× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

৩৩ বছর কাটল, নাপোলি কথা রাখল

হেলাল নিরব

প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৩ ১৯:১২ পিএম

আপডেট : ০৭ মে ২০২৩ ১৯:১৭ পিএম

৩৩ বছর কাটল, নাপোলি কথা রাখল

৩৩ বছর পর নেপলসবাসীর কথা রেখেছে নাপোলি। স্বাভাবিকভাবেই সমর্থকদের উল্লাস বাড়তি মাত্রা পাওয়ার কথা, হয়েছেও তাই। উদিনেস থেকে নেপলস ছাপিয়ে পুরো ইতালি মেতেছে ক্লাবের তিন নম্বর স্কুদেত্তো জয়ের উল্লাসে। উদিনেসের দাসিয়া অ্যারেনায় ম্রিয়মাণ হয়ে বাজা ‘আমরাই ইতালির চ্যাম্পিয়ন’ ধ্বনিটি বজ্রধ্বনি হয়ে বেজে ফিরছে ইতালিজুড়ে। অথচ কত অসঙ্গতি, কত অনিশ্চয়তা ভর করেছিল ক্লাবটিকে ঘিরে- সেটি এখন কেটে গেছে। ডিয়েগো ম্যারাডোনার পর আরেকবার উৎসবে মাতা নাপোলির চোখ এখন আরও ওপরে...

নাপোলির শুরুর কথা...

সোসিয়েটা স্পোর্টিভা ক্যালসিও নাপোলি সংক্ষেপে নাপোলি- ইতালির দক্ষিণাঞ্চলের ক্লাবটির প্রতিষ্ঠা মূলত দুবার। বিশ শতকের শুরুর দিকে একবার, অন্যবার একুশ শতকের শুরুর দিকে। অবশ্য ক্লাবটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নেহাত খেলার ছলে। একদল ইংলিশ নাবিক ১৯০০ সালের শুরুর দিকে নেপলসে ঘাঁটি গাড়লেন। সেখানে ছিলেন ইংলিশ নাবিক উইলিয়াম পথস। তার খেয়াল চাপল দল বানাবেন এবং নেপলসের অন্য দলগুলোর বিপক্ষে ফুটবল খেলবেন। যেই ভাবা সেই কাজ, পথস তখন কুনয়ার্ড শিপিং লাইনে কাজ করেন। তিনি জোগাড় করলেন আরেকজন ফুটবলপাগল ইঞ্জিনিয়ার আমেডেও সালসিকে। এই আমেডেও হচ্ছেন নাপোলির প্রথম প্রেসিডেন্ট। নেপোলিটান আর্নেস্টো ব্রুশিনির সঙ্গে পরে পথস গঠন করেন এসএসসি নাপোলি।

আরও পড়ুন - আলোচনায় মেসি : পক্ষে বিপক্ষে নানা মত

নেপলস শহরে তখন অনেকগুলো ক্লাব ফুটবল খেলে। লক্ষ্য নির্ধারণ হলো তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলা হবে। যেই ভাবা সেই কাজ; নাপোলি নেমে গেল প্রথম ম্যাচ খেলতে, প্রতিপক্ষ ইংলিশ জাহাজ ক্রু দলের সদস্যরা। নাপোলি বেছে নিল গাঢ় নীল রঙের সঙ্গে হালকা স্ট্রাইপের জার্সি। প্রথম ম্যাচেই বাজিমাত, ইংলিশ দলকে ৩-২ গোলে পরাজিত করে আনকোরা নাপোলি। সেই থেকে শুরু, এরপর বহুদূরের যাত্রা, চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০২৩ সালে এসে তৃতীয়বার ইতালির চ্যাম্পিয়ন নাপোলি।

বিভক্ত ও নেপলসজুড়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা

খাতা-কলমের হিসাবে নাপোলি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ১৯০৪ সালে। কিন্তু ক্লাবের বয়স ১০ বছর হওয়ার আগেই ভাঙনের সুর বাজে। ১৯১২ সালে এসে ভেঙেও যায়। নাপোলি ভেঙে তৈরি হয় দুটি দল- একটির নাম হয় ইউএস ইন্টারজোনাল নাপোলি এবং অরিজিনাল নাপোলি অর্থাৎ নেপলস এফবিসি। ইউএস ইন্টারজোনাল নাপোলিকে লিড দিতেন স্টেনিজার ও বেয়ন। মূল ক্লাবটি চালাতেন এমিলিও আনাট্রার। পরবর্তী সময়ে এ দুই দলই হয়ে ওঠে নিজেদের সবচেয়ে বড় শত্রু। মাঠের লড়াইয়েও জানপ্রাণ দিয়ে খেলত দুটি ক্লাব। ১৯১২-১৩ ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে দুদলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাপিয়ে গিয়েছিল নেপলসজুড়ে। চ্যাম্পিয়নশিপে নাপোলি ল্যাজিওকে হারিয়ে পরের ধাপে আসে। সেখানে ইন্টারজোনালকে নক আউট করে আগের হারের প্রতিশোধ নেয়। নেপলসবাসী দুই ক্লাবের দ্বৈরথ দেখতে অভস্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর চরম আর্থিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল ক্লাবটি। এমন অবস্থায় শেষ পর্যন্ত ১৯২২ সালে আবারও এক হয় দুটি দল। বৈঠক করে ঠিক করা হয় ক্লাবের নাম হবে এফসিবি ইন্টারজোনাল-নেপলস। দুই পক্ষের সম্মতিতে শুরু হয় ওপরের ধাপের অর্থাৎ শহর ছেড়ে বাইরে খেলার লড়াই।

অ্যাসোসিয়েশন ক্যালসিও নাপোলি

১৯২৬ সালে দুই পক্ষের সদস্যরা ঠিক করলেন এভাবে আর নয়। নির্দিষ্ট একটা টিম দরকার ক্লাবের। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গঠিত হয় অ্যাসোসিয়েশন ক্যালসিও নাপোলি। ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হন জিওরগো আকারেলি। প্রথম ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে বড় ধাক্কা খায় নাপোলি। ১৮ লিগ ম্যাচে তুলতে পারে মাত্র ১ পয়েন্ট। ক্লাবের নাম হয়ে যায় চিউচিয়ারেল্লি, বাংলা ভাষায় ‘ ছোট গাধা’। কিন্তু পরের মৌসুম থেকে নিজেদের প্রমাণ করে ক্লাবটি। ১৯৫৯ সালে স্তাদিও সান পাওলো স্টেডিয়াম গঠিত হয়। ততদিনে নাপোলি খেলছে ইতালির শীর্ষ লিগ ‘সিরি এ’। কিন্তু এ পথ পেরোতে কত না বাধাই পেরোতে হয়েছে ক্লাবকে। ১৯৬১ সালে নাপোলি জেতে সিরি বি-এর কোপা ইতালিয়া। ১৯৭৬ সালে আসে কোপা ইতালিয়ার মূল ট্রফি।

ডিয়েগো ম্যারাডোনা : দ্য সেভিয়ার

নাপোলি ও ম্যারাডোনার সম্পর্ক কতটা মজবুত তা ৩৩ বছর পরও পরিলক্ষিত হয় নেপলসের রাস্তাঘাটে। এত বছর পরও ইতালির সিরি এ জেতার আনন্দে মধ্যমণি হয়ে আছেন ম্যারাডোনা। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ম্যারাডোনার হাত ধরে সর্বশেষ ১৯৯০ সালে ইতালিয়ান লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল নাপোলি। এরপর দীর্ঘ ৩৩ বছরের অপেক্ষা ফুরাল আবার। ম্যারাডোনার হাত ধরে দুবার সিরি এ ট্রফি জেতে নাপোলি। ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে প্রথমবার ম্যারাডোনার জাদুতে চ্যাম্পিয়ন হয় নাপোলি। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে দলকে এনে দেন দ্বিতীয় শিরোপা। অখ্যাত ক্লাব নাপোলিকে জিতিয়েছিলেন সবকিছু। করেছিলেন ইতালির ও ইউরোপের সেরা। নেপলসবাসী সেসব ভুলতে পারেননি। সেবার ‘ম্যারাডোনা ম্যারাডোনা’ স্লোগানে মুখরিত হয়েছিল বাতাস, আকাশে ছিল নীল রঙের ছটা।

নাপোলির জার্সি গায়ে মাঠে ডিয়েগো ম্যারাডোনার উচ্ছ্বাস

১৯৯২ সালে কোকেনকাণ্ডের পর নাপোলি ছেড়ে দেন ম্যারাডোনা। ক্লাবও হারিয়ে ফেলে মা-গি-সা আক্রমণ। ক্লাব থেকে চলে যান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড কারসিয়া, পুরোনো ক্লাবে যোগ দেন জিয়ানফ্রাঙ্কো জোলা। ভেঙে পড়া নাপোলির দুঃসময় দীর্ঘায়িত হয়। ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে সিরি বি-তে রেলিগেশন হয় নাপোলির। পরে শীর্ষ পর্যায়ে আবার থিতু হতে প্রায় দশ বছরের মতো সময় লেগেছিল। মাঝে একবার সিরি সি-তে নেমে গিয়েছিল নাপোলি।

দেউলিয়া ও পুনঃপ্রতিষ্ঠা

লিগে ধুঁকতে থাকা ক্লাবটি পড়েছিল চরম আর্থিক সংকটে। ক্লাব প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকের মতো এবার আর ফেরত আসতে পারল না। ধারদেনায় জর্জরিত ক্লাবটিকে ২০০৪ সালের আগস্ট মাসে দেউলিয়া ঘোষণা করা হলো। শেষ পর্যন্ত ফিল্ম নির্মাতা অরিলিও ডে লাউরেনটিইস সব দেনা শোধ করলেন এবং নাপোলিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা দিলেন। খুব বেশি সময় নেয়নি নাপোলি। ২০০৭ সালেই ফিরে আসে ইতালির শীর্ষ ফুটবলে। এরপর এখন পর্যন্ত দাপুটের সঙ্গে খেলে আসছে। খেলছে চ্যাম্পিয়নস লিগও। এবার ৩৩ বছরের লিগ শিরোপার খরাও ঘুচিয়ে দিয়েছে ক্লাবটি। ‘ ছোট গাধা’ এখন ইতালির চ্যাম্পিয়ন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা