক। কারণ, প্রথম ইনিংসে ১১৮ বলে করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে শান্তর সেঞ্চুরি পূর্ণ হয়েছে ১১৫ বলে। শান্ত আক্রমণ করে খেলেছেন, সেটার আরও বেশি প্রমাণ কীভাবে তার রান এসেছে, তার ধরনে। শান্তর ইনিংসের বেশিরভাগ রান এসেছে পুল ও কাভার ড্রাইভে। তাতেই স্পষ্ট শান্তর মাথায় ছিল শুধুই আক্রমণাত্মক খেলা। অবশ্য শুধু শান্ত নন, পুরো দলই ছিল আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায়। রান তুলেছে ওয়ানডের রানরেটের গতিতে। হয়তো বাজবলের অনুপ্রেরণা কাজে লাগাচ্ছে। যদিও প্রথম দিন শেষে শান্ত জানান, কারও থেকেই অনুপ্রেরণা নিচ্ছেন না। খেলছেন পরিস্থিতি অনুযায়ী।
শান্তর দুই ইনিংসে আছে একটি অদ্ভুত মিল। দুই ইনিংসেই দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে সবচেয়ে বেশি রান তুলেছেন। সেখান থেকেই বাংলাদেশ পেয়েছে বড় সংগ্রহের ভিত। তার সঙ্গীরা সেঞ্চুরির কাছাকাছি থামলেও শান্ত অবশ্য হাতছাড়া করেননি। শান্ত ঠিকই তুলে নেন সেঞ্চুরি। টানা দুই সেঞ্চুরি অবশ্য সমালোচকদের উদ্দেশে শান্তর উত্তর। কারণ, টানা পড়তি ফর্মে থাকা শান্তর ওপর ভরসা রাখার মতো কাউকে খুঁজে পাওয়াই ছিল দুষ্কর। তবে ফর্মে ফেরার পর শান্তর ওই সমালোচকদের খুঁজে পাওয়াটাই যেন কষ্টকর। সর্বশেষ বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে ফর্মে ফেরা শান্ত এখন হয়ে উঠেছেন দলের সেরা তারকা। তাকে ছাড়া এখন আর ভাবা যায় না বাংলাদেশ দলের কোনো ফরম্যাটের একাদশ। এতটাই নিয়মিত হয়ে উঠেছেন, আফগানদের বিপক্ষে দুই সেঞ্চুরি শান্তর সেসব সমালোচনার জবাব। সেটা বলার কোনো অপেক্ষা রাখে না।
শান্তর ওই বড় ইনিংসের পাশাপাশি মুমিনুল হকও করেন সেঞ্চুরি। তাতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে পেয়েছে বড় সংগ্রহ। প্রথম ইনিংসের বড় লিডের সঙ্গে বড় সংগ্রহ- দুই মিলিয়ে আফগানদের সামনে লক্ষ্য ছুড়েছে ৬৬২ রানের। পাহাড়সম ওই লক্ষ্য আফগানরা পার করতে পারবে না সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, তৃতীয় দিন শেষে আফগানদের সংগ্রহ যে ২ উইকেটে ৪৫ রান। শেষ দুই দিনে ম্যাচ জিততে আফগানদের করতে হবে ৮ উইকেটে ৬১৭ রান। এই পাহাড় টপকাতে বিশ্বরেকর্ড গড়তে হবে, যা কোনোভাবেই সম্ভব নয় আফগানদের জন্য। তাই এখনই বলে দেওয়া যায়, ম্যাচ জয় নিশ্চিত বাংলাদেশের।