প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২০ মে ২০২৩ ১২:১০ পিএম
আপডেট : ২০ মে ২০২৩ ১২:৩২ পিএম
ইউরোপা লিগে এখন পর্যন্ত ছয়বার ফাইনালে উঠে প্রতিবারই শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছে স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়া। টুর্নামেন্টের রেকর্ড শিরোপাধারী দলও তারাই। অন্যদিকে এই প্রতিযোগিতায় এখন পর্যন্ত কোনো শিরোপা জেতেনি ইতিলিয়ান ক্লাব রোমা।
আরও পড়ুন : রিয়াদকে নিয়ে নিশ্চুপ নান্নু
তবে দলটির কোচ হিসেবে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় হারের ইতিহাস নেই হোসে মরিনহোর। তিনিই স্বপ্নবাজ করছেন দলটির সমর্থকদের। নতুন ইতিহাস গড়তে আগামী ৩১ মে বুদাপেস্টের ফাইনালে মুখোমুখি হবে দুদল।
জুভেন্টাসের রইল না আর কিছু
‘ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা। যা-কিছু পায় হারায়ে যায়, না মানে সান্ত্বনা’- রবিঠাকুরের গানের কথার মতো চলতি মৌসুমে সব হারানো জুভেন্টাসের শেষ সান্ত্বনা হতে পারত ইউরোপা লিগ। শেষবেলায় সেই সান্ত্বনাটুকুও জুটল না। তিনবার ইউরোপা লিগ জেতা জুভেন্টাস ঘরের মাঠে সেভিয়ার বিপক্ষে প্রথম লেগে পিছিয়ে পড়েও শেষবেলায় সমতা টেনে আশার আলো দেখিয়েছিল। সেই আলো যে এভাবে নিভে যাবে ফিরতি লেগে তা হয়তো দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি তুরিনের বুড়িরা। মৌসুমে সব হারানো দলটির সমর্থকদের শুধু ইউরোপা লিগটাই বাকি ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে সেটিও শেষ হয়ে গিয়েছে। ২-১ গোলে হেরে বসেছে মাসিমিলিয়ানো আল্লেগ্রির দল। তাতে দুই লেগ মিলিয়ে ৩-২ গোলের ব্যবধানে জিতে এ নিয়ে সপ্তমবার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়া। আর এই দুঃখ নিয়েই জুভেন্টাস সমর্থকরা হয়তো গাইতে পারেন- দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না, সেই যে আমার নানার রঙের দিনগুলি।
টুর্নামেন্টে ছয়টি শিরোপা জেতা সেভিয়ার বিপক্ষে যে ম্যাচটি সহজ হবে না সেটি জেনেই প্রতিপক্ষের ডেরায় খেলতে নেমেছিল জুভেন্টাস। সেই লক্ষ্যে রক্ষণে বাড়তি পাহারাও ছিল। লক্ষ্যটা ছিল, প্রতিপক্ষের আক্রমণ পণ্ড করে দ্রুত পাল্টা আক্রমণে গিয়ে গোল করা। সেই ভাবনা বেশ কাজেও এসেছিল দলটির। প্রথমার্ধে রুখে দেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধের ৬৫ মিনিটে ম্যাচে এগিয়ে যায় জুভেন্টাস। র্যাবিওটের বাড়ানো বলকে জালে পাঠিয়ে উল্লাসে মাতেন দুসান লাজোভিচ। তবে এরপরই যেন গা এলিয়ে দেয় জুভেন্টাস। আর এই সুযোগটি লুফে নিয়েই পাঁচ মিনিটের মাথায় ম্যাচে সমতা টানেন সুসো। এরপর এগিয়ে যাওয়ার পালা। তবে ৯০ মিনিট পর্যন্ত হয়নি সেটি। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। আর সেখানেই বাজিমাত সেভিয়ার।
ম্যাচের ৯৫ মিনিটে দারুণ গোলে সেভিয়াকে এগিয়ে নেন এরিক লামেলা। সেই গোল বাকি সময় মরিয়া হয়ে চেষ্টা করেও আর শোধ দিতে পারেনি জুভেন্টাস। আর তাতেই মৌসুমে একমাত্র শিরোপা জেতার শেষ স্বপ্নটুকুও শেষ হয়ে গেছে দলটির।
এর আগে চলতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ার পর সিরি আ লিগেও পয়েন্ট খোয়াতে হয় জুভেন্টাসকে। দলবদলে আর্থিক অনিয়মের জেরে ১৫ পয়েন্ট হারায় দলটি, পরে অবশ্য সেই পয়েন্ট ফিরে পেলেও ততক্ষণে লিগ শিরোপা উঁচিয়ে ধরার পথে চলে যায় নাপোলি। ইতালিয়ান কোপাতেও ফলটা একই। ইন্টারের বিপক্ষে হেরে সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়তে হয়েছে দলটির। বাকি ছিল শুধু ইউরোপা লিগ। সেটিও শেষ হওয়ায় জুভেন্টাসের রইল না আর কিছুই।
রোমাকে ফাইনালে তুলে আপ্লুত মরিনহো
পাকা মাথা বলে কথা। চারবার বিশ্বের সেরা কোচের পুরস্কারটা যে এমনি এমনি জুটেনি সেটা বৃহস্পতিবার রাতে আরও একবার প্রমাণ করে দেখালেন হোসে মরিনহো। নিজেদের ডেরায় ইউরোপা লিগের সেমিফাইনালে প্রথম লেগে ১-০ গোলে এগিয়ে থাকার পর দ্বিতীয় লেগে শুধু আটকে রাখলেন প্রতিপক্ষকে। তাতেই তার দল রোমা পৌঁছে গেছে ফাইনালে। টুনামেন্টে এটি রোমার দ্বিতীয় ফাইনাল।
লেভারকুসেনের ডেরায় জয়টা সহজ হবে না; বেশ ভালোই ধারণা ছিল রোমার। মরিনহো ছক কষেছিলেন সেভাবেই। রক্ষণে বাড়তি পাহারা বসিয়ে লেভারকুসেনের একের পর এক আক্রমণ প্রতিহত করে দিয়েছে রোমা। ম্যাচের ৬০ শতাংশ বল নিজেদের দখলে রেখে গোলের উদ্দেশ্যে ২৩টি শট নিয়েও গোল পায়নি লেভারকুসেন। বিপরীতে মাত্র একবারই গোলের উদ্দেশ্যে শট নিতে পেরেছে রোমা। আর তাতেই বাজিমাত। মরিনহোর হাত ধরে গত মৌসুমে উয়েফার তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতা ইউরোপা কনফারেন্স লিগ জেতার পর চলতি মৌসুমে রোমা পৌঁছে গেছে ইউরোপা লিগের স্বপ্নের ফাইনালে। আর এতে বর্ণাঢ্য কোচিং ক্যারিয়ারে এ নিয়ে ষষ্ঠবার উয়েফা আয়োজিত টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠলেন মরিনহো, যেখানে একবারও হারতে হয়নি তাকে।
এমন এক ম্যাচের পর আবেগ ধরে রাখতে পারেননি মরিনহোও। আনন্দে মাঠেই চোখের জল ফেলেছেন তিনি। ম্যাচ শেষে জানিয়েছেন, ‘রোমার ইতিহাসের বইয়ে স্থান নিশ্চিত করা আমার উদ্দেশ্য নয়। এটি এই খেলোয়াড়দের বড় হতে এবং গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো অর্জন করতে সহায়তা করছে। এটি রোমার ভক্তদেরও সাহায্য করছে, যারা প্রথম দিন থেকে আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আরেকটি ফাইনালে উঠতে পারাটা আমার জন্য অনেক আনন্দের।’