পার্থ রায়
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৩ ১৭:৪৪ পিএম
আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৩ ১৮:০২ পিএম
প্রত্যেক খেলোয়াড়েরই তো স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলে খেলবে। সেই স্বপ্নের কাছাকাছি থাকা ও দলে সুযোগ পাওয়া তো বড় প্রাপ্তি—জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর এটাই বলেছিলেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। ডাক পাওয়াতেই নিজের প্রাপ্তি আটকে রাখতে চান না। বরং জাতীয় দলে নিজেকে প্রমাণের জন্য চান কঠিন চ্যালেঞ্জ। সেটাই হয়তো অপেক্ষায় আছে তার জন্য। ঘাবড়ে না গিয়ে বিপিএলের ফর্ম টেনে আনতে চান।
আয়ারল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ দলে নতুন মুখ বাঁহাতি পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। বিপিএলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে ১১ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন। আগের আসরে তার উইকেট ৮ ম্যাচে ১৫টি। ২০২২ সালের ওই আসরেই নজর কাড়েন। তখন থেকেই নির্বাচকদের নজর ছিল মৃত্যুঞ্জয়ের ওপর। এবার জাতীয় দলে ডাক পড়ল। যখন জাতীয় দলে তার নাম এসেছে সেই সময়ও আছেন ছন্দে। জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার দিন পর্যন্ত ডিপিএলে শেখ জামালের হয়ে ৭ ইনিংসে তার শিকার ১২ উইকেট।
‘আয়ারল্যান্ড সিরিজের আগে অ্যালান ডোনাল্ডের সঙ্গে সাত দিনের মতো কাজ করেছি। এটা আমার অভিজ্ঞতা বাড়িয়েছে। ডোনাল্ডের সঙ্গে কাজ করার পর মানসিকতার উন্নতি হয়েছে। এটা প্রিমিয়ার লিগে বুঝেছি
জাতীয় দলে ডাক পাওয়ায় খুশি মৃত্যুঞ্জয় প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, বিপিএলে খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে। এটাও মাথায় রেখেছেন, বিপিএল আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মাঝেও আছে ফারাক, ‘জাতীয় দল পুরোপুরি ভিন্ন জায়গা।’ বিপিএলে ভালো খেলা তাকে সাহায্য করবে সেটা জানিয়ে বলেন, ‘এখানে খেলার চ্যালেঞ্জ ও পারফরম্যান্স জাতীয় দলে ভালো করতে সাহায্য করবে।’
এদিকে চলমান ডিপিএলও তাকে দিচ্ছে আত্মবিশ্বাস, ‘প্রত্যেকটা ম্যাচই খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কাজে লাগে। এটা আমার দিক থেকে ভালোভাবেই যাচ্ছে।’
জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর তার সামনে অপেক্ষায় আরও বড় চ্যালেঞ্জ। পেস বোলিং ইউনিটে তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, মুস্তাফিজুর রহমান ও এবাদত হোসেনরা আছেন দারুণ ছন্দে। তাদের পাশ কাটিয়ে দলে জায়গা ধরে রাখাটা মৃত্যুঞ্জয়ের জন্য চ্যালেঞ্জই বটে। তাসকিনের বদলি হিসেবে সুযোগ পাওয়ার পরও চ্যালেঞ্জটা নিতে চান। সেক্ষেত্রে তার দর্শন, চ্যালেঞ্জ না থাকলে ভালো করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘দেখেন যদি একজন খেলোয়াড় চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে না পড়ে, সেক্ষেত্রে তার থেকে শতভাগ পাওয়া কঠিন। আমি যেহেতু চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে আছি, তাই এটাই নিজেকে প্রমাণের সঠিক সময়। আমি যদি কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে প্রমাণ করতে পারি, তাহলে পরে প্রমাণ করা সহজ হবে।’
চেষ্টা করব, যাতে দলে থাকতে পারি। শুধু থাকা নয়, দলের সেরা খেলোয়াড় হয়ে যেন থাকতে পারি
চ্যালেঞ্জ থাকলেও মৃত্যুঞ্জয়ের জন্য কাজ সহজ করে দিচ্ছে তার ব্যাটিং সক্ষমতা। ব্যাটিংয়ে ভালো করতে পারলে অন্য বোলারদের চেয়ে এগিয়ে থাকতে পারবেন সেই বিশ্বাস আছে মৃত্যুঞ্জয়ের মধ্যে, ‘পেস বোলারদের কাজ নতুন বলে বোলিং করে এক-দুই উইকেট নেওয়া। মাঝের ওভারে রান আটকানো, শেষের দিকের ওভারে রান না দিয়ে উইকেট নেওয়া। এই কাজগুলো ভালোভাবে করতে চাই। তার সঙ্গে আমার জন্য বাড়তি সুবিধা ব্যাটিং। যদি সেটা ভালো হয়, সেক্ষেত্রে অন্য বোলারদের চেয়ে আমি এগিয়ে থাকব।’
আয়ারল্যান্ড সিরিজের আগে বাংলাদেশ শিবিরে ছিলেন মৃত্যুঞ্জয়। সেখানে নিজের বোলিং নিয়ে কাজ করেছেন কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের সঙ্গে। সেখানে কাজ করায় মানসিকতার উন্নতি হয়েছে সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই তার। ডোনাল্ড ভুলগুলো ধরিয়ে দেওয়ায় সেটা নিয়ে কাজ করতে পেরেছেন।
এই নিয়ে মৃত্যুঞ্জয়ের ভাষ্য, ‘আয়ারল্যান্ড সিরিজের আগে অ্যালান ডোনাল্ডের সঙ্গে সাত দিনের মতো কাজ করেছি। এটা আমার অভিজ্ঞতা বাড়িয়েছে। ডোনাল্ডের সঙ্গে কাজ করার পর মানসিকতার উন্নতি হয়েছে। এটা প্রিমিয়ার লিগে বুঝেছি। দলের জয়েও অবদান রাখতে পারতেছি। এটা আমার জন্য ইতিবাচক।’
আরও পড়ুন :
আইরিশদের বিপক্ষে ইংল্যান্ডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। ইংলিশ কন্ডিশনে উইকেট সব সময় পেসারদের পক্ষে কথা বলে। এই কন্ডিশনে প্রথমবার জাতীয় দলে ডাক পাওয়াকে ‘বোনাস’ হিসেবে দেখছেন। পেসসহায়ক উইকেটে নিজেকে প্রমাণের পর জাতীয় দলে স্থায়ী হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছেন মৃত্যুঞ্জয়।
‘আমার জন্য বোনাস। পেস বোলারদের জন্য এই রকম (পেসসহায়ক) উইকেট তো স্বর্গরাজ্য। চেষ্টা করব সেরাটা দেওয়ার। যারা আমার সঙ্গে যাবে তারাও সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করবে। আমি বেশি চেষ্টা করব, যাতে দলে থাকতে পারি। শুধু থাকা নয়, দলের সেরা খেলোয়াড় হয়ে যেন থাকতে পারি।’
জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর কাকে প্রথমে জানিয়েছেন? সেটা অবশ্য নির্দিষ্ট করে বলেননি মৃত্যুঞ্জয়। তবে প্রথম কোচকেও জানাতে ভুল করেননি। দলে ডাক পাওয়ার পর এখনও কথা হয়নি অধিনায়ক তামিম ইকবালের সঙ্গে। মৃত্যুঞ্জয় বলেন, ‘সবার প্রথমে বাসায় ফোন দিয়ে পরিবারকে জানিয়েছি। কোচ জাফরুল ইসলাম স্যারকে ফোন দিয়ে জানিয়েছি। এই দুজনকে সবার আগে জানানো হয়েছে।’ তামিমের সঙ্গে কথা হওয়া নিয়ে বলেন, ‘প্রিমিয়ার লিগ চলতেছে। জাতীয় দলের খেলা শেষ হওয়ার পর ডিপিএলে ব্যস্ত। এখনও কথা হয়নি। পরে হয়তো কথা হবে।’