প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৩ ০৮:৪১ এএম
আপডেট : ০৭ মে ২০২৩ ০৯:১৯ এএম
অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন আছে সমালোচনার শীর্ষে। সবশেষ সমালোচনার জন্মটা সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন নিজেই দিয়েছেন, সঙ্গী ছিলেন সহসভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ। সাংবাদিক ও তাদের পরিবার নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, তা ধরা পড়েছে রেকর্ডে। এরপর থেকেই সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে সালাউদ্দিনকে নিয়ে। এবার যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেলও কড়া সমালোচনা করেছেন বাফুফে সভাপতির। জানিয়েছেন, এমন কথা ঘুমিয়েও বলা যায় না।
আরও পড়ুন : বঙ্গবন্ধু আইএইচএফ টুর্নামেন্টের লোগো উন্মোচন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর
ঘটনার শুরু গত ২ মে, মঙ্গলবার। বাফুফে ভবনে জরুরি সভা শেষে সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে তিনি বলে বসেন এমন কিছু কথা, যা ধরা পড়ে যায় সংবাদকর্মীদের রেকর্ডে। সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘জার্নালিস্টরা এখানে ঢুকতে গেলে তাদের আমার এখানে ফটো দিতে হবে তাদের বাপ-মার। আরেকটা কন্ডিশন হলো তার বাপের ফটো পাঠাবে, জুতা পরা। ঠিক আছে (হাসি)? এটা হতে হবে ম্যান্ডেটরি। বাপের জুতা পরা ছবি থাকতে হবে।’ এখানেই শেষ নয়, নাবিল রীতিমতো ছাপার অযোগ্য কথাও বলেছেন, যা ধরা পড়েছে রেকর্ডে।
এই ধরনের কথা অফ দ্য রেকর্ড বা অন দ্য রেকর্ড না, কেউ ঘুমিয়েও বলতে পারে, সেটা আমার বিশ্বাস হয় না। এ ধরনের পদে থেকে কেউ এ ধরনের কথা বলছে, তাতে আমি সত্যিই কষ্ট পেয়েছি। এতে শুধু সাংবাদিক সমাজ নয়, পুরো বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যারা এ কথা শুনেছে তারা আঘাত পেয়েছে।
সালাউদ্দিন-নাবিলের এমন কথায় চটেছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। তার কথা, ‘খেলোয়াড়রা যেভাবে খেলাধুলায় আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, সংগঠকরাও তাতে অবদান রাখছেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ও কার্যকরভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের পাশাপাশি যারা খেলাটাকে প্রতিটা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন, তারা হচ্ছেন আমাদের সাংবাদিকরা। যে সাংবাদিকরা আমাদের জন্য এত কিছু করেন, তাদের বিষয়ে এ ধরনের উক্তি শুনে আমি সত্যিই মর্মাহত হয়েছি।’
সে কথার কারণে অবশ্য একটু পরেই সালাউদ্দিন ক্ষমা চেয়েছেন। বাফুফে সভাপতি জানান, কথাটা বলেছিলেন ‘কৌতুক’ করে, রেকর্ডারের কথা ভুলেই গিয়েছিলেন একেবারে। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জানান, এমন কথা কোনোভাবেই বলা সম্ভব নয়। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এই ধরনের কথা অফ দ্য রেকর্ড বা অন দ্য রেকর্ড না, কেউ ঘুমিয়েও বলতে পারে, সেটা আমার বিশ্বাস হয় না। এ ধরনের পদে থেকে কেউ এ ধরনের কথা বলছে, তাতে আমি সত্যিই কষ্ট পেয়েছি। এতে শুধু সাংবাদিক সমাজ নয়, পুরো বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যারা এ কথা শুনেছে তারা আঘাত পেয়েছে।’
সালাউদ্দিন যেভাবে পরিবার টেনে এনেছেন তার মন্তব্যে, সেটাই ব্যথিত করেছে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকে। তিনি জানান, সালাউদ্দিনের এমন কথা অগ্রহণযোগ্য। তার ভাষ্য, ‘কারণ মন্ত্রী হিসেবে আমি দোষ করলে আমাকে দোষারোপ করতে পারেন, সাংবাদিক করলে তাকে দোষারোপ করতে পারেন। কিন্তু তার পরিবার নিয়ে কথা বলা, এর চেয়ে খারাপ কিছু আর হতে পারে না। পরিবার কোনো অন্যায় করেনি, তাকে নিয়ে কথা বলবে কেন! এটা মেনে নেওয়া যায় না, আমি বিশ্বাস করি খুবই নিন্দনীয় কাজ হয়েছে এটা। কোনো বিবেকবান মানুষ এ ধরনের কথা বলতে পারেন না।’
সালাউদ্দিনের এ কথার আগেও নেতিবাচক কারণে বাফুফে ছিল সমালোচনার কেন্দ্রে। গেল মার্চে অর্থাভাবের কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলতে পাঠায়নি বাফুফে। এরপর জালিয়াতি, মিথ্যা তথ্য প্রদান ও তহবিল তছরুপের দায়ে ফিফা নিষিদ্ধ করে আবু নাঈম সোহাগকে। তার এমন কাণ্ডে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেন জাহিদ আহসান রাসেল। তার কথা, ‘তার (সোহাগের) কাজে অসততা পাওয়ার ফলেই কিন্তু তার ওপর শাস্তি নেমে এসেছে। তাতে দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হয়েছে। ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা এসেছে, দেশের ওপর যেন এমন কিছু না হয়, সে কারণে আমরা ভেবেচিন্তে এগোচ্ছি। তবে যাদের কারণে এমন নিষেধাজ্ঞা এসেছে, জড়িত কালপ্রিট সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’
আগামী ১৪ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাফুফের সামগ্রিক বিষয় সম্পর্কে জানাবেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী।