× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রতিবাদী অবন্তিকার করুণ সমাপ্তি

প্রবা প্রতিবেদক, জবি ও কুমিল্লা

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৪ ১২:১৮ পিএম

আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৪ ১৫:৪৭ পিএম

প্রতিবাদী অবন্তিকার করুণ সমাপ্তি

প্রতিবাদী অবন্তিকার করুণ সমাপ্তি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও সহপাঠীর বিরুদ্ধে ফেসবুক পোস্টে বাঁচতে না দেওয়ার প্রেক্ষাপট সৃষ্টির অভিযোগ করে এক ছাত্রী আত্মহনন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ১৩তম ব্যাচের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। এর কিছুক্ষণ পরই তিনি কুমিল্লার বাড়িতে গলায় ফাঁস দেন। আত্মীয় ও পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। 

ফাইরুজ অবন্তিকা নামে এই শিক্ষার্থী ফেসবুকে পোস্ট করা সুইসাইড নোটে তার মৃত্যুর জন্য সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলামকে দায়ী করেছেন। আম্মান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে তিনি হয়রানি এবং হুমকি দেওয়াসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন। সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে অফিসে ডেকে নিয়ে হয়রানি ও মানহানির অভিযোগ তুলেছেন। তাছাড়া যৌন হয়রানিমূলক কথার মাধ্যমে নির্যাতন (সেক্সুয়ালি অ্যাবিউজিভ কমেন্ট) করার অভিযোগ করেছেন।

ফেসবুক পোস্টে ফাইরুজ অবন্তিকা লিখেছেন, ‘আমি যদি কখনও সুইসাইড করে মারা যাই, তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, আর তার সহকারী হিসেবে তার সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। আম্মান যে আমাকে অফলাইন-অনলাইনে থ্রেটের উপর রাখত, সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও আমার লাভ হয় নাই। দ্বীন ইসলাম আমাকে ভয় দেখায় যে, আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার। আমি জানি এখানে কোনো জাস্টিস পাব না। কারণ দ্বীন ইসলামের অনেক চামচা ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। এই লোককে আমি চিনতামও না। আম্মান আমাকে সেক্সুয়ালি অ্যাবিউজিভ কমেন্ট করায় আমি তার প্রতিবাদ করলে আমাকে দেখে নেওয়ার জন্য দ্বীন ইসলামের শরণাপন্ন হয়। আর দ্বীন ইসলাম আমাকে তখন প্রক্টর অফিসে একা ডেকে নারীজাতীয় গালিগালাজ করে। সেটা অনেক আগের ঘটনা হলেও সে এখনো আমাকে নানাভাবে মানহানি করতেছে বিভিন্নজনের কাছে বিভিন্ন কথা বলে। আর এই লোক কুমিল্লার হয়ে কুমিল্লার ছাত্রকল্যাণে তার ছেলেমেয়ের বয়সী স্টুডেন্টদের মাঝে কী পরিমাণ প্যাঁচ ইচ্ছা করে লাগায়, সেটা কুমিল্লার কারো সৎসাহস থাকলে সে স্বীকার করবে। এই লোক আমাকে আম্মানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাতবার প্রক্টর অফিসে ডাকায় নেয়। বলে, ‘খা…(অশালীন শব্দ) তুই এই ছেলেরে থাপড়াবি বলসস কেন? তোরে যদি এখন আমার জুতা দিয়ে মারতে মারতে তোর ছাল তুলি তোরে এখন কে বাঁচাবে?’ আফসোস, এই লোক নাকি ঢাবির খুব প্রমিনেন্ট ছাত্রনেতা ছিল। একবার জেল খেটেও সে এখন জগন্নাথের প্রক্টর। সো ওর পলিটিকস আর নষ্টামির হাত অনেক লম্বা। না হলে ও এত কুকীর্তির পরও এভাবে বহাল তবিয়তে থাকে! কোথায় এই লোকের কাজ ছিল গার্ডিয়ান হওয়া আর সে কিনা শেষমেশ আমার জীবনটারেই শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তি দিল না।’ শেষে অবন্তিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাদেকা হালিমের কাছে বিচার চান।

আরও পড়ুন: বিক্ষোভে উত্তাল জবি ক্যাম্পাস

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আর আমি ফাঁসি দিয়ে মরতেসি। আমার উপর দিয়ে কী গেলে আমার মতো নিজেকে এত ভালোবাসে যে মানুষ সে মানুষ এমন কাজ করতে পারে। আমি জানি এটা কোনো সলিউশন না, কিন্তু আমাকে বাঁচতে দিতেসে না, বিশ্বাস করেন। আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইসিলাম! আর পোস্ট মর্টেম করে আমার পরিবারকে ঝামেলায় ফেলবেন না। এমনিতেই বাবা এক বছর হয় নাই, মারা গেছেন, আমার মা একা। ওনাকে বিব্রত করবেন না। এটা সুইসাইড না। এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার। আর আম্মান নামক আমার ক্লাসমেট ইভটিজারটা আমাকে এটাই বলছিল যে, আমার জীবনের এমন অবস্থা করবে যাতে আমি মরা ছাড়া কোনো গতি না পাই। তাও আমি ফাইট করার চেষ্টা করসি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সহ্যক্ষমতার…। বাক্যটি অসম্পূর্ণ অবস্থায় এভাবে পোস্টটি শেষ হয়েছে।

অবন্তিকাকে যখন কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয় তখন সেখানে দায়িত্বে ছিলেন ডাক্তার জুবায়ের। তিনি বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর আমরা তার দেহ নিথর অবস্থায় দেখতে পাই। তার গলার নিচে দাগ ছিল। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।’ হাসপাতালের আবাসিক সার্জন আব্দুল করিম খন্দকার বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে আনলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপরও স্বজনদের আকুতির কারণে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়।’

রাতে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার ওসি ফিরোজ হোসেন খবর পেয়ে খোঁজখবর নেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পুলিশ যাওয়ার আগেই লোকজন ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। শনিবার ময়নাতদন্ত হবে। ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখনও পরিবারের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পর পূ্র্বের ঘটনা নিয়ে আমি অবগত ছিলাম না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সে যদি আসত তাহলে আমি ভিসি ম্যামের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নিতাম।’ তবে অবন্তির মৃত্যুর পর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উপাচার্য মহোদয়ের নির্দেশে ইতোমধ্যে অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টরকে সাসপেন্ড (সাময়িক বরখাস্ত) করা হয়েছে। অফিস খুললে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। আর আমরা একটি প্রক্টরিয়াল টিম কুমিল্লায় পাঠাচ্ছি।’ তারা রাতেই কুমিল্লা যাবেন বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন: অভিযুক্ত সহপাঠীকে বহিষ্কার ও গ্রেপ্তারের নির্দেশনা

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম জানিয়েছেন, শিক্ষক দ্বীন ইসলামকে সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে এবং শিক্ষকের পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছেন উপাচার্য। সেটা প্রক্রিয়াধীন আছে। তাছাড়া আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাসুম বিল্লাহকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা দ্রুত তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেবেন। আর অবন্তিকার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীর ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তদন্ত রিপোর্ট এলে সেই অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে কথা বলতে শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকী ও শিক্ষক দ্বীন ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা কেউ রিসিভ করেননি।

অবন্তিকার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখান। রাত ১টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ মিছিল চলছিল।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা