শান্ত রিমন
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:৩২ পিএম
বুঝে ওঠার আগেই ইসলামাবাদ ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে হাজার মাইল দূরের অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পাড়ি জমান। এরপর সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। বুঝতে শেখা। ক্রিকেটের প্রতি অনুরাগ। সেই অনুরাগকে পরবর্তী সময়ে পেশা হিসেবে নিয়ে উসমান খাজা গায়ে জড়িয়েছেন জাতীয় দলের জার্সি। হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ক্রিকেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অজিদের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম মুসলিম ক্রিকেটারও তিনি। তবে এই পরিচয়ে পরিচিত হতে চান না খাজা। ভান করতে চান না নিখুঁত মুসলিম হিসেবেও। নিজ ধর্ম ইসলামকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সর্বোচ্চ দিয়ে কেবল পালন করতে চান।
২০০৮ সালে নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ করেন খাজা। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেট মাতিয়ে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয় ২০১১ সালে। পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার আগে নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিমান চালনায় স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। তবে সেদিকে পা বাড়াননি। মাঠের ক্রিকেটেই নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। যার পেছনে ঢাল হয়েছিল তার ধর্ম।
আমার জীবনের এক নম্বর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ধর্ম, তাই এটি প্রথমে আসে। এরপর বাকি সবকিছু যা আমাকে ক্রিকেটে সাহায্য করে
একসময়কার সতীর্থ ফিলিপ হিউজের মৃত্যুর পর সবাই ভয় পেলেও নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর আস্থা রেখেছিলেন খাজা, ‘হিউজের মৃত্যুর পর আরও বেশি ধার্মিক হয়ে উঠিনি সত্যি, তবে আমি মনে করি ধর্মের পরিপ্রেক্ষিতে একটি সুখী মাধ্যম খুঁজে পেয়েছিলাম। যা আমাকে সাধারণভাবে জীবনযাপনে সহায়তা করেছে। হিউজের সঙ্গে যা ঘটেছিল প্রত্যেকে একে অন্যভাবে নিয়েছে। খেলাটি মাঝে মাঝে বেশ কঠিন, চাপযুক্ত এবং আবেগপূর্ণ। তাই আপনাকে কেন্দ্রে ফিরে আসার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। প্রত্যেকে এটি বিভিন্ন উপায়ে করে। আমারও আলাদা উপায় আছে এবং আমি সেভাবেই করি। আমি প্রার্থনা করি, এটাই আমাকে কেন্দ্রীভূত করে। আমার জীবনের এক নম্বর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ধর্ম, তাই এটি প্রথমে আসে। এরপর বাকি সবকিছু যা আমাকে ক্রিকেটে সাহায্য করে।’
স্ত্রীকে কখনোই ইসলামে ধর্মান্তরিত হতে বলেননি খাজা
ক্যারিয়ারের শুরুতে ধর্ম নিয়ে অনেক প্রশ্নের মুখে পড়তে হলেও তেমন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন না। তবে সেই দৃশ্যপট এখন পাল্টেছে। ধর্ম নিয়ে খাজা বলেন, ‘আমি কে, এটা তার একটা অংশমাত্র। আমি কখনোই এটা লুকিয়ে রাখিনি এবং ধর্ম নিয়ে বড় কোনো ঝামেলা করিনি। যখন আমি একজন পরিচালনার অধীনে ছিলাম, আমাকে একটু সাবধানে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজকাল আমি আমার নিজের ধর্মে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি। আমি এটি সম্পর্কে কথা বলতে পেরে খুশি। আমি নিখুঁত মুসলিম হওয়ার ভান করছি না। তবে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করি। আমি ভালো জিনিসগুলোর জন্য কৃতজ্ঞ হওয়ার চেষ্টা করি।’
‘কিছুদিন একসঙ্গে ঘোরাফেরার পর, আমি তাকে আমার বিশ্বাস সম্পর্কে বলেছিলাম। তবে আমি তাকে কখনোই বলিনি, ‘তুমি ইসলামে ধর্মান্তরিত হও; তা না হলে আমি তোমার সঙ্গে থাকতে পারব না।’
রমজানে রোজা রেখে মাঠে নামা যে কারও জন্যই কঠিন। খাজা অবশ্য সব সময় রোজা রেখে মাঠেও নামেন না। তবে কীভাবে রোজা রেখে লম্বা সময় মাঠে থাকা যায় সেসব নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকান মুসলিম ক্রিকেটার হাশিম আমলার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি ছুটির দিনগুলোতে রোজা রাখার চেষ্টা করব এবং আশা করছি কিছু ভ্রমণের দিন, কিন্তু ম্যাচের দিন নয়। কারণ এটা করা খুব কঠিন। এমনকি আমি হাশিমের সঙ্গেও এই বিষয়ে কথা বলেছি। ম্যাচের দিনগুলো খুব কঠিন, তবে অন্যান্য দিনে আমি অবশ্যই রোজা রাখব।’
মুসলিম ধর্মীয় রীতি মেনে ২০১৮ সালে রাচেল ম্যাকলেলানকে বিয়ে করেন খাজা। তবে জীবনসঙ্গিনীকে কখনোই ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করেননি তিনি। এ বিষয়ে বলেন, ‘কিছুদিন একসঙ্গে ঘোরাফেরার পর, আমি তাকে আমার বিশ্বাস সম্পর্কে বলেছিলাম। তবে আমি তাকে কখনোই বলিনি, ‘তুমি ইসলামে ধর্মান্তরিত হও; তা না হলে আমি তোমার সঙ্গে থাকতে পারব না।’
আরও পড়ুন :
এর কারণ, ‘আমাদের সম্পর্কের শুরু থেকেই আমি পুরোপুরি খোলামেলা থাকতে চাই। আমার ধর্ম আমার হৃদয়ের খুব কাছের। রাচ আমাকে বলেছিল, ‘আমি ইতোমধ্যে তোমার ধর্ম সম্পর্কে পড়া শুরু করেছি। আমি তখন বেশ হতবাক হয়েছিলাম এবং জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘যদি আমার কিছু হয়ে যায়, তাহলেও কি আপনি মুসলিম থাকবেন?’ এটা আমার কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন কারণ, এর উত্তর যদি না হয়, তাহলে তার মানে হবে, সে শুধু আমার জন্য ধর্মান্তরিত হচ্ছে, তার জন্য নয়। এটি এভাবে হওয়া উচিত নয়।’