প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৩ ১১:১৪ এএম
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৩ ১১:১৯ এএম
আয়ারল্যান্ড সিরিজে ঘরের মাটিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ দলে নেই। নির্বাচকরা জানালেন- তাকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। বিশ্রাম না বাদ- সেই প্রসঙ্গ খানিকটা হুল্লোড় হলো।
আরও পড়ুন : ফখরের সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানের ৫০০তম জয়
মাসখানেক পরে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে অ্যাওয়ে সিরিজের জন্য দল ঘোষণা হলো। সেখানেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নাম নেই। নির্বাচকরা জানিয়েও দিলেন এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপকে সামনে রেখে তারা দলের পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন। যেহেতু দলে নামই নেই, তাই পরিকল্পনায়ও মাহমুদউল্লাহ নেই। সহজ এবং পরিষ্কার হিসাব।
সেটা আরও সহজ করে দিলেন গতকাল খালেদ মাহমুদ সুজন। বিসিবি পরিচালক ও গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান কোনোরকম রাখঢাক ছাড়াই বলে দিলেন- ‘সত্যি বলতে, যেহেতু ও (মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ) জাতীয় দলে নেই, আমি এখন সেই সূত্রে রিয়াদকে বিশ্বকাপে দেখছি না। কারণ যদি তাকে বিশ্বকাপে দেখতাম তাহলে সে এই সিরিজগুলোতে থাকত।’
সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে দিয়ে সামনে বাড়ছে বিসিবি। তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটের মধ্যে শুধুমাত্র ওয়ানডেতেই সুযোগ ছিল তার। টেস্ট থেকে তিনি নিজেই আকস্মিকভাবে অবসর নিয়ে ফেলেন ২০২১-এর জুলাইয়ে। মূলত বোর্ড এবং নির্বাচকদের ওপর অভিমান করেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে তিনি সরে দাঁড়ান। ফর্মের কারণে গেল বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগেভাগে অধিনায়কত্ব হারান। দলেও জায়গা হয়নি আর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকেছিলেন শুধুমাত্র ওয়ানডে ফরম্যাটে। এই ফরম্যাটে মিডলঅর্ডারে টিম ম্যানেজমেন্ট তার কাছ থেকে ঠিক যা চাচ্ছিল সেই দাবি মেটাতে তিনি পারছিলেন না। ছয় বা সাতে ব্যাট করা একজন ব্যাটসম্যানের জন্য স্ট্রাইকরেট অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দলের দাবি ব্যাটিংয়ের এই সময়টায় স্ট্রাইকরেট চাই একশর ওপরে। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আটকে যান আরও অনেক নিচে। সমস্যাটা নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্যরা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে কথাও বলেন। কিন্তু নিজের খেলায় আক্রমণের ধাঁচ বাড়াতে পারেননি তিনি।
নির্বাচক প্যানেল, কোচ, অধিনায়কের বৈঠকে মাহমুদউল্লাহ প্রসঙ্গ ওঠে। রেটিং কার্ডে ব্যাটিং গড়ের ঘরে পাস মার্ক পান তিনি। কিন্তু স্ট্রাইকরেটের ঘরে লাল ক্রস মার্ক। কাঁধের চোটের কারণে বোলিংয়েও এখন নিয়মিত নন। সেখানেও লাল চিহ্ন পড়ল। আর ফিল্ডিংয়ে পুরো মাইনাস!
২০২২ সালের শুরু থেকে মাহমুদউল্লাহ ১৮টি ওয়ানডে খেলেছেন বাংলাদেশের হয়ে। এ সময় তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪৮০ রান। গড়ও বেশ ভালোই, ৪৩.৭২। তবে আধুনিক ক্রিকেটে যে স্ট্রাইকরেটকেও গুরুত্ব দেওয়া হয় সমানভাবে, সেখানেই পিছিয়ে পড়েছেন তিনি। তার ক্যারিয়ার স্ট্রাইকরেট ৭৬.১৭। ২০২২ সালের শুরু থেকে তারও কম স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছেন মাহমুদউল্লাহ। সবশেষ ইংল্যান্ড সিরিজেও তিনি করেছেন ৭১ রান, যা করতে বল খেলেছেন ১০৬টি, তার স্ট্রাইকরেট দাঁড়িয়েছে মোটে ৬৭.৯১।
সঙ্গে যোগ করুন তার ফিল্ডিংও। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ফিল্ডিংয়ের ধার কমেছে তার। ইংল্যান্ড সিরিজে ক্যাচ ফসকেছে তার হাত দিয়ে। গ্রাউন্ড ফিল্ডিংও ছিল না আশানুরূপ। ব্যাট হাতে মন্থর রূপ আর ফিল্ডিংই কাল হয়েছে তার জন্য। ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ড সিরিজে দলে রাখা হয়নি তাকে, থাকবেন না আসছে আয়ারল্যান্ড সফরেও। যে কারণে বিশ্বকাপেও তার খেলাটা পড়ে গেছে অনিশ্চয়তার ধোঁয়াশায়।
ব্যাট হাতে যে রান ছিল না বিষয়টা এমন নয়। তবুও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে জাতীয় দল থেকে বাদ দেওয়া হয় সবশেষ আয়ারল্যান্ড সিরিজে। এরপর নির্বাচকরা অবশ্য জানান- ‘বাদ’ নয়, বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে তাকে। এরপর আয়ারল্যান্ডে ফিরতি সফরের দলেও যখন দেখা মিলল না তার নামের, তখনই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল- আসলে বিশ্রাম নয়, বাদই দেওয়া হয়েছে তাকে।
বিশ্বকাপের ঠিক আগে তার এভাবে দল থেকে বাদ পড়ে যাওয়া ইঙ্গিত দিচ্ছে ক্রিকেটের বিশ্ব আসরেও তার না খেলার। নির্বাচকরা বিষয়টাকে ঠিক পরিষ্কার না করলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ও গেম ডেভেলপমেন্টের প্রধান খালেদ মাহমুদ সুজন জানালেন, বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনাটা ফিকেই হয়ে গেছে মাহমুদউল্লাহর।
মাহমুদউল্লাহর অতীত কথা বলছে তার পক্ষে। বাংলাদেশের বহু স্মরণীয় জয়ের নায়ক-পার্শ্বনায়ক ছিলেন তিনি। তবে খালেদ মাহমুদ জানালেন, বর্তমান পরিস্থিতিটাই এখানে মুখ্য হয়ে উঠেছে। লোয়ার মিডল অর্ডারে শেষ কিছুদিন তাওহিদ হৃদয় দারুণ পারফর্ম করেছেন; আফিফ হোসেন, ইয়াসির আলীরাও আছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। তাতে মাহমুদউল্লাহর জায়গাটা সংকীর্ণই হয়েছে দিনে দিনে।
তবে দলে রাস্তাটা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে, এমনটা ভাবছেন না সুজন। তার অভিমত, পারফর্ম করলে বিবেচনায় আনা হতেও পারে তাকে। তার কথা, ‘হয়তো তাওহিদ হৃদয় ভালো করছে, আফিফও এখন দলে নেই। তারপরও সুপার লিগের ম্যাচগুলোতে রিয়াদ নিজেকে কীভাবে মেলে ধরে সেটাও দেখার বিষয়। কিন্তু রিয়াদ যখনই খেলেছে বাংলাদেশের জন্য, খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গায়। যেখানে হিরোও হতে পারে, জিরোও হতে পারে। রিয়াদ দুটির স্বাদই পেয়েছে। ওর অনেক ম্যাচ আছে যেগুলো একাই জিতেছে। আসলে মূল কথা হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতিটা আসল।’
তবে মাহমুদউল্লাহকে দলে ফিরিয়ে সরাসরি বিশ্বকাপে নিলে হিতে বিপরীত হতে পারে, অভিমত সুজনের। ফেরাতে হলে বিশ্বকাপের আগে কোনো একটা সিরিজে ফেরানো উচিত বলে মনে করেন তিনি, ‘রিয়াদকে দলে কতটুকু দরকার বা ওর বদলে যারা খেলছে পারফর্ম করছে কি না। যদি পারফর্ম করে, দল যদি সন্তুষ্ট থাকে; তাহলে রিয়াদের সুযোগ কম থাকবেই। যদি ওরকম না হয়, রিয়াদের অভিজ্ঞতা তো আছেই। যেকোনো সময় ব্যাক করলে পারফর্ম করতে পারবে সেটা আমরা সবাই বিশ্বাস করি। সময় তো আছে, একদমই রিয়াদ যে বাইর হয়ে গেছে তা নয়। কিন্তু আমার মনে হয় বিশ্বকাপের আগে হঠাৎ আনা ঠিক হবে না। তার আগেই ওকে এনে সিরিজ ও ম্যাচ দিতে হবে।’