প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৩ ২৩:২১ পিএম
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৩ ২৩:৫৫ পিএম
‘তোমাকে দেখেছি কবে, সেই কবে, কোন বৃহস্পতিবার/আর এক কোটি বছর হয় তোমাকে দেখি না।’- মহাদেব সাহার লাইন দুটোর মতো এক কোটি বছর না ঠিক, তবে অপেক্ষাটা বেড়েই যাচ্ছিল নেপলসের; তাদের প্রাণের ক্লাব নাপোলি যে স্কুদেত্তো নিয়ে উচ্ছ্বাসে মাতে না বহু বছর! সে অপেক্ষাটা শেষ হতে যাচ্ছে অবশেষে। যদি-কিন্তুর হিসাব মিলে গেলে আগামীকাল হতে পারে বহু আকাঙ্ক্ষার সে উৎসব, নাপোলির সিরি আ জয়ের উৎসব।
আরও পড়ুন : দিয়াবাতের জোড়া গোলে হাসল মোহামেডান
১৯২৬ সালে নাপোলির পথচলা শুরু। এরপর ১৯৬২-তে প্রথম বড় শিরোপার ছোঁয়া পায় ক্লাবটি, জেতে কোপা ইতালিয়া। এরপর আরও একটা কাপ নিজেদের ট্রফি কেসে তুলেছে নাপোলি। তবে লিগ শিরোপাটা অধরাই থেকে যাচ্ছিল তাদের।
নেপলসকে সে আক্ষেপ থেকে মুক্তি দেন আর্জেন্টাইন মহানায়ক ডিয়েগো ম্যারাডোনা। ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে তার হাত ধরেই নিজেদের ইতিহাসের প্রথম স্কুদেত্তো জেতে নাপোলি। দুই মৌসুম বিরতির পর আরও একবার। সেই শেষ। এরপর থেকে কেটে গেছে একে একে ৩৩টি বছর। মাঝে অনেকবার দ্বিতীয় হয়ে শেষ করেছে সিরি আ মৌসুম, তবে বাস্তবিক সুযোগটা ছিল ২০১৭-১৮ মৌসুমে, তৎকালীন কোচ মউরিসিও সারির দল শিরোপার লড়াইয়ে ছিল প্রায় শেষ পর্যন্ত। তবে শেষতক তাদের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। অপেক্ষাটা তাই বেড়েছে ক্রমেই, সঙ্গে আক্ষেপটাও। অবশেষে সেই আক্ষেপ ঘোচানোর দুয়ারে চলে এসেছে ম্যারাডোনার প্রাণের ক্লাবটি।
নাপোলি শিরোপা থেকে হাতছোঁয়া দূরত্বে চলে এসেছে গত সোমবার, জুভেন্তাসকে ১-০ গোলে হারিয়ে। জুভেন্তাসের মাঠে নাপোলির গোলের অপেক্ষাটা ক্রমেই যখন বাড়ছিল, যোগ করা সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে গিয়ামোকো রাসপাদোরির লক্ষ্যভেদে নিশ্চয়তা মিলল তিন পয়েন্টের। তাতেই শিরোপাজয় থেকে কোচ লুসিয়ানো স্প্যালেত্তির দল চলে এসেছে ৪ পয়েন্টের দূরত্বে; যা ঘুচে যেতে পারে আগামীকাল রবিবারই।
বর্তমানে নাপোলি লিগের শীর্ষে আছে, ৩১ ম্যাচে ৭৮ পয়েন্ট তাদের। দুইয়ে থাকা ল্যাজিওর অর্জন সমান ম্যাচ থেকে ৬১ পয়েন্ট। এ অবস্থা থেকেও পুরোপুরি নিশ্চিত নয় নাপোলির লিগ জয়ের উৎসব, গাণিতিক হিসাব যে এখনও মেলানো বাকি! নাপোলি যদি নিজেদের সব ম্যাচে হেরে বসে, আর ল্যাজিও জেতে নিজেদের সব ম্যাচে; তাহলেই কেবল শিরোপাটা খোয়াতে পারে নাপোলি। সে অনিশ্চয়তা আগামীকাল ঘুচে যেতে পারে, যদি সালেরনিতানার বিপক্ষে প্রত্যাশিত জয়টা তুলে নিতে পারে, আর ওদিকে ল্যাজিও হেরে বসে ইন্টার মিলানের কাছে। চার দলের সাম্প্রতিক ফর্ম বলছে, তা না হওয়াটাই বরং বেশি অসম্ভব।
সে কারণেই হয়তো জুভেন্তাসের মাঠ থেকে ম্যাচটা জিতে যখন ঘরে ফিরছে নাপোলি, সমর্থকরা রীতিমতো মোটরবাইকের মিছিলই নামিয়ে দিয়ে বিমানবন্দর থেকে বরণ করে এনেছিলেন নায়কদের; তাও আবার রাত ৩টায়!
উচ্ছ্বাসটা এর আগেই ছুঁয়ে গিয়েছিল নাপোলি খেলোয়াড়দের। অধিনায়ক জিওভানি দি লরেনজো যেমন বললেন, ‘আমরা জেতার পর লকার রুমেই উদযাপন করেছি, কারণ একে তো এখানে জেতা সহজ নয়, আর আমরা এই জয়ের পর নিজেদের স্বপ্ন ছোঁয়ার খুব কাছে চলে এসেছি!’ দ্বিতীয়টাই যে উদযাপনের বড় কারণ, তা আর বলতে।
আগামীকাল নিজেদের মাঠ ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা স্টেডিয়ামে নাপোলি আতিথ্য দেবে সালেরনিতানাকে। ম্যাচটা অবশ্য হওয়ার কথা ছিল আজ। কিন্তু জননিরাপত্তার কারণে এক দিন পিছিয়ে রবিবারে চলে গেছে লড়াই। লিগ টেবিলের মাঝের দিকের দলটাকে হারাতে পারলে, আর ওদিকে সান সিরোয় ইন্টার-ল্যাজিওর ম্যাচের ফল নিজেদের পক্ষে এলেই উৎসবটা পাবে আনুষ্ঠানিক রূপ। ৩৩ বছরের আক্ষেপ যাবে ঘুচে, ম্যারাডোনা-যুগের পর প্রথমবারের মতো সিরি আ ঘরে তুলবে নাপোলি। জিওভানি দি লরেনজোরা, রাত ৩টায় নাপোলিকে মোটরবাইক র্যালি করে বরণ করে নেওয়া ‘পাগল’ সমর্থকরা; ৩৩ বছর অপেক্ষায় থাকা নেপলস আপাতত আছে সে উৎসবের অপেক্ষাতেই।