× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গ্রামবাংলা

খেজুর গুড় তৈরির ব্যস্ত সময়

খাদেমুল ইসলাম, বাগাতিপাড়া (নাটোর)

প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:৪৯ এএম

আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৫৬ এএম

খেজুর রস সংগ্রহের পর চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ চলছে নাটোরের বাগাতিপাড়ার কুলপাড়া গ্রামের গাছি শফিকুল ইসলামের বাড়ির উঠানে। প্রবা ফটো

খেজুর রস সংগ্রহের পর চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ চলছে নাটোরের বাগাতিপাড়ার কুলপাড়া গ্রামের গাছি শফিকুল ইসলামের বাড়ির উঠানে। প্রবা ফটো

কাকডাকা ভোরে খেজুরের রস সংগ্রহে বেরিয়ে পড়েন গাছিরা। গাছ থেকে নামিয়ে আনেন রসভর্তি হাঁড়ি। এরপর তা নিয়ে ছোটেন চুলার কাছে। টিনের বড় পাত্রে রস ঢেলে জ্বাল দিলে শুরু হয় গুড় তৈরির প্রক্রিয়া। আস্তে আস্তে রস শুকিয়ে রূপ নেয় সুস্বাদু গুড়ে। তারপর তা ফরমাতে ঢেলে কিছুক্ষণ রেখে দিলেই পরিণত হয় শক্ত গুড়। এভাবে ব্যস্ত সময় পার করছেন নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গাছিরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, নাটোরের বাগাতিপাড়ার পাঁকা, জামনগর, ফাগুয়াড়দিয়াড়, জিগরী ও দয়ারামপুরসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে থাকা খেজুরগাছের সুস্বাদু রস সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। এবার বাগাতিপাড়ায় ৫টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা মিলিয়ে অন্তত সাড়ে ৯ হাজার খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ করছেন ছোট-বড় সহস্রাধিক গাছি। উপজেলার বিভিন্ন হাট ও বাজারে এক হাঁড়ি রস ১০০ টাকা ও এক কেজি গুড় ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজার ছাড়াও তরুণদের উদ্যোগে অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে এই উপজেলার বেশিরভাগ গুড়। সে ক্ষেত্রে উন্নত প্যাকেটের মাধ্যমে গুড় বাজারজাত করতে খরচ কিছুটা বাড়ছে। দাম নেওয়া হচ্ছে কেজি প্রতি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত।

উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের গালিমপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ৩০ থেকে ৪০ ফিট লম্বা খেজুর গাছে উঠে রস সংগ্রহ করে বাড়িতে আনছেন গাছিরা। পরে সেই রস জ্বালিয়ে সুস্বাদু পাটালি গুড় তৈরি শেষে বাজারে বিক্রি করা হয়। ভালো দাম পাওয়ায় গাছিরা এবার বেশ খুশি। চিথলিয়া গ্রামে রাজশাহী থেকে আসা গাছি মোনায়েম করিম জানান, এই এলাকায় অন্তত শতাধিক খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন তিনি।

উপজেলা কুলপাড়া গ্রামের গাছি শফিকুল ইসলাম জানান, পৈত্রিক সূত্রে প্রতিবার তারা গাছ লাগান এবং রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করেন। শীতের প্রথম থেকেই তিনি এবং তার ভাই শেকু ইসলাম রস সংগ্রহের কাজে যুক্ত হোন। অনেক কষ্ট হয় খেজুরের রস সংগ্রহ করতে। তবে দাম ভালো হওয়ায় কষ্ট আর গায়ে লাগে না। শীত মৌসুমে এই কাজ করে ছয় মাস স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা।

গুড় ক্রেতা মনিরুজ্জামান বলেন, এখনকার সময়ে ভেজালমুক্ত জিনিস পাওয়াই দুষ্কর। খোঁজ পেলাম এখানে ভেজালমুক্ত রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি হয়, তাই নেওয়ার জন্য গাছি ও উৎপাদনকারীদের কাছে ছুটে আসা।

এই উপজেলার খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে বিভিন্ন গাছির মাধ্যমে ভেজালমুক্ত গুড় তৈরি করে অনলাইনে কম খরচে মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে চকগোয়াশ গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা আরিফ বিল্লাহ। তিনি জানান, তার অনলাইন প্রতিষ্ঠান ‘কৃষি বাজার নাটোর’-এর মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার মানুষের কাছে গুড় বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজার মূল্যের চাইতে কিছুটা দাম বেশি হলেও এখানে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপার ব্যবহার করায় বাজারের খোলা গুড়ের চাইতে এই গুড়ের মান খুবই ভালো এবং অনেক দিন রেখে খাওয়া যায়।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. ভবসিন্ধু রায় বলেন, খেজুরগাছে ওঠার ঝুঁকি বেশি থাকায় উপজেলায় দিন দিন গাছির সংকট দেখা দিচ্ছে এবং খেজুরগাছের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগ সব সময় কৃষকদের নিয়ে কৃষিকাজে নানা বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছে এ বিষয়েও গাছিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এখন দেশের অনেক জায়গাতেই ভেজাল গুড় তৈরি হয়। তবে বাগাতিপাড়ার তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে এই প্রবণতা নেই।

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক আরিফুল ইসলাম তপু বলন, উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশ্যে গোখাদ্য হিসেবে আসা লালি গুড় খেজুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে গুড় তৈরি করে তা নতুনভাবে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে ভোক্তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে এবং তারা প্রতারিত হচ্ছে। এসব বিষয়ে দ্রুত উপজেলা প্রশাসনের অভিযান পরিচালনার দাবি জানান তিনি। 

একই সঙ্গে তরুণ উদ্যোক্তাসহ যেসব গাছি ও ব্যবসায়ী ভেজালমুক্ত গুড় তৈরি করছেন তাদের সাধুবাদ জানান এই ভোক্তা অধিকার নেতা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা