উদ্যোগ
সুবর্ণা মেহ্জাবীন স্বর্ণা
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:০১ পিএম
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:৩৬ পিএম
দেশীয় ঐতিহ্য রক্ষায় বেনারসি দিয়ে তৈরি করেন লেহেঙ্গা। এ ছাড়া প্রাধান্য পেয়েছে মসলিন, সিল্ক, ভেলভেট ও জামদানি। দেশীয় উপকরণেই তৈরি করছেন সব পোশাক।
ছোট থাকতেই কালার কম্বিনেশন, প্যাটার্ন মেকিং, ড্রয়িংয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল সাফিয়া সাথীর। ম্যাগাজিন পড়ার পাশাপাশি চলত নিজেদের ড্রেস, টি-শার্টে পেইন্ট। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ ছিল না ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে পড়ার। অন্যদিকে পরিবার থেকে খুব কঠোরতা ছিল বড় ভাই-বোনের মতোই পড়তে হবে পাবলিকে। পরে ২০১০ সালে কলেজ অব হোম ইকোনমিক্সে রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এবং এন্ট্রাপ্রেনারশিপ বিভাগে স্নাতকে ভর্তি হন। নিজের নামেই ফেসবুক পেজ খোলেন ২০১৩ সালে। ব্যবসা করার জন্য নয়। উদ্দেশ্য ছিল নিজের ডিজাইন করা পোশাক সবার সামনে আনা। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে শাড়ি ও সালোয়ার কামিজের কালেকশন নিয়ে ছিল প্রথম ফটোস্যুট। বেশ সাড়া পেয়েছিলেন তখন। পরের সিজন ছিল ঈদ। আগের পোশাক সেল করে যে টাকা পেয়েছিলেন সেটি মূলধন হিসেবে ব্যবহার করেন। ঈদের জন্য করা ডিজাইন পোশাকও বিক্রি হয়ে যায়। ছিল না কোনো কর্মী। ফেব্রিক সংগ্রহ থেকে শুরু করে নতুন নতুন ডিজাইন করা, তারপর অন্য জায়গা থেকে পোশাক বানানো সব করতেন নিজে। অনেক সময় নতুন ডিজাইনের পোশাক বানাতে ইচ্ছা করলেও মূলধন থাকত না। জার্নিটা সহজ ছিল না। কষ্ট হতো কিন্তু কখনও হারাননি মনোবল। ২০১৫ সালের দিকে যখন ব্যবসাটা স্থিতিশীল হয়েছে তখন চিন্তা আসে ইভেন্ট প্ল্যানার হওয়ার। তখন বেশ কিছু ওয়েডিং প্ন্যানারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন কাজ করার জন্য। কিন্তু পজেটিভ সাড়া পাননি। স্নাতক পাস করার পর চিন্তা আসে এমন কিছু করার যা কপি হবে না। সঙ্গে সবাই মনে রাখবে। তখন পোর্টফোলিও, স্যাম্পল রেফারেন্স, ছোট মোটিভ করে কাস্টমারকে দেখিয়ে প্রি-অর্ডারে বিয়ের পোশাক বানাতে শুরু করেন। চিন্তায় ছিলেন পজেটিভ সাড়া পাবেন কি না। কারণ বিয়েতে শাড়ি বেশি ফোকাসে থাকে। তবে বেশি কষ্ট করতে হয়নি। কোভিডের আগ পর্যন্ত কাস্টমাইজ পোশাক বিক্রি করে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তখনও নিজের ফ্যাক্টরি বা ওয়ার্ক স্টেশন ছিল না। অন্যের টেইলরে কাজ চলত। লকডাউনের সময় বাইরে কাজ করানো অসুবিধা হয়ে যায়। এজন্য ছোট পরিসরে একটি অ্যাপার্টমেন্টে ফ্যাক্টরি চালু করেন। দক্ষ কারিগর দিয়ে চলে পোশাক তৈরি। তখন দেশের বাইরে গিয়ে পোশাক কেনার সুযোগ না থাকায় ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানি পোশাক ছেড়ে দেশীয় পোশাক বেছে নিয়েছেন অনেকে।
শুরুর দিকে কাজ করেছেন কটন, সিল্ক ফেব্রিক নিয়ে। টাইডাই, বাটিক, হ্যান্ড স্টিচ, এমব্রয়ডারির কাজ করেছেন পোশাকে। ওয়েডিং কালেকশনে প্রাধান্য পেয়েছে মসলিন, সিল্ক, ভেলভেট ও জামদানি। এ ছাড়া কাস্টমারের চাহিদার ওপর নির্ভর করে কী ফেব্রিকের পোশাক হবে। বিভিন্ন ইভেন্টে ক্যারি করার মতো পার্টি ড্রেস, শাড়ি, সালোয়ার কামিজ ও কুর্তি ডিজাইন করেন সাফিয়া সাথী। পোশাকে ডিজাইনের মোটিভ হিসেবে বেছে নিয়েছেন প্রকৃতিকে। ফুল, পাতা, পাখি, বিভিন্ন রকমের স্ট্রাকচার থাকে তার নকশায়। এ ছাড়া ট্রেন্ডকে মাথায় রেখে পোশাকে নকশা করেন।
আরও পড়ুন: গামছার ফেরিওয়ালা
দেশীয় ঐতিহ্য রক্ষায় বেনারসি দিয়ে তৈরি করেন লেহেঙ্গা। ঢাকায় তৈরি পিওর বেনারসির কোয়ালিটি ও রঙ এত সুন্দর যা নিজস্ব ডিজাইনে আরও আকর্ষণীয় করে তোলেন। ঐতিহ্যবাহী এই ফেব্রিক দিয়ে বিভিন্ন প্যাটার্ন ও নিত্য নতুন ডিজাইন করে ব্রাইডাল পোশাক তৈরি করেন। ভবিষ্যতেও বেনারসি নিয়ে অনেক কাজ করতে চান তিনি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দেশীয় সংস্কৃতির প্রসার ঘটাতে চান।
শুরু থেকে এই পর্যন্ত জার্নিটা সহজ ছিল না। প্রতিটা পদক্ষেপেই করতে হয়েছে অনেক স্ট্রাগল। তিনি ছিলেন একজন শিল্পী। প্যাশনকে প্রাধান্য দিতে গিয়েই হয়ে উঠেছেন উদ্যোক্তা। জানতেন না একটা ব্যবসা চালাতে কী করতে হবে। পথ চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ভুল করে শিখেছেন অনেক কিছু। পাশ্চাত্য দেশকে ফলো না করে সবাই যেন দেশীয় সংস্কৃত ও ঐতিহ্যের দিকে আগ্রহী হয় সেইজন্য নিরলসভাবে কাজ করেন সাফিয়া। দেশীয় স্টাইলকে আরও শক্তিশালী করে সবার সামনে তুলে ধরতে চান তরুণ এই ফ্যাশন ডিজাইনার।