মডেল : নিশাত; পোশাক : সারা লাইফস্টাইল; মেকআপ : রাজিয়া’স মেকওভার; ছবি : ফারহান ফয়সাল
সেই একঘেয়ে একই প্যাটার্নের পোশাক নয়। প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের কাটছাঁটের মিশেলে বৈচিত্র্যময় ও ট্রেন্ডি পোশাকের চল এখন। এ ধরনের পোশাক পরতে পছন্দ করছেন সবাই। সময়টা চলছে ফিউশনের
ফ্যাশন ও স্টাইলের নেই কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম। কালের আবর্তে তা পরিবর্তিত হয়। কখনও ঘুরে-ফিরে আসে পুরোনো ধারা, কখনোবা সেই সঙ্গে যোগ হয় নতুন কিছু। আবার দেশীয় ও পশ্চিমা ধাঁচ মিলে তৈরি করা হচ্ছে পোশাক। এমন ভিন্ন দুটি ধারার সমন্বয়ের মাধ্যমে আরেকটি ধারা বা দুটির ফিউশন দেখা যায় এখন পোশাকে। কারণ এ প্রজন্মের ফ্যাশনপ্রেমিরা একি ধাঁচের পোশাক পরতে খুব একটা পছন্দ করেন না। নির্দিষ্ট কোনো গণ্ডির মধ্যে তারা আটকে থাকতে চান না। তাই তো সব বয়সিরাই প্রতিনিয়ত তৈরি করছেন নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্ট। আর এই স্টাইলে যোগ হচ্ছে ফিউশন পোশাক। কারণ এই পোশাকের কাটছাঁটে থাকে বৈচিত্র্য, সঙ্গে দেয় স্টাইলিশ লুক।
ফ্যাশন সচেতনদের কাছে দেশীয় পোশাক যেমন পছন্দের, একই সঙ্গে তারা পছন্দ করেন ওয়েস্টার্ন পোশাক। তবুও হালের চাহিদায় এখন এগিয়ে ওয়েস্টার্ন পোশাক। রোজকার ক্যাম্পাস, অফিস কিংবা পার্টিতে যা মানিয়ে যায়। এই সময়ে রঙিন সব ওয়েস্টার্ন পোশাক পরতেই বেশি পছন্দ করছেন তরুণীরা। তারা ফিটিং টিউনিক টপস, শার্ট, স্টাইলিশ কুর্তা বেছে নিচ্ছেন অনায়াসেই। জনপ্রিয় ওয়েস্টার্ন পোশাকের মধ্যে কয়েকটি হলো- গাউন, টপ, স্কার্ট, শার্ট, জিন্স, কো-অর্ড, কেপ ইত্যাদি। শুধু তরুণীরাই নয়, সব বয়সি নারীরাই পছন্দ করেন ফ্যাশনেবল কালারফুল টপস বা কুর্তা। টপসের দৈর্ঘ্য আগের তুলনায় দিন দিন বাড়ছে। দেশীয় প্যাটার্নের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ওয়েস্টার্ন কাট। আগে শর্ট টপসের প্রচলন বেশি থাকলেও এখন হাঁটু সমান বা তার থেকে লম্বা টপসের প্রচলন দেখা যায়। কোনোটা আবার সামনের দিকে হাঁটু সমান দৈর্ঘ্যের হলেও পেছনে ঝুলটা হয়তো পা পর্যন্ত লম্বা। একেবারে সাধারণ কাটের টপস যেমন আছে, তেমনি নিচের দিকে কুচি দিয়ে ডিজাইন করা টপসও মেলে। টপস বেশ ঢিলেঢালা হওয়ায় গরমে স্বস্তি দেয়। কিছু টপসে আবার কোমরের কাছে ইলাস্টিক দেওয়া থাকে। ফলে এটি শরীরে গঠনের সঙ্গে মানিয়ে যায়। ফ্যাশনে ভিন্নতার জন্যই মূলত টপস অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া যেকোনো পরিবেশের সঙ্গেই মানিয়ে যায়।
বর্তমানে কো-অর্ড অনেক বেশি জনপ্রিয়। টু-পিস সেট নামেও পরিচিত। এটি এমন একটি পোশাক, যা একই রঙ এবং প্রিন্টের কাপড় দিয়ে তৈরি। এটি আসলে ম্যাচিং টপ টু বটমের সমন্বয়। কো-অর্ডের সেট একসঙ্গে পরার জন্যই ডিজাইন করা হয়। এতে কোন সালোয়ার বা জামার ম্যাচিং করবেন, তা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। কো-অর্ড সেটটি হতে পারে একই রকম টপ ও প্যান্ট। প্রিন্টেড হোক বা সলিড কালার- ট্রেন্ডে এখন এদেরই রাজত্ব। একরঙা বা মনোক্রোমের ক্ষেত্রে পিচ কালার, হট পিংক, সাদা-কালো-ধূসর প্যালেট, হলুদ আর প্যাস্টেল শেডের কো-অর্ড বেছে নিচ্ছেন অনেকে। প্রিন্টের ক্ষেত্রে ফুলেল নকশা বেশি দেখা যায়। নিত্য ব্যবহারের জন্য এই পোশাক বেশ আরামদায়ক। পার্টি-লুকে একরঙা ঝলমলে ফেব্রিকের কো-অর্ড পোশাক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আবার নিত্যদিনে পরার জন্য একরঙা জর্জেট ওয়েস্টার্ন সেট হতে পারে আদর্শ। এতে কাপড় পরার আগে আয়রন করার ঝামেলা থাকে না। আবার ঢিলেঢালা হওয়ায় গরমে পরে আরাম পাওয়া যায়।
স্কার্টের আবেদন সবসময়ই ছিল। আরাম ও স্টাইলের কথা চিন্তা করে এখন অনেক তরুণীই পরছেন স্কার্ট। প্রতিদিনের পোশাক হিসেবে লম্বা ঘের দেওয়া স্কার্ট, কখনোবা বেছে নিচ্ছেন হাঁটু থেকে একটু লং স্কার্ট। যেকোনো পার্টি কিংবা ঘুরতে যাওয়ার জন্য এটি বেশ মানানসই একটি পোশাক। এর কাটছাঁটে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। বেশিরভাগ সময় দেখা যায় রুমাল ছাট আবার আছে কুচি দেওয়া স্কার্টও। লং স্কার্টের মধ্যে স্ট্রেট কাট যেমন চলছে, তেমনি বেশি ঘেরওয়ালা স্কার্টও জনপ্রিয়। বিভিন্ন ধরনের কাপড়ে তৈরি হয় স্কার্ট। তবে প্রিন্টেড বা একরঙা সিল্ক, জর্জেট ফেব্রিকের স্কার্ট পরা যায় সবখানে। একই কাপড় ও রঙের স্কার্ট-টপে যেমন সুন্দর দেখায়, তেমনি ভিন্ন রঙের স্কার্ট-টপও দেয় ট্রেন্ডি লুক।
ফ্যাশন হাউস সারার সাব-ব্র্যান্ড ঢেউয়ে তরুণদের জন্য রয়েছে পশ্চিমা পোশাকের সম্ভার। যেখানে মিলবে টপস, গাউন, স্কার্ট, ক্যাজুয়াল শার্ট, সামার ব্লেজার, কো-অর্ড সেট, কাফতান, পার্টি ড্রেস ইত্যাদি। ওয়েস্টার্নের মধ্যে লং ও শর্ট দুই ধরনের পোশাকই রয়েছে ব্র্যান্ডটির। পোশাকের ফেব্রিকও আরামদায়ক। ওয়েস্টার্ন প্যাটার্নে সিনথেটিক ফেব্রিকের পোশাকের চাহিদা এখন বেশি। একটু চকচকে কাপড়ের পোশাক দেখতে সুন্দর লাগে। ঢেউয়ের পোশাকগুলোর ফেব্রিক হিসেবে আছে জর্জেট, সিল্ক, ক্রেপ জর্জেট, ক্রেপ সিল্ক, ভিসকস প্রভৃতি। এখন একটু ঢিলেঢালা প্যাটার্ন চলছে। ছোট ছোট কিছু প্যাটার্নের ভিন্নতা, বাঁধনি স্টাইল ও টারসেল দিয়ে পোশাকে বৈচিত্র্য এনেছে হাউসটি। কাটছাঁটে আছে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মিশেল। পোশাকগুলোয় ব্যবহৃত মোটিফের মধ্যে রয়েছে অ্যাবস্টাক্ট, ফ্লোরাল ও ট্রিপিক্যাল। তবে পোশাকের নকশায় খুব ভারী কারুকাজ দেখা যায়নি। বরং ছোট ছোট করা নকশা যেমন- সামান্য এম্ব্রয়ডারি, বিটস ওয়ার্ক, লেস ওয়ার্ক, প্রিন্ট ইত্যাদি পোশাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। হাউসটির প্রধান ডিজাইনার শামীম রহমান জানান, কিছুদিন আগেও গরমের মধ্যে কালো রঙের পোশাক কম দেখা যেত। এখন আর ঋতুর বাছ-বিচার নেই। ফ্যাশনপ্রেমিরা সব ঋতুতেই বেছে নিচ্ছেন কালো রঙের পোশাক। অন্যদিকে কালো রঙ দেয় বোল্ড আর এনার্জেটিক লুক, যা তরুণরা অনেক বেশি পছন্দ করে। তাই ঢেউয়ের পোশাকে কালো রঙকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। পোশাকগুলো বেশ ঢিলেঢালা আর ফেব্রিক আরামদায়ক হওয়ায় গরমে দেবে স্বস্তি। হাউসটিতে একই ডিজাইনের পোশাক ভিন্ন ভিন্ন রঙেও মিলবে।
ফিউশন ধাঁচের ওয়েস্টার্ন পোশাক মেলে ফ্যাশন হাউস লা রিভে। টপস, কুর্তি, স্কার্ট, টিউনিক রয়েছে নানা কাট ও প্যাটার্নের পোশাক। যা সব বয়সি মানুষকে মানিয়ে যায় সহজেই। এ ছাড়া ফ্যাশন হাউস ইয়েলো, কিউরিয়াস, ক্লাব হাউসেও রয়েছে নানা ঢঙের ওয়েস্টার্ন পোশাক। দেশীয় ও পশ্চিমা ধাঁচের এসব ফিউশন পোশাক পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন অনেকে। অফিস, ক্যাম্পাস কিংবা পার্টি সবখানের পরা যায় পোশাকগুলো । নিউটাল সলিড কালার আবার কখনও প্রিন্ট মোটিফে পোশাকগুলো সময় উপযোগী করেই তৈরি করছেন হাউসগুলোর ডিজাইনাররা।
ফিউশন পোশাকে সাজ ও অনুষঙ্গ
পশ্চিমা পোশাকের সঙ্গে সাজসজ্জা হতে হবে মানানসই। প্রতিদিনের হাল ফ্যাশনে যদি ওয়েস্টার্ন পরেন তাহলে সাজগোজ হবে একদম সীমিত। অফিসের জন্য ফরমাল প্যান্ট-শার্ট পরলে করতে পারেন মিনিমাল মেকআপ। একেবারে নুড বেজের মেকআপের সঙ্গে পরুন হালকা গয়না। চোখে চিকন করে লাইন টেনে আইলাইনার দিয়ে হালকা লিপস্টিক সারাদিনের জন্য আদর্শ হবে। আর পার্টি কিংবা বন্ধুদের আড্ডায় একটু বোল্ডভাবে নিজেকে চাইলে উপস্থাপন করতে পারেন। তবে এখন বেশ গরম, তাই মেকআপের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা খেয়াল রাখতে হবে। ওয়েস্টার্ন পোশাকে চুল রাখতে পারেন ইচ্ছেমতো। খোলা চুল সব কিছুতে মানিয়ে যায়। তবে গরমে চুল বেঁধে রাখলে বেশি স্বস্তিতে থাকবেন। এ ক্ষেত্রে সামনের চুলগুলো টুইস্ট করে নিতে পারেন। আবার ওয়েস্টার্নের সঙ্গে পনিটেইল সুন্দর দেখায়। তাই একটু উঁচু করে পনিটেইল বেঁধে নিতে পারেন। যদি চুল খোলা রাখতে চান তাহলে হালকা কার্ল করে নিলে সুন্দর দেখাবে। অনুষঙ্গ হিসেবে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে যেকোন কানের দুল পরতে পারেন। চাইলে হাতের জন্য মানানসই ব্রেসলেট ও ঘড়ি বেছে নিতে পারেন। আর এ ধরনের পোশাকে একটু হিল ধরণের জুতা দেখতে সুন্দর লাগে। পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে বা কন্ট্রাস্ট করে আরামদায়ক হিল জুতা বেছে নিতেই পারেন। তবে এখন অনেকেই সব ধরণের পোশাকের সঙ্গে নেকার্স পরতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। জিনস টপসের সঙ্গে সেটি পরতে পারেন। মনে রাখবেন পোশাক এবং অনুষঙ্গের মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব ও রুচির বহিঃপ্রকাশ হয়। তাই হাল ফ্যাশনের ট্রেন্ড শুধু নয়, নিজের পছন্দ আর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানায় এমন পোশাক এবং অনুষঙ্গ বেছে নেয়া উচিত।