প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ২২:৩৭ পিএম
আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ২২:৪৩ পিএম
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ফিফা। সঙ্গে আছে ১০ হাজার সুইস ফ্রাঁ বা ১২ লাখ টাকা জরিমানাও। তার ওপর এই শাস্তি নেমে এসেছে ফিফার এথিকস কোডের চারটি ধারা লঙ্ঘনের অপরাধে। চারটি ধারা হলো- ধারা ১৫ (সাধারণ কর্তব্য), ১৩ (আনুগত্যের দায়িত্ব), ২৪ (জালিয়াতি ও মিথ্যাচার) এবং ২৮ (অযথার্থতা ও অনুদানের অপব্যবহার)।
আরও পড়ুন : ফিফার নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপিল করবেন সোহাগ
অভিযোগের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে ফিফার ইন্ডিপেন্ডেন্ট এথিকস কমিটির বিচারিক চেম্বার। ফিফার অনুদানের অর্থের হিসাব জমা দিতে গিয়ে বাফুফে সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ মিথ্যা ও ভুয়া নথি ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
ক্রীড়া পোশাকসামগ্রী কেনা
প্রতিবেদনটিতে বাফুফের প্রথম অনিয়মের বিষয়টি চিহ্নিত হয়েছে ক্রীড়া পোশাকসামগ্রী কেনাকে ঘিরে। ফিফাকে এই বিষয়টি জানায় কন্ট্রোল রিস্ক গ্রুপ লিমিটেড। তারপরই ফিফা বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে। বাফুফের আবাসিক ক্যাম্প ও জাতীয় দলের অনুশীলনের পোশাকের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেখানে রবিন এন্টারপ্রাইজ, স্পোর্টস লিংক ও স্পোর্টস কর্নার নামে তিন প্রতিষ্ঠানের আবেদন জমা পড়ে। প্রতিষ্ঠান তিনটির আবেদন কাকতালীয়ভাবে একই টেমপ্লেটে করা হয়, এমনকি কোটেশন বানানে একই রকমের ভুল দেখা যায়। এরপর অডিট প্রতিষ্ঠান বিডিও এলএলপির তদন্তে উঠে আসে তিনটি দরপত্রের উৎস একই, ভিন্ন কোনো প্রতিষ্ঠানের নয়, যা ফিফার নিয়মের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
ফুটবল কেনা
২০২০ সালের শুরুতে বাফুফে ৪০০ ফুটবল কেনে ১৩ হাজার ৯২১ ডলার খরচে। যেখানে দরপত্র জমা দেয় তিনটি প্রতিষ্ঠান— মারিয়া ইন্টারন্যাশনাল, এইচ ইউ জামান ট্রেডিং ও ওফেলিয়া’স ক্লোজেট। শেষমেশ কাজটা পায় ওফেলিয়া’স ক্লোজেট। কিন্তু কন্ট্রোল রিস্কের প্রতিবেদনে উঠে আসে, প্রতিষ্ঠানটি কোনো প্রকারের বল সাপ্লাইয়ের সঙ্গে জড়িত নয়, বরং তা মেয়েদের পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। এমনকি বাকি দুই প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নিয়েও ওঠে প্রশ্ন।
বিমান টিকিট কেনা
কাতার বিশ্বকাপের প্রাক বাছাইপর্ব খেলতে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ওমান সফর করে। সেই সফরের বিমান টিকিট বাবদ ১৯ হাজার ৯২৫ ডলার আল মারওয়া ইন্টারন্যাশনালকে দেয় বাফুফে। সেই দরপত্র পেতে আরও দুটি প্রতিষ্ঠান পূরবী ইন্টারন্যাশনাল ও মাল্টিপ্লেক্স ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসেরও দরপ্রস্তাব পান সোহাগ। অক্টোবরে আল মারওয়া ইন্টারন্যাশনালকে অর্থ প্রদানের অনুমোদন দেন তিনি। ফিফা ফরোয়ার্ড ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে দুটি চেক ইস্যু করা হয়। তবে বাকি দুই প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলে তদন্তকারী প্রতিষ্ঠান।
ঘাস কাটার যন্ত্র কেনা
২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ১ হাজার ৪১২ মার্কিন ডলারে ঘাস কাটার যন্ত্র কেনে বাফুফে। বাংলাদেশ হার্ডওয়্যার ও শোভা এন্টারপ্রাইজ এতে দরপত্র দেয়। যেখানে বাংলাদেশ হার্ডওয়্যারকে টেন্ডার দেয় বাফুফে।
আগের তিন অসঙ্গতির মতো এখানেও অসঙ্গতিটা একই। বানানে ভুল, দরপত্র দেখতে একই রকম হওয়া। সব মিলিয়ে তদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, সব দরপত্রই একই জায়গা থেকে করা। এসব হিসাবের কাগজে চূড়ান্ত স্বাক্ষরটা ছিল সোহাগেরই। সে কারণে সোহাগের ওপরই নেমে এসেছে এই শাস্তির খড়গ।