ফিফায় নিষিদ্ধ সোহাগ
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ১০:৪০ এএম
আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ১০:৪৫ এএম
‘বিনা মেঘে বজ্রপাত’ যাকে বলে, ঠিক তা হয়নি। আঁচটা বাংলাদেশ ফুটবলের হর্তাকর্তারা পেয়ে গিয়েছিলেন অনেক আগে থেকেই। অপেক্ষা ছিল ‘ফিনিশিং’, সেটা হলো শুক্রবার, বাংলা নতুন বছর শুরুর দিন। ‘দায়িত্বে অবহেলা, জালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য সরবরাহর’-এর দায়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে দুই বছরের জন্য সব ধরনের ফুটবল কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করে ফিফা, সঙ্গে জুড়ে যায় ১২ লাখ টাকার জরিমানার ফরমানও।
আরও পড়ুন : সোহাগের জালিয়াতি, সালাউদ্দিনের কি দায় নেই?
এরপর থেকেই অপেক্ষা ছিল বাফুফের ভাষ্যের। আনুষ্ঠানিকভাবে যে কিছুই বলছিল না বাংলাদেশ ফুটবলের সর্বোচ্চ এই সংস্থা! এই প্রতিক্রিয়া জানতে শনিবার বেলা গড়াতেই বাফুফে ভবনে সাংবাদিকদের ভিড়। গণমাধ্যমকর্মীদের এই অপেক্ষা শেষ হলো দুপুর আড়াইটা নাগাদ। সফেদ মার্সিডিজে চড়ে বাফুফেপ্রধান কাজী সালাউদ্দিন এলেন দৃশ্যপটে। সংবাদকর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে ভিড় জমালেন তার চারপাশে। তবে তখনই জানানো হলো, বাফুফেপ্রধান কথা বলবেন তার রুমের পাশে বোর্ডরুমে। অবশেষে সেখানেই বসল অঘোষিত সংবাদ সম্মেলনটা।
কারণটা সবার জানাই ছিল। তবু বাফুফে সভাপতি জানালেন নতুন করে। যোগ করলেন, তিনি নাকি ৫১ পৃষ্ঠা দীর্ঘ ফিফার বিবৃতিটার পুরোটা পড়েননি। বললেন, ‘আমি কিছু কিছু ডকুমেন্ট পড়েছি, আজকেও পড়েছি। আমি পুরোটা পড়তে পারিনি। আমি একটা জরুরি মিটিং দিয়ে জানতে চেয়েছিলাম।’
তাকে ‘জানানোর দায়িত্ব’ যাদের, সে সহ-সভাপতিদের দুইজনই দেশের বাইরে। তাই তাকে ‘জানানোও’ হয়নি কারও, সিদ্ধান্ত নেওয়ার তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না। সালাউদ্দিন জানালেন, তারা এলেই হবে সিদ্ধান্ত। তার কথা, ‘আমার তিন ভাইস প্রেসিডেন্টের মধ্যে দুইজন ভাইস প্রেসিডেন্ট দেশের বাইরে আছে। উনারা কাল-পরশু এসে পৌঁছাবে। কাল পৌঁছালে পরশু আমরা জরুরি মিটিং করে আপনাদের আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ জানাব।’
এই নিষেধাজ্ঞা আসছে, বাফুফে সভাপতি আগেই আঁচ করেছিলেন। ফেব্রুয়ারির শুরুতে বাফুফে সাধারণ সম্পাদককে তলব করেছিল ফিফা। তবে তখন তার এই যাত্রাকে ব্যক্তিগত যাত্রা বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন বাফুফে সভাপতি। তবে এবার জানালেন, তখনই আঁচ পেয়েছিলেন, কিছু একটা হচ্ছে।
তার কথা, ‘ওরা যখন জুরিখে গেছে, তখনই তো জানি একটা কিছু চলছে। তবে আমাদেরকে অফিসিয়ালি কেউ জানায়নি এবং এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি ফিফার থেকে চিঠি পাইনি। আমি ওয়েবসাইটে দেখেছি, তাই ধরে নিচ্ছি যে অফিসিয়াল।’
সে কারণে সিদ্ধান্তটা বাফুফে সভাপতির কাছে বিস্ময়ের কারণও হতে পারেনি। তার ভাষ্য, ‘যখন এথিকস কমিটি এটার পেছনে লেগেছে, তাদের কিছু একটা তো করতে হবে।’
বাফুফে সিদ্ধান্তটা নেবে দুদিন পর। তার আগে ফিফার কথাই মানা হবে। সোহাগ নিষেধাজ্ঞার আওতাধীনই থাকবেন। সালাউদ্দিনের ভাষ্য, ‘এখন যেহেতু ফিফা আমাদের বলেছে তাকে সাসপেনশনে রাখতে, আমরা তাই রেখেছি। আর বাদবাকি কী অ্যাকশনে যাবে বাফুফে, এটা জানতে আপনাকে দুইদিন অপেক্ষা করতে হবে। সোমবার ফিফা খুলবে। আমি তো কাগজ পেয়েছি, ফিফা খুললে তাদের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলাপ করে তারপর আমরা নিজেরা মিটিং করে আপনাদের আমাদের পরবর্তী পদেক্ষেপ জানাব।’
বাফুফে এখনই কোনো সিদ্ধান্তে আসতে চাইছে না। সালাউদ্দিনের কথা, ‘আমি সোহাগের সঙ্গে কাল রাতে কথা বলেছি। তার মনে হচ্ছে যে এটা তার ওপর অবিচার করা হয়েছে। এজন্য সে আমাকে বলল যে আমি সিএএসে (কোর্ট অব আরবিট্রেশন ফর স্পোর্টস) যাব।’ বাফুফে তাই অপেক্ষা করতে চাইছে।
ফিফার ছাপানো ৫১ পৃষ্ঠা দীর্ঘ অভিযোগনামায় স্পষ্ট করেই বলা ছিল আর্থিক অনিয়মের কথা। যদিও বাফুফে সভাপতি তা অগ্রাহ্য করে গেলেন পুরোপুরি।
বললেন, ‘আর্থিক অনিয়মের কথা কিন্তু বলা হয়নি। ওরা বলেছে কোড অব এথিকস লঙ্ঘনের কথা এবং দায়িত্ব দিয়ে বলেছে। যাই বলা হয়েছে, সব নিয়েই কথা হবে। এখানে লুকানোর কিছু নেই। তবে এখন আপনাদের কিছু বলার আগে বা কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে আমাদের বোর্ড মিটিং করতে হবে। আমার সব ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সিনিয়র মেম্বারদের সঙ্গে বসে ডিসিশন যেটা হবে সেটা আপনাদের জানানো হবে।’
এরপরই এলো সেই মুহূর্ত, সালাউদ্দিনের কাছে প্রশ্ন ধেয়ে গেল, ‘এই পরিস্থিতিটা বাংলাদেশ ফুটবলের জন্য লজ্জাজনক কি না?’ সে প্রশ্নের পর ‘ধন্যবাদ’ বলে পেছনের দরজা দিয়ে বোর্ডরুম ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি। তার মানে দাঁড়ায়, মুখে অস্বীকার করলেও এই নিষেধাজ্ঞা বাফুফেকে লজ্জার মুখে ফেলে দিয়েছে ঠিকই।