× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

হার্ডলাইন থেকে সরল বিএনপি

বাছির জামাল

প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৩ ০৯:০৯ এএম

আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৩ ১৪:১০ পিএম

হার্ডলাইন থেকে সরল বিএনপি

হার্ডলাইন থেকে সরল বিএনপি

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ঢাকার কয়েকটি প্রবেশমুখে সংঘর্ষমুখর অবস্থান কর্মসূচির এক দিন পর আজ সোমবার সারা দেশে প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ ও ক্ষমতাসীনরা একযোগে হামলা করেছে দাবি করে এর প্রতিবাদে ঢাকা মহানগরসহ সকল মহানগর ও জেলা সদরে জনসমাবেশের ডাক দিয়েছে দলটি।

রাজধানীকেন্দ্রিক লাগাতার কর্মসূচির জন্য মহাসমাবেশকে উপলক্ষ করে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের জড়ো করে আবার মহানগর ও জেলায় জেলায় ফিরে যাওয়া- এটাকে অনেকেই এক দফা আন্দোলনের টানা কর্মসূচি থেকে বিএনপির সরে যাওয়া হিসেবে দেখছেন। অবস্থান কর্মসূচির মতো ‘কঠোর’ কর্মসূচির পর প্রতিবাদ সমাবেশের মতো ‘নরম’ কর্মসূচি দেওয়ায় দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে হতাশা। তাদের প্রশ্ন, আন্দোলনের হার্ড লাইন থেকে বিএনপিকে এক দিনের মাথায় কেন সরে দাঁড়াতে হলো? 

অন্যদিকে সরকারি দলের নেতা এবং সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য কঠোর আন্দোলন করে সরকারকে হটানোর মতো সক্ষমতাই নেই বিএনপির, ফলে তারা ঘোষণা দিয়েও পিছু হটেছে। যদিও বিএনপির কয়েকজন নীতিনির্ধারক সেটা মানতে নারাজ। তারা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেছেন, রাজনীতিতে হার্ড লাইন সফট লাইন বলে কিছু নেই। আন্দোলনের কর্মসূচি আসে পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে। সেভাবেই কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। 

এদিকে ঢাকার প্রবেশমুখে শনিবারের অবস্থান কর্মসূচিকে ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি আলোচিত হয়। সেখানে মহাসমাবেশে ব্যাপক লোকসমাগম হলেও অবস্থান কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের তেমন উপস্থিতি না থাকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ নিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা যায়। 

গত ১২ জুলাই রাজধানীতে বড় সমাবেশ করে সরকার হটানোর এক দফার আন্দোলন ঘোষণা করে বিএনপি। একই দিন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন করে একই ঘোষণা দেয় বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র জোট ও দলগুলো। এরপর ২৮ জুলাই শুক্রবার রাজাধানীতে বড় মহাসাবেশ করে বিএনপি। পুরো সময়জুড়েই নানা বক্তৃতা-বিবৃতিতে সরকারকে আর ছাড় না দিয়ে আন্দোলনকে কঠোর করে লক্ষ্য অর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

শুক্রবারের মহাসমাবেশে বিএনপি নেতারা যে বক্তব্য দেন তার সারমর্ম হচ্ছে, মহাসমাবেশ উপলক্ষে সারা দেশ থেকে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীরা সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত ঢাকায় থেকে আন্দোলন-কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। মহাসমাবেশের সভাপতি দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে বলেন, বিএনপি ঢাকায় কোনো কর্মসূচি করলে চিঠি দিয়ে পুলিশকে অবহিত করত। কিন্তু এখন আর এটাও করবেন না তারা।

আরও পড়ুন: বিএনপির জনসমাবেশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শনিবার ঢাকায় যে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয় সে ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন ‍পুলিশকে (ডিএমপি) জানায়নি বিএনপি। ফলে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গেলে বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ এবং ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে দলটির অন্যতম নীতিনির্ধারক গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ প্রায় ৫০০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। ঘটনার পর রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৫৪৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অন্তত ১৬টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় অন্তত ১৪৯ বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এদিন বিকালেই গুলশানে দলটির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক বসে। এতে ভার্চুয়ালি লন্ডন থেকে যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মহাসমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের ঢাকায় রাখা হয়েছিল রাজধানীর কর্মসূচিতে উপস্থিতির সংখ্যা বাড়িয়ে আন্দোলনকে পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু শনিবার ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি সেই তুলনায় ভালো হয়নি। 

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলাও দেওয়া হয়, এতে হঠাৎই চাপে পড়ে গেছে বিএনপি। তাদের মতে, সরকার পুরোনো কৌশলে তাদেরকে চাপে ফেলার চেষ্টা করছে। 

এ ছাড়া অবস্থান কর্মসূচি সম্পর্কে জানতেন না স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্য। কোনো বিরতি ছাড়া মহাসমাবেশের পরদিনই অবস্থান কর্মসূচি দেওয়ায় অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। স্থায়ী কমিটির এসব সদস্য ধারণা করেছিলেন, কর্মসূচি শুরু হবে রবিবার থেকে। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির মূল্যায়ন হচ্ছে, বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে থাকলেও সরকার ও সরকারি দল তাদের অবস্থান কর্মসূচিকে ঘিরে পুরোনো কৌশল অবলম্বন করেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও বিএনপির আন্দোলনকে ঘিরে সরকার একই কৌশল নিয়েছিল। 

স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, বিএনপি অবস্থান কর্মসূচির পর উদ্ভূত পরিস্থিতির চাপ কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে কৌশল পরিবর্তন করেছে। সে অনুযায়ী ঢাকাসহ সারা দেশে জনসমাবেশের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ঢাকায় মহাসমাবেশকে ঘিরে সারা দেশ থেকে আসা নেতাকর্মীদের ফের তৃণমূলে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আপাতত কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে ঘুরেফিরে নানা কর্মসূচি পালিত হবে। সরকারের অবস্থান দেখে কৌশল বদল করে কর্মসূচিও নির্ধারণ করা হবে। 

এ ব্যাপারে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু অবশ্য বলেন, আমরা মহাসমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচিগুলোর অ্যাসেসমেন্ট (মূল্যায়ন) করেছি। আমাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে- এসব কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের নেতাকর্মীদের মনোবল বেড়েছে। তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এ রকম চলতেই থাকবে।

আরও পড়ুন: এত ক্ষুধা রাজনৈতিক নেতার, গয়েশ্বর চন্দ্রকে ওবায়দুল কাদের

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘হার্ড-সফ্ট বলে কোনো কথা নাই এখানে। আন্দোলন তো আন্দোলনই। সরকারের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন তাতে যখন যে কর্মসূচি প্রয়োজন তা দেওয়া হবে।’ 

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও এরকম মতই পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে হার্ড লাইন বা সফ্ট লাইন বলতে কিছু নাই। আমরা আন্দোলনে আছি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক ধারায় আন্দোলন করছি। হার্ড লাইনে আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারা আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে পুলিশের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী ক্যাডারবাহিনীও মাঠে নামিয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলনে আছি। কর্মসূচিকে কখনও মনে হবে কঠোর, কখনও সফ্ট। এটা আন্দোলনেরই নিয়ম।’ 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা