ফুলপরীকে নির্যাতন
রানা আহমেদ অভি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩ ২২:৩৩ পিএম
আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৪৭ পিএম
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত পাঁচ ছাত্রী। প্রবা ফটো
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ফুলপরী খাতুন নামে এক ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা অন্তরা চৌধুরীসহ পাঁচ ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। সোমবার (২১ আগস্ট) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় নেওয়া এই সিদ্ধান্তের খবরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন ওই পাঁচজন।
বহিষ্কার হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী হালিমা খাতুন ঊর্মি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার স্মার্টফোন হারিয়ে গেছে। বান্ধবীর ফোনে অনলাইনের মাধ্যমে জানতে পারি আমাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন আমার পরিবার যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। সহপাঠীরা ফোন দিয়ে তিরষ্কার করছে। কষ্টে আত্মহত্যার কথা বহুবার ভেবেছি।’
তিনি বলেন, ‘একটা কারণে কেন আমাদের চারবার বহিষ্কার করা হলো? একটা ভুলের জন্য তো একটা শাস্তিই কাম্য। আমাদের কেন এতবার বহিষ্কার? আমরাও তো মানুষ। পরিবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের কি একটিবার সুযোগ দেওয়া যেত না?’
ঊর্মি আরও বলেন, ‘আমাদের ক্যারিয়ার নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। একটা মেয়ের জন্য আমাদের পাঁচজনের জীবন নষ্ট হয়ে গেল। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, সবাই ফুলপরীর দিকটা দেখতেছে। কিন্তু এদিকে আমাদের সবকিছু নিঃশেষ করে দেবে – এটা কিছু হলো? যদি ভুল করে থাকি, সেখান থেকে তো শেখার সুযোগ পাব। আমরা তো সুযোগই পাইনি। যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলি, তখন এর দায় কে নেবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জীবনের চ্যাপ্টার তো শেষ হয়ে গেল। আমরা যদি এখন সুইসাইড করি? মাথায় অনেকবার এসেছে, আমি সুইসাইড করব। এখনও শুধু বেঁচে আছি বাবা-মায়ের কথা চিন্তা করে। সাংবাদিকরাও আমাদের কথা চিন্তা করল না, আমাদের বাবা-মা-পরিবারের কথা চিন্তা করল না। আমাদের কি বেঁচে থাকার অধিকার নেই? নাকি সবাই চায় আমরা সুইসাইড করি? অন্তত একটা সুযোগ আমাদের দেওয়া উচিত।’
আরও : ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরাসহ ৫ জনকে স্থায়ী বহিষ্কার
চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ফুলপরীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে। ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শাখা ছাত্রলীগ ও হাইকোর্ট থেকে পৃথক ৪টি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত শেষে প্রতিবেদনের আলোকে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে হাইকোর্টের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অভিযুক্ত ৫ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়াও হল প্রশাসন ও ছাত্রলীগ তাদের তদন্তের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বহিষ্কার করে।
ফুলপরীকে নির্যাতনের ঘটনায় গত ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীসহ পাঁচজনকে এক বছরের জন্য একাডেমিক, আবাসিক বা অন্যান্য কার্যক্রম থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অন্য চার ছাত্রী হলেন হালিমা আক্তার, ইসরাত জাহান, তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান।
ওই ব্যবস্থা যথাযথ প্রক্রিয়ায় নেওয়া হয়নি উল্লেখ করে হাইকোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৮৭ সালের কোড অব কন্ডাক্টস অব দ্য স্টুডেন্টস (শিক্ষার্থী শৃঙ্খলাবিধি) অনুসরণ করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় পাঁচ শিক্ষার্থীর শাস্তি নিশ্চিতের নির্দেশ দেন। গত ২৬ জুলাই বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আদেশ দেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি ওই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন: নির্যাতনকারীদের স্থায়ী বহিষ্কারে সন্তুষ্ট ফুলপরী
রবিবার (২০ আগস্ট) উপাচার্যের সভাকক্ষে শৃঙ্খলা কমিটির সভায় নির্যাতনের ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সোমবার (২১ আগস্ট) জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং সেটি হাইকোর্টে পাঠানো হবে।
বহিষ্কার হওয়া আরেকজন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের সানজিদা অন্তরা চৌধুরী ঘটনার শুরু থেকেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছেন। স্থায়ী বহিষ্কারের খবরেও আগের অবস্থানেই অনড় আছেন তিনি।
সানজিদা বলেন, ‘অফিসিয়ালি চিঠিপত্রের মাধ্যমে কিছু জানতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী বহিষ্কার করবে এই সংবাদ তো নতুন না। এটা দুই দিন আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আনিসুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। পরে আবার বিভিন্ন চাপ দিয়ে তা তুলে নিয়েছেন। শুরু থেকেই বলছি আমি নির্দোষ।’