বিশেষ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৩ ০৯:৫০ এএম
আপডেট : ২৬ মে ২০২৩ ১০:১১ এএম
জাতীয় দলে তাকে সবশেষ দেখা গেছে ২০০৭ সালে। ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগকেও বিদায় বলেছেন প্রায় এক যুগ আগে। তারপরও ক্রিকেটকে ছেড়ে যাননি খালেদ মাসুদ পাইলট। যে খেলাটি তাকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে গেছে সেটি ছেড়ে থাকা যায়?
আরও পড়ুন : জামাইষষ্ঠীতে লিটন, পাতে পঞ্চব্যঞ্জন
ব্যবসা, চাকরির পাশাপাশি জড়িয়ে আছেন একটি ক্রিকেট একাডেমির সঙ্গেও। এবার ইতিবাচক আরেকটি কাজ করে প্রশংসিত হলেন জাতীয় দলের সাবেক এই তারকা উইকেটরক্ষক-ব্যাটার।
বন্ধুদের নিয়ে রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান বিভাগীয় স্টেডিয়ামের পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়া একপাশ সংস্কার করে ক্রিকেটারদের অনুশীলনের সুযোগ করে দিলেন খালেদ মাসুদ। গতকাল এই উদ্যোগের কথা তিনি জানিয়ে প্রশংসা পেলেন অনেকের।
জাতীয় দলের এই তারকা ক্রিকেটার এই উদ্যোগ নিয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন- ‘দেখুন, সবাই মিলে সামর্থ্যের মধ্যে সমাজের ভালো একটা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের শহীদ কামারুজ্জামান স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশটা পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। সামনের দিকটা পরিষ্কার, সেখানে খেলা হয়। কিন্তু পূর্ব পাশটা জঙ্গল হয়ে ছিল আর ছিল নেশাগ্রস্তদের উপদ্রব। সেই জায়গাটা ঠিকঠাক করে আমরা কিছু মানুষ মিলে ক্রিকেট অনুশীলনের ব্যবস্থা করেছি।’
খালেদ মাসুদ রাজশাহীর ক্রিকেট সংস্কৃতির উদাহরণ টেনে বলেন, ‘এমনিতে রাজশাহীতে প্রতিদিন অসংখ্য ক্রিকেটার অনুশীলন করার এক কালচার আছে। বাইরে থেকেও অনেকে আসে। বর্ষাকালে তাদের অনুশীলন করার জায়গা থাকে না। আমরা মাঠের পূর্ব পাশটা ঠিক করে ওদের জন্য তৈরি করে দেয়েছি। যেখানে গ্যালারির নিচে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও অনুশীলন করা যাবে! ওখানে মানুষ যায় না বলে বখাটেরা নেশা করার সুযোগ পেত, এখন পুরোদমে অনুশীলন শুরু হওয়ায় পরিবেশটাও সুন্দর হয়ে গেছে!’
রাজশাহীর সেই অবহেলিত স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশে গ্যালারির নিচে খালেদ মাসুদ পাইলটের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে তিনটি উইকেট। কংক্রিটের পিচ তৈরি করে নেট দিয়ে একেবারে শতভাগ প্রস্তুত করা হয়েছে। পাইলট বলছিলেন, ‘এরই মধ্যে নেটে অনুশীলন শুরু হয়ে গেছে। যেখানে বাচ্চারা এই বর্ষাকালেও অনুশীলন করতে পারবে। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত।’ এই উদ্যোগে খালেদ মাসুদের সঙ্গে ছিল তার ক্লেমন রাজশাহী একাডেমিও। তাদের ফান্ড থেকেও ব্যয় হয়েছে কিছু অর্থ। বাকিটা সবাই মিলে করেছেন। কোচ, গ্রাউন্ডসম্যান সবাই উইকেট তৈরিতে কাজ করেছেন।
চাকরি-ব্যবসার বাইরে নিজ শহর রাজশাহীতেও এখন সময় কাটান ৪৭ বছর বয়সি খালেদ মাসুদ পাইলট। সেখানে ক্রিকেট কেমন চলছে তা নিয়েও একটা ধারণা দিলেন তিনি, ‘এখানে ক্রিকেটচর্চাটা দারুণ হয়। নিয়মিত অনুশীলন করেন অনেকেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে রাজশাহীতে নিয়মিত খেলাটা হয় না। টুর্নামেন্টের সংখ্যাটাও কম। লিগ হয় না। দেখুন, লিগ হলেই হবে না, রেলিগেশন লিগও না হলে প্রতিযোগিতার মেজাজ থাকে না। এটা শুধু রাজশাহীর নয়, সারা দেশেই একই অবস্থা। রেলিগেশনের ভয় না থাকায় কম্পিটেশন থাকে না, কারও বাদ পড়ার ভয় থাকে না! এ কারণেই মফস্বলে দেখা যায় চাচা, মামা এরা সবাই মিলে বছরের পর বছর খেলে!’
খালেদ মাসুদ মনে করেন খেলার পরিবেশ না থাকায় এখন নেশা আর মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে এই প্রজন্ম। আইসিসি ট্রফিজয়ী এই ক্রিকেটার বলছিলেন- ‘দেখুন, এই প্রজন্মকে আমি দায়ী করছি না। ওটা ওদের দোষ না। এটা অভিভাবকদের কারণেই হচ্ছে। খেলা আর দেশীয় সংস্কৃতির চর্চা না থাকায় এভাবে সব ধসে পড়ছে। ২০ বছর আগের কথা বলছি- তখন সংগঠকরা ছিলেন ক্রীড়াপ্রেমী। যারা সারা বছর খেলা আয়োজনের জন্য পাগল থাকতেন। এখন তো এত ব্যাকগ্রাউন্ড প্রয়োজন হয় না। কতভাবে কে ঢুকে পড়ছে ক্রীড়াঙ্গনে, যেকেউ এসে সংগঠক হয়ে যেতে পারে। অবকাঠামোগত উন্নয়নে আমাদের সমস্যা আছে।’
রাজশাহীর ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে গোটা দেশের ক্রিকেট নিয়ে এভাবেই ভাবেন পাইলট। একাডেমি, চাকরি আর ব্যবসার ফাঁকে এভাবেই সমাজের ভালো পরিবর্তন আনতে লড়ে যেতে চান ৪৪ টেস্ট ও ১২৬ ওয়ানডে খেলা সাবেক এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার।