প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৩ ১৮:২০ পিএম
আপডেট : ০৭ মে ২০২৩ ১৮:২৩ পিএম
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মন দিয়ে শুধু ফুটবলটাই খেলে গেছেন মেসি। খুব একটা বিতর্কে জড়াননি কখনোই। যার উপহারটাও তিনি পেয়েছেন। এক জীবনে জিতেছেন সম্ভাব্য সব ট্রফি। মাঠ ও মাঠের বাইরের সাদামাটা মেসিকে সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবেও বিবেচনা করে থাকেন অনেকে। অথচ নানা কারণে বিতর্ক এসে ছুঁয়ে ফেলে তাকে। তিনি এড়াতে পারেন না। এই যেমন লরিয়ার বিপক্ষে হারের পর পরিবার নিয়ে দুদিনের জন্য সৌদিতে ঘুরতে গিয়েছিলেন মেসি। তাই নিয়ে কত কাণ্ড, কত হইচই, লোক কত সমাগম। তবে মেসি চেয়েছিলেন আরও কিছুটা কম। চেয়েছিলেন কোচ বকুক। সমর্থকরা তার বেদনা দেখুক। হয়নি তা। উল্টো দুই সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন; সঙ্গে সমর্থকদের কাছ থেকে ‘চলে যাও মেসি’ বলে স্লোগান শুনেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ভক্তদের কাছে ক্ষমা চেয়ে ভিডিও বার্তা দিতে হয়েছে তাকে, যা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে আছে নানা মত।
আরও পড়ুন - শুধু ক্রিকেট ম্যাচ নয়, জীবনও জিতছেন তারা
মূলত মেসির দলবদল ইস্যুতে নিত্যই শোনা যাচ্ছে নানা গুঞ্জন। এখন বার্সায় তো তখন আল হিলাল কিংবা কখনও শোনা যাচ্ছে মিয়ামির নাম। অথচ পিএসজিকে এখনও বিদায় বলেননি মেসি। যদিও গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে শোনা যাচ্ছে মেসির পিএসজি-ভবিষ্যৎ শেষ। প্রশ্ন হলো, পিএসজির সঙ্গে যদি ইতিই টানবেন মেসি; তবে ক্ষমা চাইবেন কেন? সেই প্রশ্নের জবাব মেসি না দিলেও তার হয়ে পক্ষে বিপক্ষে মত দিচ্ছেন সাবেক ও বর্তমান তারকা ফুটবলাররা। মেসি হঠাৎ কেন ক্ষমা চাইলেন সে বিষয়ে পরিষ্কার নন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি ফুটবলার রিভালদো। তবে মেসির কাছ থেকে এমন বিশৃঙ্খল আচরণও আশা করেননি বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘পিএসজির প্রতি মেসির এমন অসম্মানজনক আচরণ আমাকে মনঃক্ষুণ্ন করেছে। এটা তার ক্যারিয়ারের সঙ্গে বেমানান। তার হাতে অনেক বিকল্প ছিল। এসব অভ্যন্তরীণ সমস্যা তৈরি না করেই মৌসুম শেষে পিএসজির সঙ্গে চুক্তির ইতি টানতে পারত সে। তবে আমি বুঝতে পারি, খেলোয়াড়রা কখনও কখনও সৌদি আরবের বড় অঙ্কের চুক্তির ফাঁদে পড়ে যায়।’
এদিকে সৌদি সফর নিয়ে ভিডিও বার্তায় ক্ষমা চেয়ে মেসি বলেছেন- ‘যা ঘটছে, তা শেষ হওয়ার পর আমি এই ভিডিও তৈরি করতে চেয়েছি। প্রথমত, আমি আমার ক্লাব ও সতীর্থদের কাছে ক্ষমা চাইছি। ভেবেছিলাম, ম্যাচের পরে সব সময়ের মতো দলে ছুটি থাকবে। এ সফর আগে থেকেই ঠিক করা ছিল, এটা আমি বাতিল করতে পারিনি। আগেও আমি এ সফর বাতিল করেছি।’ তবে মেসি ক্ষমা চাইলেও সাবেক পিএসজি তারকা জেরোম রোথেন মনে করেন, ‘পিএসজি তাকে শাস্তি দিয়ে ঠিক কাজটাই করেছে। কারণ, এটা পেশাগত অসদাচরণ। জবাবটা মেসিই দিক; সে পিএসজিতে দুই বছর ধরে আছে, মাঠে তার খেলা কি ক্লাবের জন্য যথেষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে? উত্তর হলো “না”।’
মেসির ক্ষমা চাওয়ার বক্তব্যে কিছু অসঙ্গতিও ধরেছেন রোথেন, ‘সে কোচ ও সতীর্থদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে, কিন্তু ভক্তদের কাছে চায়নি। তার এমন ভাবমূর্তিই প্রকাশ পেয়েছে ভক্তদের কাছে। বুঝতে পারছি না, সে কেন বলল এই সফর বাতিল করতে পারেনি। অর্থাৎ ক্ষমা চাইলেও সে ঠিকই অজুহাত দেখিয়েছে।’
এদিকে প্যারিসে মেসিকে নিয়ে যা হচ্ছে তাতে দেরি না করে এখনই মেসিকে ক্লাব ছেড়ে দেবে বলেছেন তার স্বদেশি কোচ আন্তনিও মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘তারা মেসির সঙ্গে যা করেছে তা ফুটবলের প্রতি অপমান। এই তেতো লোকগুলো, যারা কখনও কিছু জিততে পারেনি, তারা যদি আইফেল টাওয়ার কিনেও গোলপোস্টে রাখে, তবু কিছু জিততে পারবে না। এটা খুবই অসম্মান। মেসির এখন পরিবার নিয়ে চলে আসা উচিত। সে কোথায় সুখে থাকবে, তা ভাগ্যই ঠিক করবে।’
মেসির পাশে দাঁড়িয়েছেন তার সাবেক বার্সা সতীর্থ আর্তুরো ভিদাল। তিনি মনে করেন, ‘সত্যি বলতে এই মানুষগুলো উন্মাদ হয়ে উঠছে। আপনি বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়কে অপমান করতে পারেন না, স্রেফ তার খেলা দেখে যেতে পারেন। মেসি পিএসজিকে চ্যাম্পিয়নস লিগ এনে দিতে পারেনি ঠিক… কিন্তু তারা লিগ টেবিলে শীর্ষে। আর সবার আগে সে একজন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। সে সবগুলো ম্যাচেই অংশ নিয়েছে, কখনও চোটে পড়েনি। সে এমবাপের সঙ্গে বেশিরভাগ গোল করেছে। আর বেশিরভাগ অ্যাসিস্টও তার।’
পিএসজির সমর্থকদের বাজে আচরণ মোটেই মেনে নিতে পারেননি রিভোলদো। এ ব্যাপারে তার সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন হ্যাভিয়ের মাচেরানোও। আর্জেন্টাইন এ তারকা ডি স্পোর্টস রেডিওকে বলেন, ‘আগামী ১০ বছরের মধ্যে ওরা অনুশোচনা করবে। বিশ্বের যেকোনো ক্লাব মেসির জন্য যেকোনো কিছু পাঁচ মিনিটের মধ্যে হাজির করবে। (প্যারিসে যা ঘটছে) এমনটা কারোই প্রাপ্য নয়। লিও’র পেশাদারিত্ব সমালোচনার ঊর্ধ্বে। কেউ যদি ফুটবল ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়ও হয়ে থাকে, মেসির মতো পেশাদারত্ব পাওয়াটা কঠিন।’