× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উদ্যোগ

গামছার ফেরিওয়ালা

সুবর্ণা মেহ্‌জাবীন স্বর্ণা

প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:৫৩ পিএম

আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:৩৮ পিএম

গামছার ফেরিওয়ালা

তরুণ ডিজাইনার মেহবুব জাদু। এই পথে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল করোনাকালীন সময়ে। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ফ্যাশন ডিজাইনার কিংবা মডেল হওয়ার। 

মায়ের সহায়তায় মাঝেমধ্যে চলত ড্রেস কাটিং এবং সেলাই। পরিবার চেয়েছিল জাদু পড়বে মেডিকেলে। কিন্তু তার স্বপ্ন ছিল অন্য। মেডিকেলে পড়তে যেন না হয় সেজন্য নবম শ্রেণিতে বাদ দিয়েছিল বায়োলজি। যা ছিল পরিবারের অগোচরে। পরিবার থেকে চেয়েছিল মেডিকেলে যখন হবেই না তাহলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হবে। ভর্তিও হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে । কিন্তু জাদু যাননি এক দিনও। ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার স্বপ্ন জেঁকে বসেছিল তার। পরিবার থেকে একপযার্য়ে রাজি হয়। শর্ত ছিল পড়তে হবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। সরকারি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই ফ্যাশন ডিজাইনিং। ভাবতে থাকেন কোন বিষয়ে পড়লে সহজে ফ্যাশন ডিজাইনে যুক্ত হতে পারবেন। সেই ভাবনা থেকেই বেছে নেন চারুকলা। ভর্তি হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রিন্ট মেকিং নিয়ে সেখান থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কলকাতা থেকে ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে করেছেন ডিপ্লোমা।

করোনার সময়ে তিনি ভেবেছিলেন বাড়িতে বসে না থেকে কোনো একটা কাজ করতে হবে। এই চিন্তা থেকে ছোট ভাগ্নির জন্য বানিয়েছিলেন ড্রেস। কিছু ছবি তুলে শেয়ার করেছিলেন নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে। অনেকেই তখন জিজ্ঞাসা করেছিল, পোশাকগুলো কোন দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ডের তৈরি। কেউ কেউ বলেছিল, ইউনিক ডিজাইনের এই ড্রেস বানিয়ে দিতে হবে। তারও দু-তিন মাস পরে কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী ও বন্ধুদের উৎসাহে চিন্তা করেন বাণিজ্যিকভাবে কাজ করার। ‘উই’নামের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পরিচিত পোস্টের সঙ্গে গামছা দিয়ে বানানো কুশন কাভার ও বটুয়ার ছবি আপলোড করেছিলেন। প্রথম দিনেই পেয়েছিলেন অনেকগুলো অর্ডার। বিজনেসের জন্য কারও কাছ থেকে নেননি কোনো পুঁজি। বাড়ির জন্য বানানো কুশন কাভার ও ভাগ্নির জন্য বানানো বেবি ড্রেসের ছবি শেয়ার করে অর্ডার আসে। প্রথম অর্ডার সেল করে যা পেয়েছিলেন সেটিই ইনভেস্ট করেছেন পরবর্তীতে। উই থেকে প্রথম এক মাসে পেয়েছিলেন ব্যাপক সাড়া। চেয়েছিলেন বাংলা নামে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করতে। তাই নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে যাদুর বাক্স নামে খোলেন ফেসবুক পেজ। 

এই জার্নিতে এসেছে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা। শুরুর পর থেকে অনেকে বলেছেন, বিবি রাসেলের কপি। যাদুর বাক্স এবং বিবি রাসেলের ম্যাটেরিয়াল হয়তো একই। দুজনই গামছা নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু দেখা যায় ডিজাইনে ভিন্নতা। পশ্চিমা প্যাটার্ন নিয়ে কাজ করেছি। তবে সেখানেও থাকে দেশি মোটিফ। বিবি রাসেলের কাজের সঙ্গে আমার কাজ ও প্যাটার্নে মিল নেই। বিবি আপা আমাকে অনেক স্নেহ করেন। আমার কাজ দেখে তিনি প্রশংসাও করেছেন।
মেহবুব জাদু, ডিজাইনার, যাদুর বাক্স

তরুণ এই ফ্যাশন ডিজাইনারের উদ্দেশ্য ছিল দেশীয় কাপড়ের সিগনেচার একটি প্রোডাক্ট থাকবে। যা এক নামে মানুষ চিনবে। অন্যকিছু নিয়ে যে কাজ করবেন না তা নয়। তবে প্রথম দিকে শুধু একটা আইটেম নিয়েই কাজ করার ইচ্ছা তার। যেন যাদুর বাক্সকে মানুষ সহজে চেনে। গামছা বেছে নেওয়ার গল্প এটাই। অন্য দেশীয় কাপড় যেমন জামদানি, মসলিন, রাজশাহী সিল্ক কিংবা খাদি দিয়ে কাজ করতে গেলে খরচ হতো বেশি। ফলে এই ফেব্রিক নিয়ে কাজ করা ব্যয়সাপেক্ষ ছিল। হাতে বোনা তাঁত গামছা নিয়েই তাই কাজ শুরু করেন জাদু। গামছা দিয়ে বানিয়েছেন অনেক পোশাক। আছে শাড়ি, পাঞ্জাবি, কটি, ব্লেজার, ওয়েস্ট কোর্ট, গাউন, শর্ট ও লং স্কার্ট, লেহেংগা, সালোয়ার কামিজ, নাইটি, হুডি, বেবি পোশাক, কুশন কাভার, বটুয়া এবং জুতা। প্রথম কয়েকমাস একাই তৈরি করেছেন সব পোশাক। এখন মোট ১২ জন কারিগর কাজ করেন তার সঙ্গে। কাজ শুরুর পর ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন তিনি। অনেক সেলিব্রেটি নিয়েছেন পোশাক যাদুর বাক্স থেকে। পেজ বুস্ট না করেই রিচ পেয়েছেন অনেক। বিভিন্ন পত্রিকার ফিচারেও স্থান পেয়েছে তার পোশাক। অংশ নিয়েছিলেন রেড লাইভ জ্যাস এশিয়ান অ্যাওয়ার্ডে। অনলাইনে আয়োজিত ডিজাইনার ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ, ভারত, মালয়েশিয়ার মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি। এ ছাড়া বিভিন্ন ফ্যাশনশোতে দেখা যায় জাদুর পোশাক। দেশীয় জিনিস নিয়েই আগামীতে আরও কাজ করতে চান তিনি। দেশীয় সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও প্রসার ঘটাতে চান তরুণ এই ফ্যাশন ডিজাইনার। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা