× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহনন

বিক্ষোভে উত্তাল জবি ক্যাম্পাস

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৪ ০১:৪৫ এএম

আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৪ ১৫:৫৩ পিএম

জবি শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যুর প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধরণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে গেইটে আগুন জ্বালিয়ে মিছিল করছেন। প্রবা ফটো

জবি শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যুর প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধরণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে গেইটে আগুন জ্বালিয়ে মিছিল করছেন। প্রবা ফটো

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সহকারী প্রক্টর ও সহপাঠীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে অভিযোগ পোস্ট করে আইন বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১২টা ২০মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। তারা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এরপর প্রশাসনিক ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে এসে উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আমার বোন মরলো কেন? প্রশাসন জবাব চাই!, অপরাধীরা বাইরে কেন? খুনীদের ফাঁসি চাই বলে ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এসে শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। এরপর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের মূল ফটকে অবস্থান নেন। সেখানে আগুন জ্বালিয়ে টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। মেধাবী শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণের পরিচিত মুখ ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা এখনও আগুন জ্বালিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী জুথি বলেন, ‘এ বিষয়ে শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমাদের বোন বিনা কারণে শিক্ষক এবং সহপাঠীর কারণে আজকে মৃত্যু হল। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

সমাবিজ্ঞানের বিভাগের সিফাত হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আম্মান ও শিক্ষকক দ্বীন ইসলামের ফাঁসি চাই। তারা যেন কোন ক্রমেই কোথাও পালিয়ে না যেতে পারে। এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাছের এই আত্মহত্যর সুষ্ঠু বিচার কামনা করছি। প্রশাসনকে এর বিরুদ্ধে খুবই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’

সাজিদ নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ফাইরুজ খুবই হাসিখুশি একজন মানুষ ছিল। সে মানসিকভাবে খুবই শক্ত ছিল। এমন একটা মেয়ে আত্মহত্যা করল। তাকে কতোটা মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, তা বুঝা যাচ্ছে। অভিযুক্ত শিক্ষক দ্বীন ইসলাম এবং তার সহপাঠী আম্মানের কঠোর শাস্তি চাই। তাদের কঠোর শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

এদিকে ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যুর খবর প্রকাশের পর থেকেই ফেসবুক পোস্টে নানান কথাবার্তা লিখছেন তার সহপাঠী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ফাইরুজ ক্যাম্পাসে তার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য পরিচিত মুখ ছিলেন। প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবেও পরিচিত ছিলেন তিনি। আইন বিভাগের এই শিক্ষার্থীর আত্নহত্যার ঘটনা কেউই বিশ্বাস করতে পারছেন না। শক্ত মানসিকতার মানুষ হিসেবে পরিচিত ফাইরুজের আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন তার সহপাঠী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন: আমার মেয়ে সেশনে ফার্স্ট, এটাই কি তার অপরাধ প্রশ্ন অবন্তিকার মায়ের

এক ফেসবুক পোস্টে ফাইরুজের সহপাঠী আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুসা কলিমুল্লাহ লিখেছেন, ‘পৃথিবীর অক্সিজেনের কি এতই সংকট ছিল, পৃথিবী কি তোর কাছে এতই সংকীর্ণ এবং নিরস হয়ে গেছিল। আমার কোন কথা নেই। বাকরুদ্ধ! পার হিসেবে আমরা বুঝি তোকে ধারণ করতে পারেনি। তুই না বলছিলি তুই তোর স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিসত্তা হারানোর ভয়ে সরকারি জব করবি না, এই প্রতিশ্রুতি দিলি আমাকে। তুই না আমার কাছে অভিযোগ দিলি, বাবা আর কয়েকটা দিন থেকে গেল না কেন? থেকে গেলে কি পারত না বাবা আর কটা দিন? এত দ্রুত কেন বাবাকে যেতে হলো? তুই না আমাকে বললি, তুই তোর ছোট ভাইকে আর মাকে সারা জীবন আগলে রাখবি! তোর উইমেন ডমিনেটরি রোল আমি ব্যক্তি ইতোমধ্যেই অনেকের কাছে বলে বেড়িয়েছি, যে আমাদের একজন অবন্তিকা আছে। সেই তুই এভাবে নিথর হয়ে যাবি, আর এটাই আমাদের এভাবে পোস্ট করতে হবে? এই কয়েকদিন আগে না তোর বাবার চলে যাওয়ার খবর টাইমলাইনে ভরে উঠলো, আর আজ তোর! ওর অক্সিজেন নেয়া বন্ধ হয়ে গেল! ওর শরীর এখন পোকার দখলে শুধু একটা পোস্টে প্রাপ্তি স্বীকার না। তুই আমাদের মাঝে ছিলি, থাকবি সব সময়। আমরা তোকে বাঁচিয়ে রাখবো আমাদের অবন্তি করে।

সুচন্দা রানী দেব নামের ফাইরুজের আরেক বান্ধবী ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘বাবুই রে, ফাইরুজ অবন্তিকা তুইতো বলতি আমাকে কাঁদতে দেখতে তোর ভালো লাগে না, তাইলে এই যে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে, এখন কই তুই। আমি আর লেট রিপ্লাই দিব না, এটা নিয়ে কি রাগ করতি। তোকে নিয়ে না প্লান করলাম, একদিন সারাদিন ঘুরব, তাইলে সেগুলোর কি হবে বল তো? আমাকে শুধু শুধু টেক্সট দিয়ে জ্বালাবে কে, এখন আর? কে মন খারাপে আমার সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলবে! অবনিরে কই চলে গেলি? আমাকে বাবুই বলে ডাকবে কে, আর তুই ছাড়া ইউনিভার্সিটি প্রোগ্রাম গুলোতে হাত টেনে নিয়ে নাচতে বলবে কে আর আমাকে? এটা ঠিক হয়নি একদমই, ঠিক হয়নি অবনী।

এদিকে, ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টর এবং ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলামকে প্রক্টরিয়াল বডি এবং শিক্ষকের পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। 

আরও পড়ুন: প্রতিবাদী অবন্তিকার করুণ সমাপ্তি

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষক দ্বীন ইসলামকে সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে এবং শিক্ষকের পদ থেকে সাময়িক বহিস্কার করার নির্দেশ দিয়েছে উপাচার্য মহোদয়। সেটা প্রক্রিয়াধীন আছে। আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাসুম বিল্লাহকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা দ্রুত তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেবেন। অভিযুক্ত ছাত্রের ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তদন্ত রিপোর্ট এলে সেই অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা