স্নিগ্ধ সাজে সারাবেলা

উৎসব ও মেকআপ- রয়েছে একটির সঙ্গে অন্যটির সম্পর্ক। প্রতিটি উৎসবকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয় আলাদা মেকআপ ট্রেন্ড। এ বছর ঈদ যেহেতু গরমে, তাই সাজ ও চুলের স্টাইল হবে একদম স্নিগ্ধ

ঈদের দিন মানেই নতুন পোশাক, মায়ের হাতের সেমাই ও বাহারি সব খাবার, পরিবারের সবাই মিলে ভিন্ন আবেশ ও আনন্দে পরিপূর্ণ। সেই আনন্দের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় পোশাক ও সাজে। তাই তো ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই ঘর থেকে শুরু করে সবকিছু করা হয় পরিপাটি। বাইরে যাওয়া হোক বা না হোক, ঈদের দিনে নতুন পোশাক পরে সুন্দর করে সাজেন সবাই। সকালেই একটা লুক তৈরি করে ফেলেন এবং দিনের বাকি সময়ও সেই ধারা বজায় থাকে। এবারের ঈদ বৈশাখের তীব্র গরমে। তাই পোশাক এবং সাজ হতে হবে স্নিগ্ধ। বেশ কয়েক বছর ধরেই ম্যাট ও মিনিমাল মেকআপ ট্রেন্ড চলছে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। একদম সিম্পল ন্যুড মেকআপ মানিয়ে যায় সবকিছুতে।

মসৃণ বেজ

ঈদের দিন সকালে একদম হালকা ন্যুড মেকআপ করে নিতে পারেন। প্রথমে মুখে ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করে প্রাইমার লাগিয়ে নিতে হবে। প্রাইমার ব্যবহার করলে এর পরের ধাপের মেকআপগুলো মুখে সুন্দরমতো আপ্লাই করা যাবে। মুখে যদি দাগ কিংবা ডার্ক সার্কেল থাকে, তা হলে ব্যবহার করতে পারেন কনসিলার। এর পর ওয়াটার বেইড ফাউন্ডেশন মুখে ভালো করে ব্লেন্ডার বা ফাউন্ডেশন ব্রাশ দিয়ে লাগিয়ে নিন। ব্রোঞ্জার দিয়ে গাল, চোয়াল এবং নাকে কন্টোরিং করে নিতে পারেন। পছন্দের ফেস পাউডার কিংবা লুজ পাউডার ব্যবহার করতে হবে। এরপর সেটিং স্প্রে দিয়ে মেকআপটা ভালোমতো সেট করে নিতে হবে। হালকা পিঙ্ক কিংবা পিচি পিঙ্ক ব্লাশন লাগিয়ে নিন। এতে একদম ন্যাচারাল একটা লুক আসবে। সকালে যদি ভালোমতো একটা লুক ক্রিয়েট করা যায়, তা হলে সারা দিনে সেই ধারাটা থাকবে। বিকালের দিকে যদি কোথাও ঘুরতে বের হতে হয়, তা হলে এর ওপর হালকা টাচআপ করেই বেরিয়ে পরতে পারবেন। আর রাতে কোনো দাওয়াতে গেলে পছন্দের পোশাকের সঙ্গে একটু ডিপ মেকআপ লুক তো নেওয়াই যায়। সে ক্ষেত্রে একটু ভারী ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে পারেন। তবে যদি ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে না চান ফেস পাউডার ভালো করে মুখে লাগিয়ে হিালকা ব্লাসন দিতে পারেন।

আরও পড়ুন : কুর্তি কামিজে আধুনিক

চোখের মেকআপ

মেকআপের সুন্দর বেজের পরই সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় চোখের সাজে। কেননা চোখের মেকআপের ওপর পুরো সাজটা নির্ভর করে। ঈদের দিনে চোখের মেকআপ করতে বেছে নিতে পারেন হালকা ব্রাউন শেড। ক্রিজ লাইনে ব্রাউন শ্যাডো দিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এর পর অ্যাইলিডে পিচ পিঙ্ক রঙের হালকা শ্যাডো লাগিয়ে নিতে পারেন। চোখের ইনার কর্নার ও ভ্রুর নিচে লাগিয়ে নিন হাইলাইটার। চোখের পাতায় একদম চিকন লাইন টেনে নিতে পারেন। আর আইল্যাশে লাগিয়ে ফেলুন মাসকারা। সকালের স্নিগ্ধ সাজে যেকোনো পোশাকে মানিয়ে যাবে এই আই লুক। চাইলে চোখের পাতায় একদম সিম্পল ন্যুড শ্যাডো দিয়ে কালার আইলাইনার অ্যাপ্লাই করা যেতে পারে। বিকালে কিংবা রাতের কোনো দাওয়াতে চোখের সাজে ন্যুড মেকআপ রাখতে পারেন। চাইলে পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়েও করতে পারেন আই লুক। তবে একদম সাধারণ মিনিমাল মেকআপ রাখলেই ভালো।

রঙিন ঠোঁট

ঠোঁটে ন্যুড লিপস্টিকের ট্রেন্ড চলছে অনেক দিন। সেটি হতে পারে পিংক ন্যুড কিংবা ব্রাউন ন্যুড। যা মানিয়ে যায় যেকোনো পোশাকে। তবে চোখের সাজ ও ঠোঁটের সাজে রাখা উচিত সামঞ্জস্য। চোখে ন্যুড মেকআপ হলে ঠোঁটে একটু বোল্ড ডিপ রঙের লিপস্টিক লাগাতে পারেন। তবে চোখে ভারী মেকআপ আবার ঠোঁটে ডিপ রঙের লিপস্টিক না দেওয়ায় ভালো। চোখে বেশি মেকআপ যদি করেন, তা হলে ঠোঁট রাঙিয়ে নিন হালকা রঙের লিপস্টিকে। ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার করুন। তা হলে দেখতে সুন্দর লাগবে। 

চুলের সাজ

পোশাক আর মেকআপ ছাড়াও ঈদের সাজে পরিপূর্ণতা আনে চুলের বাঁধন ও সজ্জা। এবারের ঈদ গ্রীষ্মের দাবদাহপূর্ণ সময়ে। তাই চুলের সাজে আরাম ও স্টাইল দুই-ই সমান গুরুত্ব পাচ্ছে বলেন রেড বিউটি সেলুনের রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভিন। চুলের সাজের আছে বহু ধরন। ঈদ বা অন্য উৎসবে খুব সাধারণভাবে নয়, বরং চুল বাঁধার আগে গুরুত্ব পায় ট্রেন্ড ও ফ্যাশনের বিষয়। হেয়ারস্টাইলিংয়ের যেমন রয়েছে নানা আন্তর্জাতিক ট্রেন্ড, তেমনি রয়েছে দেশীয় ঐতিহ্যবাহী চুল বাঁধার নানা ধরন। আবার এই দুইয়ের মিশেলে ফিউশনধর্মী অভিনব কিছু স্টাইলও করা যায়। তবে যে স্টাইলই হোক, আরামের দিকটা খেয়াল করতে হবে।

বেণির স্টাইল : সবচেয়ে আরামদায়ক হেয়ারস্টাইল বলা হয় বেণিকে। তবে ঈদে সাধারণ বেণি নয়, বাঁধনে যোগ করতে হবে স্টাইল। চুল মাঝ থেকে কিংবা একদিকে সিঁথি করে নিন। সামনের দিকে সিঁথির পাশ ধরেই চুলকে তিন ভাগে ভাগ করে বেণি করা শুরু করুন। এক-দুইটা বাঁধন দেওয়ার পর বাকি চুলগুলো থেকে অল্প কিছু চুল নিয়ে আগের বেণির সঙ্গে মিলিয়ে আবার বেণি করতে হবে। এভাবে দুইপাশে বেণি করে কানের কাছ পর্যন্ত এনে ক্লিপ দিয়ে সেট করে নিন। পিছনে চুলগুলো খুলে রাখতে পারেন। ঈদের দিনে সকালে চুলের এই স্টাইল মানিয়ে যাবে যেকোনো পোশাকে। 

বেণি খোঁপার যুগল : একদিকে সিথি করে ওপর থেকে একপাশে চুলগুলো বেণি করে কানের নিচ পর্যন্ত এসে সব চুল নিয়ে আবার বেণি করতে হবে। একসাইডে এবার বেণি করা চুল দিয়ে খোঁপা করে নিতে হবে। 

খোঁপা : চুল মাঝ থেকে সিঁথি করে নিতে হবে। এবার চুলগুলো পেছন দিকে ভালো করে আঁচড়ে একটা খোঁপা করে নিতে হবে। আবার সিঁথি না করে চুলগুলো ওপর দিকে ভালো করে আঁচড়ে একটু উঁচু করে বেঁধে নিতে পারেন। এরপর বেণি করে একটা খোঁপা করে নেওয়া যায়। শাড়ি, থ্রিপিস সবকিছুতে মানিয়ে যাবে এই হেয়ার স্টাইল।