হেলাল নিরব
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৩ ২৩:৪১ পিএম
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৩ ২৩:৪৪ পিএম
‘আমিও মুসলিম হব’- লিভারপুলের সমর্থক না হলেও এমন একটি শিরোনাম আপনার চোখে পড়ার কথা। একসময় মাঠেই সমর্থকদের বিশাল একটি অংশ গাইত গানটি, ‘যদি সে তোমার জন্য ভালো হয় তবে আমার জন্যও ভালো। যদি সে আমাদের হয়ে আরও কিছু গোল করে তবে আমরা মুসলিম হতেও রাজি। যদি সে তোমাদের জন্য ভালো হয় তবে সে আমার জন্যও ভালো। যদি সে মসজিদে যায় তবে আমিও সেখানে যেতে রাজি।’
যার খেলা দেখে ইংলিশ সমর্থকরা মাঠে এমন স্লোগান দিতেন, গলা মিলিয়ে গান গাইতেন- তার নাম মোহামেদ সালাহ, মিসরের ফারাও। লিভারপুলের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলস্কোরার। ফুটবল বিশ্বের অন্যতম ফরোয়ার্ড। আরেকটু খোলাসা করে বললে মুসলিমদের একজন সুপারহিরো। যিনি বাঁধা পড়েননি অর্থের জৌলুসে, যাকে টানতে পারেনি ইউরোপের জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশ।
আর পড়ুন : যুক্তরাষ্ট্রে গেলে মেসি বেতন পাবেন ২৯ ক্লাব থেকে!
সালাহ ফুটবলার হিসেবেই নন, একজন আদর্শ মুসলিম হিসেবেও বিশ্বে পরিচিত। মাঠে নামার আগে এখনও তাকে দুহাত তুলে দোয়া করতে দেখা যায়, গোল উদযাপন কিংবা ভালো কিছু পাওয়ার পর সৃষ্টিকর্তার কাছে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে কৃতজ্ঞতা জানান। কখনও মাঠে বা মাঠের বাইরের মানবিক কাজেও সামনের সারিতে থাকেন সালাহ। অলরেডদের হয়ে দুর্দান্ত সব জয়ের সাক্ষী মিসরীয় ফুটবলার নানা সময়ে ঢেলে মানবিক সহায়তা করেছেন, কখনও নিজের পুরো অর্থও তুলে দিয়েছেন দুস্থদের। মোহামেদ সালাহ শুধু মিসরেরই গর্ব নয়। পুরো আফ্রিকা তথা মুসলিম বিশ্বের গর্ব।
ইসলামকে প্রচণ্ডভাবে ধারণ করেন সালাহ। তাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা, তিনি অনুপ্রাণিত করেন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের। তাকে দেখে মুসলিম হয়েছেন এমন রেকর্ডও ভূরি ভূরি। নটিংহ্যাম ফরেস্টের ক্লাবের টিকেটিং বিভাগে কাজ করা বেন বার্ডকে নিয়ে দীর্ঘ একটি ফিচার করেছিল দ্য গার্ডিয়ান। ইংলিশ পত্রিকায় লেখাটিতে বার্ড ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সালাহর বন্দনাই করেছিলেন, মুসলিম হওয়ার পর জানিয়ে ছিলেন সন্তুষ্টির কথাও, ‘সত্যিই সালাহ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমি নটিংহ্যামের মৌসুমের টিকিট হোল্ডার, নিজেকে নিয়ে ভেবেছি। মুসলিম বলে ঘোষণা দিয়েছি। নিজেকে গড়ছি আর তা সালাহর কাছ থেকে পেয়েছি। তার সঙ্গে দেখা করতে চাই, এবং হাত মিলিয়ে শুধু বলতে চাই ‘চিয়ার্স কিংবা শুকরান’।
বিবিসি একবার জানিয়েছিল, সালাহ নিবেদিত মুসলিম। তাই ধর্মচর্চায় কোনো রাখঢাক করেন না। নানা ধরনের ধর্মীয় আচার পালন করতে দেখা যায় তাকে। মাঠে হরহামেশা এর প্রমাণ মেলে। প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়েই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সেজদায় অবনত হন, দুই হাত তুলে মোনাজাত করেন। খেলা শুরুর আগেও দোয়া করেন। যেখানে যান সঙ্গে রাখেন পবিত্র কুরআন। বিমানে ভ্রমণকালে সালাহর কুরআন পড়ার ছবিও একবার বিশ্বজুড়ে ভাইরাল হয়ে যায়। ভ্রমণ, যাতায়াত কিংবা ম্যাচের মাঝে বিরতির সময়েও কুরআন শরিফ পড়তে দেখা যায় তাকে।
সালাহ বলেছিলেন, ‘আমার শরীরে কোনো ট্যাটুর চিহ্ন নেই। কখনও হেয়ারস্টাইল পরিবর্তন করি না। জানিও না কীভাবে নাচতে হয়। এভাবেই খেলা চালিয়ে যেতে চাই।’
চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ফাইনালের আগে সালাহকে নিয়ে কথা উঠেছিল, ম্যাচের আগে তিনি রোজা রাখবেন কি না? অলরেডদের কোচ জুর্গেন ক্লপ তখন কিছু না বললেও ইউরোপের মিডিয়ার খবর ছিল, রোজা ছিলেন সালাহ এবং ফাইনালেও খেলেছিলেন। মুসলিম ফুটবলারদের সুপারহিরোর পর্যায়ে পড়া সালাহ এখনও মাঠে নামেন দোয়া করে, খেলায় দারুণ কিছু অর্জন করলে লুটিয়ে পড়েন সেজদায়। তাকে দেখে কিংবা তার চরিত্রে প্রতিফলিত হয়ে মানুষ এখনও বলে ওঠেন, ‘আমি মুসলিম হব’।