কলাম
আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ১১:০০ এএম
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ১১:২৬ এএম
বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন
দুদিন ধরে এটা টক অব দ্য টাউন। টিভিতে দেখলাম সালাউদ্দিন প্রেস কনফারেন্স ডেকেছিলেন। যে আচরণ তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে করেছেন, তা আমি মনে করি দুঃখজনক। তিনি যেভাবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তড়িৎগতিতে চলে গেলেন, তা সাংবাদিকদের অপমান করেছেন বলে মনে হয়েছে আমার।
আরও পড়ুন : সোহাগের জালিয়াতি, সালাউদ্দিনের কি দায় নেই?
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সম্পর্কে বিগত ৫-৭ বছরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, মিডিয়া বলে আসছিল। অনেক কিছু এখানে হয়, যা গোপনে কাজ সেরে নেয়। শেষ পর্যন্ত আমরা কী দেখলাম? টাকার অভাবে নারী দলকে বিদেশে পাঠাতে পারল না। এমন বাংলাদেশ ফুটবলের ইতিহাসে এই প্রথম হলো যে, টাকার অভাবে দলকে বিদেশে টুর্নামেন্টে পাঠানো গেল না। এটা অত্যন্ত কষ্টের, বেদনার।
যে মেয়েরা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ছিনিয়ে এনে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে, দিন-রাত পরিশ্রম করে আমাদের সাফের শিরোপা এনে দিয়েছে… প্রি অলিম্পিক অনেক বড় একটা আসর, সেখানে তাদের না পাঠিয়ে অন্যায় করেছে বাফুফে, আমি তার নিন্দা জানাই। ফুটবলার হিসেবে আমি বলতে পারি, আমি সারা বছর অনুশীলন করতে পারি, কিন্তু মাঠে না খেললে আমার খেলার তো উন্নতিই হবে না… খেলতে গেলে মেয়েরা সাফের গণ্ডি পেরিয়ে কোথায় যেতে পারে, তা আমরা দেখতে পারতাম, তারাও চেষ্টা করত। এটা হতে দেয়নি বাফুফে। মাত্র কয়েক লাখের জন্য মেয়েরা যেতে পারল না, এটা খুবই দুঃখজনক। বিষয়টা তো আছেই, সবকিছু নিয়েই বাফুফে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে।
তারা যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন ২০০৮ সালে, তখন বাংলাদেশের ফিফা র্যাঙ্কিং ছিল ১৫০-১৫২। আর এখন দেখেন, ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান ১৯২। ৪০ ধাপ পিছিয়ে দিয়েছেন তারা। যারা তাকে দায়িত্ব দিয়েছিল, বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমী মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল, এবার যদি বাংলাদেশের ফুটবল ঘুরে দাঁড়ায়, যোগ্য ব্যক্তি কাজী সালাউদ্দিনের হাতে দায়িত্ব পড়েছে, যিনি ফুটবলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, তার হাত ধরেই দেশের ফুটবল জেগে উঠবে, তৃণমূল থেকে দেশের ফুটবলকে জাগিয়ে তুলবেন, হয়তো দুই-চার-দশ বছরের মধ্যে আমরা বিশ্বকাপেও খেলব… এজন্য মানুষ দুই হাত তুলে দোয়া করেছিল সালাউদ্দিনের কমিটিকে। সবাই আশা করেছিল সত্তর-আশির দশকের সেই ফুটবলটাকে তারা ছড়িয়ে দেবে নতুন প্রজন্মের কাছে। এই কমিটি সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা তা পারেনি।
শুধু ঢাকার ফুটবল নিয়ে পড়ে ছিল। এটা তো ঢাকা ফুটবল ফেডারেশন নয়, এটা তো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, এর কাজ তো বাংলাদেশের ফুটবলকে দেখা! তাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, তাহলে তিনি বলেন ফুটবল লিগের কথা। আরে এটা করার জন্য তো লিগ কমিটি আছেই। বারবার একই কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।
আমরা কী দেখতে পাই, আমরা দেখতে পাই তারা ব্যর্থতার চরম শিখরে পৌঁছে গেছেন। কাজী সালাউদ্দিন এক সময় আমার সতীর্থ ছিলেন, তখন ভালো খেলোয়াড় হিসেবে সুনাম ছিল তার। সত্তর-আশির দশকে খেলাটা যে উন্নতির শিখর ছুঁয়েছিল, তার পেছনে তার বড় অবদানই ছিল। তার খেলোয়াড়ি জীবনে আমি তার বড় ভক্তই ছিলাম। কিন্তু প্রশাসক হিসেবে তিনি অদক্ষ একজন হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন। আমি বলব, ১৫ বছর অনেক লম্বা সময়, তিনি যদি নিজের পদ থেকে সরে দাঁড়ান, তাহলে এখনও হয়তো কিছু সম্মান নিয়ে যেতে পারবেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানালেন, আমাদের সহ-সভাপতিরা দেশের বাইরে, তারা ফিরলে আলোচনা করে আমরা বিস্তারিত জানাব। আমার কথা হচ্ছে, নির্বাচন এলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে একটা বোর্ড গঠন করা হয়। এরকম একটা সিদ্ধান্ত, জাতীয় সিদ্ধান্ত… এর আগে মেয়েদের অলিম্পিকে পাঠানো হলো না… কেন ইসি কমিটির মিটিং ডাকা হয়নি! এটা অন্যায়, অবৈধ কাজ করেছেন!
দিনকয়েক আগে বাফুফে সাধারণ সম্পাদককে ডাকা হলো ফিফার পক্ষ থেকে জুরিখে। তার সেখানে যাওয়া নিয়ে সভাপতি সালাউদ্দিন বললেন, তাকে না জানিয়েই দেশের বাইরে জুরিখে গেছে সোহাগ। আমি বিষয়টাকে এভাবে বিশ্বাস করি না। এটা তো তার ব্যর্থতা, তার জিএস জুরিখে চলে গেছে না জানিয়ে, এটা কীভাবে হয়, ঘরের বাইরে পা রাখতে গেলেও তো চেয়ারম্যান, প্রেসিডেন্টকে বলে যাবে! সেখানে সে জুরিখে চলে গেল? এটা তিনি জানেন না? তিনি জানেন, আমাদের কাছে লুকিয়েছেন, কারণ এটা ফাঁস করলে আলোচনা-সমালোচনা হবে, ক্ষতির মুখে পড়বেন, সে কারণে মিথ্যা বলেছেন, সব মিথ্যা।
কয়েকদিন আগে তিনি বলেছিলেন, মিডিয়ার কারণে তাদের কাছে টাকা আসছে না, সবাই তাদের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এটা কিন্তু মিডিয়ার কারণে হয়নি, এটা তাদের নিজেদের কারণেই হয়েছে, এখানে দোষী তারা নিজেই। মিডিয়া কি খারাপ করলে ভালো বলবে? মিডিয়ার কাজ ভালোকে ভালো বলে উপস্থাপন করা, খারাপকে খারাপ। খারাপ করলে মিডিয়া লিখবে না। ভালো করলে লিখলে তো উৎসাহিতই হন, এখন খারাপ লিখলে কেন স্পোর্টিংলি নিতে পারবেন না? যা বলেছেন তিনি অবাস্তব কথা বলেছেন।
পরিশেষে সোহাগের এভাবে নিষিদ্ধ হওয়াটা বাংলাদেশ ফুটবলের অন্ধকার সময়টাকে আরও ঘনীভূত করল। যে ঘটনাক্রম চলছিল, সে সময়ে এই নিষেধাজ্ঞা নেমে এলো ফিফা থেকে। ফুটবল জগাখিচুড়ি একটা অবস্থায় পড়ে গেল। জনগণের আগ্রহে পানি ঢেলে দেওয়া হলো।
যে অবস্থা চলছে, তাতে আমার শেষ কথা- আমি বলব সালাউদ্দিনের এখন নিজে থেকে সরে যাওয়া উচিত। ফুটবলকে বাঁচতে দেওয়ার জন্য, নিজের বাকি থাকা সম্মান রক্ষা করতে চাইলে তার সরে যাওয়া উচিত বলে মনে করি।
আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু : জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ও সংগঠক