প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৩ ২৩:২৭ পিএম
আপডেট : ০২ জুন ২০২৩ ২৩:৩০ পিএম
আগের সপ্তাহান্তে বসুন্ধরা কিংস নিশ্চিত করেছিল নিজেদের লিগ শিরোপা। আর গত মঙ্গলবার ফেড কাপের মহাকাব্যিক ফাইনালের পর এটাই ছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের প্রথম ম্যাচ। লড়াইটা তাই ছিল দুই চ্যাম্পিয়নের, যেন এক অঘোষিত সুপার কাপ ম্যাচ। সে লড়াইয়ে শেষ হাসিটা বসুন্ধরাই হেসেছে। মোহামেডানকে হারিয়েছে ২-১ গোলে, তাতে তাদের লিগ চ্যাম্পিয়নের উৎসবটাতেও লেগেছে বাড়তি রঙ।
আরও পড়ুন : জাদরানের ব্যাটিং ঝলকে জিতল আফগানিস্তান
বসুন্ধরার লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর প্রথম ম্যাচ। এ ম্যাচ নিয়ে বাড়তি উদযাপনের প্রস্তুতি ছিল বেশ। ম্যাচ শুরুর আগে বসুন্ধরা তাদের ঘরের মাঠে এসেছে যখন, তখন সমর্থকরা রীতিমতো এসেছেন মোটরসাইকেল র্যালি করে।
এ তো গেল শুধু মাঠের বাইরের উদযাপন, মাঠেও তো ছিল অনেক আয়োজন! ম্যাচ শুরুর আগে কমলা রঙা ফ্লেয়ার পোড়ান সমর্থকরা। রাখা হয়েছিল আতশবাজিও, ম্যাচ শেষে পোড়ানো হবে বলে।
তবে বসুন্ধরার এতসব আয়োজনে কি না মোহামেডান রীতিমতো পানি ঢালারই উপক্রম করে বসেছিল! ফেড কাপ জেতা মোহামেডানের আত্মবিশ্বাস ছিল রীতিমতো আকাশছোঁয়া। সেটার ছাপ রেখেছিল ম্যাচের শুরুতেও।
ম্যাচের বয়স তখন মোটে ৭৫ সেকেন্ড। রজার দুরাতের লং বলটা বসুন্ধরা বক্সের একটু সামনে পেয়ে যান ইমানুয়েল সানডে। বিশ্বনাথ ঘোষ আর তারিক কাজীর মাঝখান থেকে বলটা পেয়ে প্রথম ছোঁয়াতেই করে বসেন দারুণ এক শট। আর তাই গোলরক্ষক সাইফুল ইসলামকে ফাঁকি দিয়ে জড়ায় বসুন্ধরা কিংসের জালে। যেভাবে আক্রমণটার শুরু আর শেষটা হলো, আত্মবিশ্বাসের চূড়ায় না থাকলে তা আর হয় কী করে!
তবে বসুন্ধরা যে লিগ চ্যাম্পিয়ন! কেন তারা চ্যাম্পিয়ন, তার প্রমাণটা অস্কার ব্রুজনের দল রেখেছে ম্যাচের বাকি অংশে। বলের দখল থেকে শুরু করে আক্রমণ, সব দিকেই ছিল তাদেরই আধিপত্য। তাও আবার আগের ম্যাচে চার গোল করা দরিয়েলতন গোমেজকে ছাড়াই!
নিষেধাজ্ঞার কারণে তাকে আজকের ম্যাচে পায়নি বসুন্ধরা। তার বদলে কোচ অস্কার ব্রুজন এদিন মাঠে নামান শেখ মোরসালিনকে। ত্রেকোয়ার্তিস্তা বা ফাইনাল প্লেমেকারের ভূমিকায় তিনি স্রেফ ভালোই করেননি, রীতিমতো আলোই ছড়িয়েছেন বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায়।
মোহামেডানের গোলের জবাবটা যে বসুন্ধরা দিতে সময় নিল মোটে ৮ মিনিট, সেটার একটা বড় কৃতিত্ব তো এই মোরসালিনেরই! মাঝমাঠ থেকে সোহেল রানার বাড়ানো বল মোহামেডান বক্সের ঠিক সামনে খুঁজে পায় তাকে। তার বাড়ানো দারুণ এক পাস প্রতিপক্ষ বক্সে ফাঁকায় পেয়ে যায় মিগেল দামাসেনোকে। তার শট গিয়ে আছড়ে পড়ে জালে। বসুন্ধরা সমতা ফেরায় ১০ মিনিট পেরোনোর আগেই।
সে গোলের পর বসুন্ধরা গোলের আরও সুযোগ তৈরি করেছে। অবশেষে তাদের সে চেষ্টা আলোর মুখ দেখে এসে ৪০ মিনিটে। এই গোলের উৎসও সেই মোরসালিনই। মাঝমাঠ থেকে মিগেলের হেডার তার কাছে এসে পড়ে, পাশ থেকে আগুয়ান রাকিব হোসেনকে লক্ষ করতেই বলটা বাড়ান তাকে। বক্সে ঢুকে মোহামেডান রক্ষণকে রীতিমতো ঘোল খাইয়ে বলটা জালে জড়ান রাকিব। মোরসালিন দুই গোলের জোগান দেওয়া ছাড়াও আরও বহুবার আক্রমণে উঠেছেন। পরিস্থিতিটা এমন ছিল, বসুন্ধরা জোন ফরটিনে বল মানেই যেন তিনি ছিলেন আক্রমণের কান্ডারি।
মোহামেডান আগের ম্যাচেও দুই গোল হজম করে সেখান থেকে ফিরে ম্যাচ জিতেছিল। এদিনও প্রথমার্ধ বিরতিতে গিয়েছিল এক গোলে পিছিয়ে। আগের ম্যাচে শাহরিয়ার ইমনকে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বদলি হিসেবে নামিয়েছিলেন, নামালেন আজও। তার সুফলটা প্রায় পেয়েই গিয়েছিল মোহামেডান। ৪৭ মিনিটে বক্সের সামনে জটলা থেকে সুযোগটা আসে ইমানুয়েল সানডের সামনে, কিন্তু তার শটটা গিয়ে লাগে দূরের পোস্টে। ফিরতি সুযোগে আমির হাকিম বাপ্পি ফাঁকা পোস্টেও বলটা জড়াতে পারেননি জালে।
মোহামেডান সুযোগ তৈরি করতে চেয়েছে আরও, তবে সেসব গিয়ে আটকেছে বসুন্ধরার রক্ষণ দেয়ালে। শেষদিকে জোড়া হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় সাদা-কালো শিবিরের মুজাফফরভকে। দশজনের দল নিয়ে ম্যাচটা নিদেনপক্ষে ড্র করাটাও অসাধ্য ছিল তাদের, সেটা শেষমেশ করাও হয়নি তাদের। ২-১ গোলের জয় নিয়ে শেষ হাসিটা তাই হেসেছে বসুন্ধরাই। ম্যাচ শেষে আতশবাজি পুড়িয়ে উদযাপনের উপলক্ষটাও তাই নেহাত খারাপ হয়নি!