সাহিদা আক্তার
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:৩৮ পিএম
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:১৮ পিএম
ব্যর্থতা, থেমে যাওয়া, হারানো জীবনেরই অংশ। ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা মানুষের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা থাকে না। সম্ভবত এ কারণেই নিজ অভিজ্ঞতা থেকে নোবেলজয়ী নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, ‘আমাকে আমার সফলতা দ্বারা বিচার কোরো না, ব্যর্থতা থেকে কতবার ঘুরে দাঁড়িয়েছি তা দিয়ে আমাকে বিচার করো।’ তবে এও ঠিক, দুর্যোগের ভয়াবহতা ও আঘাতের পর ঘুরে দাঁড়ানো খুব কঠিন হয়ে পড়ে, বিশেষ করে ঠিক তার পরমুহূর্তেই।
কিছু কৌশল অবলম্বন করলে মানুষ কঠিন সময় পাড়ি দিতে পারে। এগুলো তাই মাথায় রাখা জরুরি। আসুন জেনে নিই অদম্য ব্যক্তিদের এসব কৌশল ও বৈশিষ্ট্যÑ
১. মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা স্বীকার করে নেন। তারা বোঝেন যে সবার মধ্যেই কমতি আছে। সবার জীবনেই ব্যর্থতা আসবে। চাকরি হারানো কিংবা ডিভোর্সের মতো নানান বাধাবিপত্তি জীবনেরই অংশ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ব্যর্থতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো যখন নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে এসে কোনো লক্ষ্যপূরণের জন্য ঝুঁকি নেওয়া হয়। এর মাধ্যমে নিজদের দোষারোপ না করে বদলে যাওয়া বাস্তবতার স্বরূপ মেনে নেন তারা।
২. তারা ব্যর্থতাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেন। সমস্যা সমাধানের সময় মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা একই সঙ্গে খোলা মনের অধিকারী এবং পরিস্থিতি অনুসারে কৌশল/অবস্থান পরিবর্তনের পক্ষে। তারা ইতিবাচক মনোভাব রেখে আত্মচিন্তার মাধ্যমে ব্যর্থতা থেকে বেরিয়ে আসেন।
৩. লেখক ওয়েইন ডায়ার বলেছিলেন, ‘যদি তুমি কোনো বিষয় সম্পর্কে ভিন্নভাবে চিন্তা করো, বিষয়টিই বদলে যাবে।’ ব্যর্থতা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করলে ব্যর্থতাই নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত হবে, মস্তিষ্কে বিষয়টি ইতিবাচকভাবে উপস্থাপিত হবে। যেমন টমাস আলভা এডিসন তার ব্যর্থ পরীক্ষাগুলোকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন, ‘আমি ব্যর্থ হইনি। আমি কেবল এক হাজারটি উপায় বের করেছি, যেগুলো কাজ করে না।’ কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রতিটি ব্যর্থতা তাকে সফলতার দিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে।
৪. তারা তাদের ব্যর্থতা ভবিষ্যতের বিকাশের জন্য কাজে লাগান। তারা নিজেকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমি কীভাবে এ কাজটি ভিন্নভাবে করতে পারতাম? অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে আমি কি শিখেছি কোন জিনিসগুলো কাজ করে আর কোনগুলো করে না?’ যেমন সম্প্রতি ঘটা কোনো সম্পর্কবিচ্ছেদের দিকে তাকিয়ে কেউ শিখতে পারে আরেকটি সম্পর্ক শুরুর আগে কোন বিষয়গুলোয় আরও ভালোভাবে নজর দেওয়া উচিত।
৫. তারা তাদের অনুভূতি সম্পর্কে সৎ। তারা হতাশাকেও মেনে নেন। মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা তাদের অনুভূতি চেপে রাখেন না, অনুভূতির আতিশয্যে ডুবেও যান না। অবশ্য তারা অনুভূতিকে স্বীকার করেন এবং তা কাটিয়ে ওঠার জন্য সময় নেন। দুঃখ, হতাশা, প্রত্যাখ্যানকে তারা স্বাভাবিক হিসেবেই নেন, আর এতে ভয়ের কিছু নেই।
৬. তারা আশাবাদী মানসিকতার হন। মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা তাদের জীবন সম্পর্কে আশাবাদী থাকেন। গবেষণায়ও দেখা যায়, আশাবাদী মনোভাব এবং জীবন সম্পর্কে সন্তুষ্টির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, যা আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জয় করা যায়। তারা জানেন এমন কোনো ব্যর্থতা নেই, যা পেরোনো যায় না। যেমন ধরা যাক স্টিভ জবসের কথাই, যিনি নিজের তৈরি কোম্পানি থেকেই ছাঁটাই হয়েছিলেন। তিনি পরে মন্তব্য করেছিলেন, এটি তার জীবনে হওয়া সেরা ঘটনা। তিনি একে কাজে লাগিয়ে নতুন এক সুযোগ তৈরি করেন, তার মনোযোগ ভিন্ন দিকে ঘোরান। তিনি তৈরি করেন ‘নেক্সট’ ও ‘পিক্সার’। ব্যক্তি কখনোই ঘটনা ঘটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু বুঝে উঠতে পারবে না; তবে যখন সে অতীতের ঘটনাগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি জোড়া লাগাতে শুরু করবে, তখন দেখা যাবে যে প্রতিটি ব্যর্থতার পেছনেই কোনো না কোনো ইতিবাচকতা রয়েছে।
৭. জীবনে চলার পথে সমস্যা আসবেই। এই সমস্যাগুলো নিজেকেই সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। সমস্যা সমাধানের জন্য চিন্তাশক্তিকে নানাভাবে কাজে লাগাতে হয়। সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে হয়। এর ফলে মেধার বিকাশ ঘটে। সমস্যা সমাধানের মাধ্যমেই একজন মানুষ সাফল্যের পথে এগিয়ে যায়। তাই নিজের সমস্যা নিজেই সমাধান করার চেষ্টা করা উচিত।