পার্থ রায়
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৩ ১১:৫৩ এএম
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৩ ১২:৫২ পিএম
‘স্পিনবিষে নীল প্রতিপক্ষ।’- এমন শিরোনাম বাংলাদেশ ক্রিকেটে একসময় নিয়মিত ছিল। সময় বদলেছে, স্পিনের পাশাপাশি পেস বোলিংয়েও বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে শক্তিশালী। যার প্রমাণ তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসেন, হাসান মাহমুদ, মুস্তাফিজুর রহমান, খালেদ আহমেদরা। দেশ ও দেশের বাইরে নিয়মিত পারফর্ম করে দলকে জেতাচ্ছেন পেসাররা। জাতীয় দলের এই নিয়মিত পেসারদের বাইরে জাতীয় দলে প্রবেশের অপেক্ষায় আছেন রেজাউর রহমান রাজা, মুশফিক হাসান, রিপন মণ্ডলদের মতো প্রতিভাবান পেসাররা।
দেশের ক্রিকেটে পেসারদের উত্থানের কারণ কী? এমন প্রশ্নের উত্তরই খুঁজেছে প্রতিদিনের বাংলাদেশ। পেস বোলারদের সঙ্গে নিয়মিত কাজ করা সাবেক পেসার নাজমুল হোসেন মনে করেন দেশের ক্রিকেটের অবকাঠামোগত পরিবর্তন আসায় বাড়ছে পেসারদের সংখ্যা। ইনজুরি সমস্যা ও ফিটনেস ধরে রাখতে না পারলে পেসারদের জন্য টিকে থাকাটা সমস্যা হবে বলেও মনে করেন তিনি। বর্তমান পেসাররা সচেতন বলে মনোযোগটা ধরে রাখবে, এমনটাও প্রত্যাশা তার।
বিস্তারিত ব্যাখ্যায় নাজমুল হোসেন বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় যে আমাদের ভালো পেস ইউনিট গড়ে ওঠার কারণ তাদেরকে সব ফরম্যাটে ধারাবাহিকভাবে খেলানো হচ্ছে।’
স্পিননির্ভরতার কারণে নিয়মিত ম্যাচ খেলার সুযোগ না পাওয়ায় আগে পেসাররা নিজেদের প্রমাণ করতে পারেননি। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত ম্যাচ খেলতে না পারার অভিযোগও আছে তার, ‘আগে আমরা স্পিননির্ভর দল ছিলাম ও উইকেটও ওই রকম ছিল। আমরা যখন খেলতাম, তখন উইকেট ছিল স্পিনারদের জন্য। প্রিমিয়ার লিগে দেখা যেত, দুই প্রান্ত থেকে স্পিন দিয়ে আক্রমণ শুরু হচ্ছে।’
ঘরোয়া ক্রিকেটে উইকেটের মানে পরিবর্তন আসায় পেসারদের উন্নতির পাশাপাশি নতুনরাও উঠে আসছে এমনটাই মনে করেন নাজমুল-‘ফার্স্ট ক্লাস ও প্রিমিয়ার লিগে দেখা গেছে নিয়মিত পেসারদের খেলানো হচ্ছে। ফার্স্ট ক্লাসে উইকেট গ্রিন টার্ফ ছিল। এটাই নতুন পেসারদের উৎসাহ বাড়াচ্ছে। এখন সবকিছু পরিবর্তন হয়েছে। প্রতি দলেই ৩-৪ জন নিয়মিত পেসার খেলছে। তাদের জন্য সুবিধাও হচ্ছে।’
পেসারদের এই উন্নতি নিয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন জানান, জাতীয় দল ও পাইপলাইনে পেসারদের সংকট না থাকাকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য স্বস্তির জায়গা। পেসারদের উন্নতির ফলে আন্তর্জাতিক ম্যাচে কন্ডিশনের সুবিধা নিতে হয় না। এটাকেও ইতিবাচক মানছেন তিনি। পাশাপাশি নতুন পেসারদের উঠে আসার জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটকেই কৃতিত্ব দেন তিনি।
হাবিবুল বাশার বলেন, ‘এটা স্বস্তিদায়ক। শুধু নির্বাচকদের জন্য নয়, দেশের ক্রিকেটের জন্য ইতিবাচক ব্যাপার। এর জন্য বিদেশি দলগুলো এলে এখন আর কন্ডিশনের সুবিধা নিতে হয় না। স্পিনের পাশাপাশি পেসাররাও আমাদেরকে সাফল্য এনে দিতে পারছে।’
আরও পড়ুন : দুই রেকর্ডের পরও জিতল বৃষ্টি!
আগের অবস্থান থেকে বর্তমান অবস্থানে আসার পেছনে হাবিবুল বাশারের চোখে কৃতিত্বটা পাচ্ছে ঘরোয়া ক্রিকেট। সর্বশেষ চার-পাঁচ বছরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের উইকেটে পেসারদের সুবিধা থাকায় নতুনদের উঠে আসাটা সহজ হচ্ছে। সেটা জানিয়ে বাশারের ভাষ্য, ‘আমরা যখন খেলতাম, তখন অনেক সময় পেসারদের খুঁজেই পাওয়া যেত না। গত ৪-৫ বছরে উইকেট ভালো হওয়ায় দলগুলো একাদশে নিয়মিত তিন পেসার খেলাচ্ছে। সেখানে থাকা পেসাররাই কিন্তু এখন ভালো করছে।’
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেকে উঠে আসা পেসারদের মান ভালো হওয়ায় দলে বড় ভূমিকা রাখছেন। এমনকি তাদের কারণে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটেও মনোযোগী হতে পারছে বাংলাদেশ, এমনটা বলেন বাশার- ‘এখন পেসাররা মানসম্মত পেসার। ওদের কারণে আমরা আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে পারছি। এমন নয় যে স্পিনাররা থাকলে পারতাম না। পেসারদের কারণে আর কন্ডিশনের সুবিধা নিতে হচ্ছে না। দেশের বাইরেও একই ধারাবাহিকতা রাখতে পারছে।’
তরুণরা কীভাবে পেসার হওয়ার উৎসাহ পেলেন সেটাও জানার চেষ্টা করেছে প্রতিদিনের বাংলাদেশ। তরুণ পেসার রেজাউর রহমান রাজা তার উৎসাহ খুঁজে পেয়েছেন নিজ বিভাগ থেকে। বর্তমানে জাতীয় দলে খেলা এবাদত হোসেন, খালেদ আহমেদ, আবু জায়েদ রাহিরা এসেছেন সিলেট বিভাগ থেকে। তাদের দেখেই উৎসাহিত হয়েছেন সিলেটের আরেক পেসার রাজা। তার মধ্যে ধারণা ছিল, অন্যরা পারলে তিনিও পারবেন, ‘সিলেটে যখন ক্রিকেট খেলতাম এবাদত, রাহি, খালেদ ভাইদের দেখে অনুপ্রাণিত হতাম। ভাবতাম আমাদের বিভাগের ওনারা খেলতে পারলে আমি কেন পারব না।’
শুধু সিলেট বিভাগের পেসাররা নন, তাসকিন আহমেদ-মুস্তাফিজুর রহমানরাও তার জন্য অনুপ্রেরণার নাম। তাদের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হলেও টেপ টেনিস বলে পেস বোলিং করায় পেসার হওয়ার সুপ্ত বাসনাও কাজ করেছে তার মধ্যে।
তিনি বলেন, ‘ক্যারিয়ারের শুরুতে যখন তাসকিন-মুস্তাফিজ ভাইরা ভালো করছিলেন তখন ওদের দেখে মনে হইছিল পেস বোলার হব। টেপ টেনিসে সব সময় পেস বল করতেই ভালো লাগত। ওইখান থেকে আসলেই পেসার হওয়ার ইচ্ছা জাগে।’
অনেক পেসার ভালো করায় জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটা কঠিন সেটা মানেন রাজা। তবে চ্যালেঞ্জটা নিজের সঙ্গেই নিতে চান। অন্যদের সঙ্গে টেক্কা দেওয়াটাই নিজের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ নেওয়াকে বুদ্ধিমানের মনে করেন।
রেজাউর রহমান রাজা এই নিয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ তো নিজের সঙ্গে। অন্যদের মধ্যে নিজেকে প্রমাণ করতে হলে আসলে নিজেকে নিজের চ্যালেঞ্জ দিতে হবে। ওই চ্যালেঞ্জ পার করতে পারলেই প্রমাণ করা যাবে। এত পেসারের মধ্যে নিজেকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে পার হতে পারলেই এগিয়ে থাকা যাবে।’