ঈদকে কেন্দ্র করে চলে নিত্যনতুন পোশাকের আয়োজন। এবার ঈদেও তার কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। ফ্যাশন হাউসগুলোতে মিলছে নানা রঙ ও ঢঙের ঈদের পোশাক। শাড়ি-থ্রিপিসের সম্ভার তো রয়েছেই, পিছিয়ে নেই কুর্তি কামিজও
ফ্যাশন অঙ্গনে প্রতিনিয়ত দেখা যায় পরিবর্তনের ধারা। যেকোনো উৎসবকে ঘিরে সেই ধারাতে যুক্ত হয় অনেক নতুনত্ব। ঈদে এই ধারা থাকে সব থেকে বেশি। কেননা সারা বছর ডিজাইনারা যা পরিকল্পনা করেন তার প্রতিফলন দেখা যায় ঈদে। তাই তো ঈদ এলেই সব ফ্যাশন হাউসে মেলে নানা ধরনের পোশাক। শাড়ি, থিপিস, কুর্তি, কামিজ- রয়েছে সব কিছু। তরুণ প্রজন্ম থেকে মধ্যবয়সি সবার ঝোঁক বেশি এখন কুর্তি কামিজে। কারণ কুর্তি বা কামিজ পরা যায় ইচ্ছেমতো সালোয়ার, লেগিংস বা প্যান্টের সঙ্গে। এ ছাড়া থাকে মিলিয়ে ওড়না বেছে নেওয়ার সুযোগও। তাই এক কুর্তি বা কামিজে আনা যায় ভিন্ন ভিন্ন লুক। আবার একটি থিপিস কেনার খরচে কেনা যেতে পারে একাধিক কুর্তি বা কামিজ। আর এই পোশাকে এখন ফিউশন দেখা যায় সব থেকে বেশি। কাটছাঁট, নকশা সব কিছুতে তাই কুর্তি-কামিজ এখন বেশ এগিয়ে।
ঈদকে কেন্দ্র করে দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো এনেছে নানা ধরনের কুর্তি। হাঁটুর নিচ পর্যন্ত লং, হাঁটু পর্যন্ত লং কিংবা আরও ছোট ঝুলের কুর্তি মিলছে। ফ্যাশন হাউস বিশ্বরঙের স্বত্বাধিকারী বিপ্লব সাহার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল টিনএজ থেকে মধ্য বয়সি সবার জন্য উপযোগী করেই এবার কুর্তি ও কামিজের ডিজাইন করেছেন। তিনি বলেন, কিছু কাজ আছে ম্যাটেরিয়াল-নির্ভর। যেখানে পোশাকের কাপড়টাই অনেক সুন্দর। এমন গর্জিয়াস ম্যাটেরিয়ালে খুব সিম্পল কাজেও পোশাক দেখতে অনেক আকর্ষণীয় হয়। আবার কিছু আছে সাধারণ কাপড়, কিন্তু তাতে এমনভাবে অর্নামেন্টেশন করা হয়েছে, যা দেখতে অনেক গর্জিয়াস।
কুর্তির কাটছাঁটে এবার দেখা মিলছে বেশ বৈচিত্র্য। কামিজ কাট, ফ্রগ কাট, পাঞ্জাবি কাট, ফিউশন কাটের সিঙ্গেল কামিজ এখন অনেক ট্রেন্ডি। নতুন ঢঙের এসব কুর্তি কামিজ দেখতে নান্দনিক। ডিজাইনে দেখা মিলছে প্রিন্ট, ইয়ক, কারচুপি, অ্যাম্বইডারির কাজ। কামিজে অ্যাম্বইডারি বা প্রিন্টের কাজ খুব বেশি হলে দেখতে একটু বেমানান লাগে। বডিতে প্রিন্টের ওপর হালকা অ্যাম্বইডারির কাজ দেখা যাচ্ছে কিছু পোশাকে। কুর্তিতে সামনে বেশি ঘের, পেছনে কম বা সামনের দৈর্ঘ্য থাকছে কম, পেছনে লম্বা ঘের নেমে যাচ্ছে এমন প্যাটার্ন বেশ চলছে। কামিজটা হয়তো পাঞ্জাবি কাট, কিন্তু পুরোপুরি পাঞ্জাবি নয়। যা কামিজ আর পাঞ্জাবির আদলে। আবার সামনের অংশ কামিজের মতো হয়তো স্লিভটা ফ্রগের মতো কুচি দিয়ে। এমন নানা প্যাটার্নের কুর্তি দেখা যাচ্ছে সব ফ্যাশন হাউসে। কিছু কামিজে দেখা যাচ্ছে লেয়ার কাট। বেশ কয়েক বছর ধরে কটি সিস্টেম জনপ্রিয়। এবারও থাকছে এমন পোশাক। কিছু কামিজ আছে দুই পার্টের। আবার কতগুলো করা হয়েছে তিন পার্টের। এগুলো পার্টিতে বেশ মানানসই। ফেব্রিক হিসেবে আরামের দিক বিবেচনা করেই সব হাউস পোশাক এনেছে। যার মধ্যে ব্যবহার হয়েছে সুতি ভয়েল, তাঁত কাপড়, ভিসকস, এন্ডি সিল্ক, সিল্ক, শিফনের মতো আরামদায়ক ফেব্রিক। তবে বাজার ঘুরে বেশি চোখে পড়ল ভয়েল এবং ভিসকস ফেব্রিকের পোশাক। দুই-তিনটা কাপড়ের কম্বিনেশনেও মিলবে কুর্তি। প্রিন্ট, টাই ডাই, ভেজিটেবল ডাই, অ্যাম্বইডারি, সিকোয়েন্স লেস, বর্ডার ডিজাইন এমন অনেক ডিজাইন স্থান পেয়েছে কুর্তিতে। প্রিন্টের সঙ্গে টাই ডাই, প্রিন্টের সঙ্গে ভেজিটেবল ডাই, প্রিন্টের সঙ্গে অ্যাম্বইডারি এমন যুগলবন্দি কাজ পোশাকে এনেছে ভিন্ন মাত্রা। কিছু কুর্তিতে গরজিয়াস লুক দিতে ব্যবহার হয়েছে রিবন। এ ছাড়া গোল্ড প্রিন্ট, ফয়েল প্রিন্টের ব্যবহার পোশাকে বেশ নান্দনিকতা যোগ করেছে। কামিজ এবং কুর্তিতে আলপনা ডিজাইন, ফুলেল নকশা, স্টাইপ, ডট, কাঁথা মোটিফের দেখা মিলছে। এ ছাড়া জ্যামিতিক প্রিন্ট, ইসলামিক প্রিন্ট, জিওমেট্রিক প্রিন্টও বেশ জায়গা দখল করে নিয়েছে। কামিজে শার্ট কলার, ব্যান্ড কলার, বোট নেক, ইউ শেপ সব ধরনই পাওয়া যাচ্ছে। কুর্তিতে ফিউশন কাট বেশি এবার। ফ্রগ আর কামিজের মিশ্রণ দেখা যাচ্ছে কুর্তির প্যাটার্নে। পোশাকের রঙের ক্ষেত্রে দেখা গেল কম-বেশি সব রঙের উপস্থিতি। তবে প্যাস্টেল কালারকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আছে নীল রঙের বিভিন্ন শেড। গরমের জন্য উজ্জ্বল রঙের থেকে হালকা রঙকে যা চোখে শান্তি দেয়- এমন রঙ বেছে নেওয়া হয়েছে। সব গাড় রঙকে সফট টোনে ব্যবহার করা হয়েছে পোশাকে। আছে বেশ কিছু এক্সপেরিমেন্টাল রঙও।