পণ্য রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৫৭ পিএম
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:০৩ পিএম
সালমান এফ রহমান। ফাইল ফটো
রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১০০০ কোটি টাকা) বিদেশে পাচারের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমানসহ ২৮ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা করেছে সিআইডি।
সংস্থাটি বলছে, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও বিধি মোতাবেক পরিচালিত সিআইডির অনুসন্ধানে সালমান এফ রহমান (বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান) এবং তার ভাই এ এস এফ রহমানের (বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান) স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বেক্সিমকো গ্রুপের মালিকানাধীন মোট ১৭টি প্রতিষ্ঠানের ২০২১ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে মতিঝিলের দিলকুশার জনতা ব্যাংক পিএলসি লোকাল অফিস শাখা থেকে ৯৩টি এলসি/সেলস কন্ট্রাক্ট (বিক্রয় চুক্তি) গ্রহণ করেন। এর বিপরীতে পণ্য রপ্তানি করে নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও রপ্তানিমূল্য প্রায় ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মূদ্রায় প্রায় ১০০০ কোটি টাকা) বাংলাদেশে না এনে বিদেশে পাচারের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে সিআইডি।
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় সিআইডি দেখতে পেয়েছে, অ্যাডভেঞ্চার গার্মেন্টস লিমিটেড, অ্যাপোলো অ্যাপারেলস লিমিটেড, অটাম লুপ অ্যাপারেলস লিমিটেড, বেক্সটেক্স গার্মেন্টস লিমিটেড, কসমোপলিটান অ্যাপারেলস লিমিটেড, কোজি অ্যাপারেলস লিমিটেড, এসেস ফ্যাশন লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস লিমিটেড, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেড, মিডওয়েস্ট গার্মেন্টস লিমিটেড, পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেড, পিঙ্ক মেকার গার্মেন্টস লিমিটেড, প্ল্যাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেড, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেড, স্প্রিংফুল অ্যাপারেলস লিমিটেড, আরবান ফ্যাশনস লিমিটেড ও উইন্টার স্প্রিন্ট গার্মেন্টস লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে প্রায় ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মূদ্রায় প্রায় ১০০০ কোটি টাকা) মূল্যমানের পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে।
বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী পণ্য রপ্তানি করার পর রপ্তানিমূল্য চারমাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন করার বাধ্যবাধকতা থাকা সত্তেও যথাসময়ে রপ্তানি মূল্য বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন না করে সালমান এফ রহমানসহ বেক্সিমকো গ্রুপের অন্যান্য স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এসব অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
বিদেশে রপ্তানি হওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ পণ্যই বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমানের পূত্র আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং এ এস এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের যৌথ মালিকানাধীন RR Global Trading (FZE) এর শারজাহ, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবের ঠিকানায় রপ্তানি করা হয়েছে।
এছাড়া জার্মানি, নেদারল্যান্ড, ইউকে, তুরস্ক, শ্রীলংকা সহ বিভিন্ন দেশেও পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে রপ্তানি মূল্য বাংলাদেশে আনয়ন না করে উক্ত আসামীরা পারস্পরিক যোগসাজশে বিদেশে পাচার করেছেন।
সিআইডি বলছে, মামলার আসামীরা সংঘবদ্ধভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বিদেশে টাকা পাচারের অসদুদ্দেশ্যে নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পণ্য রপ্তানি করে ইচ্ছাকৃতভাবে রপ্তানিমূল্য প্রত্যাবাসন না করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন মোতাবেক দন্ডণীয় অপরাধ করেছেন। বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান এবং তার সহযোগীরা তাদের ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সহযোগিতায় বিদেশে অর্থপাচার করেছেন বলে অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়েছে। এজন্য সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগ মতিঝিল থানায় ১৭টি মামলা দায়ের করেছে।
এছাড়া সালমান এফ রহমান এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানী বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ও বেনামে প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহন করে বিদেশে পাচার এবং অন্যান্য আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে পৃথক অনুসন্ধান কার্যক্রর্রেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগ।