প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:১২ পিএম
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:১৬ পিএম
মিয়ানমারে নারীদের অলিম্পিক বাছাইপর্বের বি গ্রুপের খেলা শুরু হয়েছে গত ৬ এপ্রিল থেকে। তার ঠিক এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ঘোষণা দেয়, সে টুর্নামেন্টে দলকে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না তাদের। কারণ হিসেবে দেখানো হয় বাফুফের অর্থাভাবকে।
আরও পড়ুন : আগ্রাসি ম্যানইউর সামনে ধুঁকতে থাকা সেভিয়া
এরপর থেকে কম আলোচনা-সমালোচনা পোহাতে হয়নি বাফুফেকে। মাত্র ছয় মাস আগে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা নারী ফুটবল দলের অর্থাভাবে টুর্নামেন্টে খেলতে না পারাটা যে কম বিস্ময়ের নয়! সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন নিজে জানান, খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও ফোনকল এসেছিল তার কাছে, পুরো বিষয়টি জানতে চাওয়া হয় তার কাছ থেকে।
এরপর যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল তো রীতিমতো বাফুফের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন! ফুটবল ফেডারেশন ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে অর্থ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল গত ২৭ মার্চ, সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল ৩১ মার্চ পর্যন্ত। অথচ তার আগেই গত ২৯ মার্চ জানানো হয়, টাকার অভাবে মেয়েদের পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না মিয়ানমারে। যে কারণে পুরো প্রক্রিয়াটাই তার কাছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ঠেকেছিল, সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এমনটাই জানান তিনি।
এর আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেন। তারও অভিমত ছিল, এর পেছনে আছে অন্য কারণ। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন জানিয়েছে, পুরো বিষয়টিই হয়েছে ‘ভুল বোঝাবুঝির’ কারণে।
গতকাল বাফুফে ভবনে জরুরি সভা ডাকা হয় কার্যনির্বাহী কমিটির। নারী দলের টুর্নামেন্টে খেলতে না পারার সিদ্ধান্তটা এসেছিল কার্যনির্বাহী কমিটির কোনো প্রকার সভা ছাড়াই, এমনকি নারী উইংয়ের আনুষ্ঠানিক সভাও ডাকা হয়নি এই সিদ্ধান্ত জানানোর আগে। যে কারণে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের মধ্যে উষ্মাও প্রকাশ পায় সে সভায়।
সভায় সব সদস্য উপস্থিতও ছিলেন না। বাফুফের নির্বাহী কমিটির ২০ জনের মধ্যে অধিকাংশই সশরীরে উপস্থিত ছিলেন না এই সভায়। সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ, বাফুফে সদস্য হারুনুর রশীদ দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। এ ছাড়া নির্বাহী কমিটির অনেক সদস্য বিভিন্ন জেলায় অবস্থান করেন। যে কারণে জুম মিটিংয়ে সবাই হাজির হন এই সভায়।
সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ভবিষ্যৎ সফরের জন্য সব মিলিয়ে কমপক্ষে ৮ কোটি টাকা প্রয়োজন। ফিফা-এএফসির অর্থ অনুদান আর পৃষ্ঠপোষকদের থেকে প্রাপ্য অর্থ মিলিয়ে যার ৫.৫ কোটি টাকা পাবে বাফুফে। বাকি থাকে ২.৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবটা কষতেই গতকাল এই জরুরি সভার ডাক পড়েছিল। বাফুফে জানায়, ২.৫ কোটি টাকার সেই ঘাটতি পোষাতেই আবার যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হবে বাফুফে।
প্রেস ব্রিফিংয়ের একপর্যায়ে উঠে আসে শেষ কিছুদিনের ঘটনাপ্রবাহও। কোনো প্রকার কার্যনির্বাহী সভা ছাড়াই নারীদের মিয়ানমারে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানানোর বিষয়টিও উঠে আসে। বাফুফে সদস্য আমের খান একপর্যায়ে উপস্থিত সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মানিক ও সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগের প্রতি একপ্রকার অভিযোগের সুরেই তুলে ধরেন বিষয়টি।
মিয়ানমার সফরের জন্য ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে চাওয়া ৯২ লাখ টাকার বিষয়টিও উত্থাপিত হয়। বাফুফে সাধারণ সম্পাদক জানান, বিষয়টি চাইলে পরিবর্তন করা যেত। কিন্তু দুইপক্ষের ভুল বোঝাবুঝির কারণেই আর তা সম্ভব হয়নি। যার ফলে নারীদেরও পাঠানো সম্ভব হয়নি অলিম্পিক বাছাই খেলতে।
অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সিনিয়র ও বয়সভিত্তিক নারী দলগুলোর সফরসূচিটা বেশ লম্বা। এ মাসেই সিঙ্গাপুরে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে যাবেন মেয়েরা। এ ছাড়া সামনে আছে তিনটি ফিফা উইন্ডো। সিনিয়র নারী দলকে এই তিন উইন্ডোতে দুটো করে ৬টি ম্যাচ খেলাতে চায় বাফুফে। সব ম্যাচ ঘরের মাঠে নয়, প্রতিপক্ষের মাঠেও খেলার আশা তাদের। এখানেই শেষ নয়। সিঙ্গাপুরের আসরে ফলাফল আশানুরূপ হলে আছে দ্বিতীয় রাউন্ডের হাতছানিও। সেসব টুর্নামেন্টে দলের নিয়তি যেন মিয়ানমার সফরের মতো না হয়, সে কারণেই মূলত গতকালকের এই সভার ডাক। সে সভা ফলপ্রসূ হয় কি না, সে প্রশ্নের উত্তর মিলবে ভবিষ্যতেই।