× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

৮ গোলের ফাইনালে মোহামেডানের জয়োৎসব

নেয়ামত উল্লাহ, কুমিল্লা থেকে

প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৩ ১৩:১০ পিএম

আপডেট : ৩১ মে ২০২৩ ১৩:১৩ পিএম

৮ গোলের ফাইনালে মোহামেডানের জয়োৎসব

ভেন্যুটা কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়াম নাকি দোহার লুসাইল আইকনিক, তা নিয়ে খানিকটা দ্বিধাতেই পড়ে যাওয়ার জোগাড় হলো। মোহামেডান আর আবাহনী, দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী যে লড়ল ওভাবেই। ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী’- এ চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা ঠিকরে পড়ল দুই দলের দ্বৈরথে। ধ্রুপদী ফাইনাল আর না হয়ে যায় কী করে? তবে দিনশেষে লড়াইটা ফাইনালের, এক দলকে জিততেই হতো। ৮ গোলের পাগলাটে এই ম্যাচে পেনাল্টি শ্যুট আউটে শেষ হাসিটা হাসল মোহামেডান, আবাহনীকে হারাল ৪-২ গোলে।

আরও পড়ুন : হেরাথে বিশেষ ক্লাস, ‘প্রস্তুত’ স্পিনাররা

ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে লুসাইল নেমে আসার কথা কেন, এ প্রশ্নটা হয়তো চলেও এসেছে আপনার মনে। সাড়ে পাঁচ মাসের এদিক-ওদিকে দুই স্টেডিয়ামে হয়েছে দুই ফাইনালের চিত্রনাট্য যেন ফুটবল বিধাতা লিখেছেন একই সময়ে, একই রকম করে! মিলটা দেখুন, ফাইনালে একটা দল এগিয়ে গেল দুই গোলে, এরপরও নির্ধারিত সময়ে জেতা হলো না, সমতা ফেরাল অন্য দলটা। এরপর আরও একবার এগিয়ে যাওয়া, কিন্তু আবারও অন্য দলের গোল, হ্যাটট্রিক একজনের। কী, ১৮ ডিসেম্বর রাতের কথা মনে পড়ছে?

না, শুধু সে রাতেই এমন কিছু হয়নি। হয়েছে গতকালও। আবাহনী এগিয়ে গিয়েছিল ২ গোলে। এরপর ৫ মিনিটের এদিক ওদিকে গোল করে মোহামেডানকে ম্যাচে ফেরালেন ‘ক্যাপ্টেন সুলে’- সুলেমান দিয়াবাতে। এরপর আবারও আবাহনীর গোল। মূল ৯০ মিনিটের শেষ দিকে এসে তার জবাবটা দিলেন কে? সেই ক্যাপ্টেন সুলেই। করলেন হ্যাটট্রিক। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচটা গড়াল অতিরিক্ত সময়ে!

অথচ কুমিল্লার এই ফাইনাল এমন রোমাঞ্চ লুকিয়ে রেখেছে, প্রথমার্ধ বিরতি যখন চলছে, তখন তা কে জানত? মোহামেডান শেষ কিছু দিন ধরে রীতিমতো উড়ছে। উড়ছিল আবাহনীর বিপক্ষেও। কিন্তু তাদের মাটিতে নামান ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। শুরুর যে ঝলকটা দেখাচ্ছিল সাদা-কালোরা, সেটাও যেন মিইয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে। এরপর বিরতির একটু আগে যখন দানিয়েল কলিন্দ্রেস ব্যবধানটা দ্বিগুণ করে বসলেন, তখন মনে হচ্ছিল ম্যাচটা বুঝি হাত ফসকে বেরিয়েই গেল মোহামেডানের। বিরতির আগের তিন-চার মিনিট যে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না সাদা-কালোদের!

সেই মোহামেডান ম্যাচে ফিরল বিরতির পরে। বিরতির সময়েই কোচ আলফাজ আহমেদ বদল এনেছিলেন তিনটি। বিরতির আগে প্রতি আক্রমণের কৌশলে খেলা মোহামেডান, দ্বিতীয়ার্ধে দখল নিল মাঝমাঠটার। ছাপটা পড়ল আক্রমণেও। বেশ কিছু সুযোগ বেরিয়ে গেল হাত গলে।

তবে ৫৬ মিনিটে আর গেল না। আবাহনী রক্ষণ একটা ছোট্ট ভুল করল, বল পড়ল ক্যাপ্টেন সুলের পায়ে, হাওয়ায় ভেসে তার নেওয়া শট গিয়ে জড়াল আবাহনীর জালে।

মোহামেডানের একটা জিয়নকাঠির দরকার ছিল, দিয়াবাতে সে জিয়নকাঠিই হলেন। ব্যবধান কমানো মোহামেডান ৫ মিনিটের মাথায় সমতাই ফিরিয়ে বসল। জাফর ইকবালের ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে বলটা সেই দিয়াবাতেই ফেরালেন সমতায়। 

দুই গোলের লিড খুইয়ে বসে আবাহনী অবশ্য হতোদ্যম হয়নি। তিন মিনিট পরই লিড ফিরে পায় এমেকা ওগবাহর গোলে। সে গোলের জবাবটাও মোহামেডান দেয় ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক সুলেমান দিয়াবাতের গোলেই, যে গোলই ম্যাচটা নিয়ে যায় যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে। এই পরিস্থিতিতে ফেড কাপ ফাইনালটা লুসাইলের সেই ফাইনালের সঙ্গে মেলে কি না, তা নিয়েও আলাপ আলোচনা উঠে আসাটা অমূলক কিছু ছিল না মোটেও। 

তবে মিলটা কেবল সে পর্যন্তই। যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে যে রোমাঞ্চ আরও কয়েক প্রস্থ ছড়িয়েছে, পেন্ডুলামের মতো দুলেছে এ ফাইনাল! ১০৫ মিনিটে গোলমুখে একা পড়ে যাওয়া শহীদুল ইসলাম সোহেল ফাউল করে বসেন সুলেমানকে। পেনাল্টি থেকে তার গোল ম্যাচে প্রথমবারের মতো এগিয়ে দেয় মোহামেডানকে। 

ম্যাচটা তখনও শেষ হয়নি। ১১৬ মিনিটে রহমত মিয়ার দূরপাল্লার পাগলাটে এক শট গিয়ে জড়ায় মোহামেডান জালে। ম্যাচটা গড়ায় পেনাল্টি শ্যুট আউটে। সারা ম্যাচ দেখেছে এত্ত এত্ত নাটক। পেনাল্টি শ্যুট আউটটাও বাদ যাবে কেন? সেখানেও ম্যাচটা দুলল আরও কয়েক প্রস্থ। 

দিয়াবাতে তার সব ঠিক হওয়ার দিনে গোল করলেন প্রথমটা। আবাহনী জবাবটা দিতে পারল না। অধিনায়ক রাফায়েল আগুস্তোর পেনাল্টিটা ঠেকিয়ে দেন আহসান হাবিব বিপু। পরের শটে মোহামেডানের আলমগীর রানা গোল করলেন, এমেকা অগবাহর গোলে এবার জবাব দিল আবাহনী। তৃতীয় শটে মোহামেডানের রজার দুরাতেও করলেন গোল, আবাহনীর ইউসেফও তাই। 

মোহামেডান ভজকট পাকাল চতুর্থ শটে এসে। শাহরিয়ার ইমনের শট ঠেকিয়ে দেন শহীদুল সোহেল। আবাহনী সুযোগটা নিতে পারেনি, বিশ্বকাপে খেলা দানিয়েল কলিন্দ্রেসের শটটা ঠেকান বিপু। শেষ শটে কামরুল ইসলাম কোনো ভুলচুক করেননি। সোহেলকে উল্টোদিকে পাঠিয়ে করে বসেন গোলটা। তাতেই ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপের ফাইনালটা ওঠে মোহামেডানের হাতে। 

ম্যাচটা মোহামেডান জিতেছে বটে, কিন্তু তার চেয়ে বড় জয়টা হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবলেরই, খোদ ফুটবলেরও নয় কি? যে ফাইনাল হয়েছে, তাতে শেষ হাসিটা আবাহনীরও যদি হতো, তাহলেও তা বদলে যেত না। যা হয়েছে কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে, তা যদি স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন দেখতেন, তাহলে আরও একবার বলে বসতেন ‘ফুটবল! ব্লাডি হেল!’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা