× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

তারুণ্যের ভোট ভাবনা

গোলাম কিবরিয়া

প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:৪৪ এএম

আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:৩৫ পিএম

তারুণ্যের ভোট ভাবনা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছেন তরুণ ভোটাররা? নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না? কেমন হবে তাদের পছন্দের প্রার্থী? তারা কী চাচ্ছেন? নির্বাচন নিয়ে তাদের আশা-ভরসা, তরুণ নেতৃত্বের প্রতি আগ্রহ কেমন? এমন অনেক বিষয় নিয়ে ‘আলোকদিয়া’র সঙ্গে কথা বলেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। লিখেছেন গোলাম কিবরিয়া

আজ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন ১ কোটি ৫৪ লাখ ভোটার। ভোটে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর নজর এই নতুন ভোটারদের দিকে। নতুন ভোটারদের অন্যতম চাওয়া মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, রাষ্ট্র হোক দুর্নীতিমুক্ত, বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমুক আর অব্যাহত থাকুক দেশের সার্বিক উন্নয়নের ধারা। ১১ কোটি ৯৬ লাখ ভোটারের মধ্যে বিপুলসংখ্যক তরুণ এবার প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তরুণ ভোটারের বড় অংশই শিক্ষার্থী। কেউ হয়তো সদ্য কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেছেন বা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইকরামুজ্জামান বলেন, ‘প্রথমবার ভোটার হয়েছি। এক ধরনের উচ্ছ্বাস তো কাজ করছেই। যিনি উন্নয়ন করতে পারবেন বলে মনে করছি, তাকে ভোট দেব। আমরা চাই গুণগত উন্নয়ন। শুধু অবকাঠামো নয়, দরকার দেশের সব প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নও।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা বলেন, ‘বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল অংশ নিলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটটাই ভিন্ন হতো। তবু এ নির্বাচন নিয়ে আমাদের আগ্রহ রয়েছে। আমরা চাই সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হোক। তরুণ ভোটার হিসেবে অবশ্যই আমারও চাওয়া- দেশে চলমান উন্নয়নের ধারা বজায় থাকুক।’

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহাত মাইশা বলেন, ‘চলচ্চিত্র নায়ক-নায়িকা থেকে খেলোয়াড়- সবাই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। বিষয়টি খারাপ না হলেও, যেখানে যার জায়গা তার সেখানেই থাকা উচিত। খেলোয়াড়ের জায়গা খেলার মাঠ, তার সেই মাঠেই থাকা উচিত। রাজনীতিবিদের জায়গা রাজনৈতিক ময়দান, তাদের সেখানেই থাকা উচিত। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা লক্ষ করা যাচ্ছে না। তাই এ নিয়ে তেমন আগ্রহ কাজ করছে না। তবু আমাদের প্রত্যাশাÑ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পারা।’

ইউল্যাবের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস স্নিগ্ধা বলেন, ‘যেকোনো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়াটা জরুরি।’ এ নির্বাচনে তরুণদের আগ্রহে ভাটা পড়েছে বলে তিনি মনে করেন। আরেক শিক্ষার্থী হাফসা বিনতে শহীদ জানান তিনি ভোট দিতে যাবেন। তবে তার কিছু শঙ্কাও আছে। ‘আমাদের আগ্রহের জায়গাটা আছে। কিন্তু এর মধ্যে একটা অনীহাও আছে যে আদৌ সেটা কতটা ফলপ্রসূ হবে। আদৌ আমরা ভোট দিতে পারব কি না,’ বলেন তিনি।

গত নির্বাচনে পরিবারের সদস্যদের ভোটের বাজে অভিজ্ঞতার কারণে প্রথমবার ভোটার হয়েও ভোট দিতে যাবেন কি না এ নিয়ে দ্বিধান্বিত শিক্ষার্থী নাকিব নিজাম। তিনি বলেন, ‘রাজনীতি নিয়ে তেমন আগ্রহ কাজ করে না। তবু প্রথমবার ভোট দেওয়ার তো একটা আগ্রহ ছিলই। কিন্তু নিজ পরিবারের অতীত অভিজ্ঞতা খারাপ থাকায় আমি সন্দিহান ভোট দিতে যাব কি না।’

তবে বিপরীত চিন্তাও রয়েছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাদমান শাবাব মনে করেন এবার তরুণ ভোটারদের আগ্রহ আগের তুলনায় বেশি। তিনি বলেন, ‘যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের রানিং স্টুডেন্ট বেশিরভাগই নতুন ভোটার, তাদের মধ্যে ভোট দেওয়ার বা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহটা বেশি এ বছর। দেশটাকে ভালোবাসি এ কারণে ভোট দিতে যাব। তবে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেব।’ এবার প্রথমবারের মতো ভোট দিতে যাবেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী আসমা। তিনি বলেন, ‘এবার বড় একটি দল অংশ নিচ্ছে না। প্রার্থীদের মধ্যে তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। এর পরও ভোট দিতে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।’ ভোটের রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতি তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতিবিমুখ করছে বলে অনেকে মনে করেন।

নতুন ভোটার মাহমুদ বলেন, ‘বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ রাজনৈতিকভাবে উদাসীন। এটা তৈরি হওয়ার কারণ হচ্ছে নিজ ক্যারিয়ার নিয়ে তরুণরা চিন্তিত। স্বাধীনভাবে যেকোনো ইস্যুতে কথা বলা বা মতামত দেওয়ার চিন্তা থেকে তরুণরা সরে এসেছে। কারণ ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে বাস করছি আমরা।’

এ বিষয়ে নতুন ভোটার নওরীন নিশাত বলেন, ‘একদিকে আইনের যেমন ভয় তেমন কী পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সবাই। কথা বলার ইচ্ছা থাকলেও তারা ইচ্ছাটা প্রকাশ করতে পারে না। তরুণ প্রজন্মের একটা বড় ভয়ের জায়গা হচ্ছে কিছু হলে এর প্রভাবটা পরিবারের ওপরে পড়বে কি না। আমাদের সাইবার সিকিউরিটি আইনটা অনেক কঠিন করে বানানো হয়েছে। আমি ফেসবুকে লিখতে গিয়ে আবার ব্যাকস্পেস দিয়ে মুছে ফেলি। আমাকে দশবার ভাবতে হয়। আমি চাইব তরুণরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পাক। তবেই রাজনীতি, নির্বাচন নিয়ে তাদের মাঝে আগ্রহ কাজ করবে।’

অনেক তরুণ রাজনীতিতে আসছেন, তারা কি সুস্থ রাজনীতির পরিবেশ তৈরি করতে পারবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহবুব জানান, তরুণদের রাজনীতিতে আসা প্রয়োজন। দেশের ক্রান্তিকালে তারাই তো হাল ধরেছে। কিন্তু তাদের সৎ থাকতে হবে, প্রবীণদের পথে হাঁটলে চলবে না। ভোট দেওয়া নিয়ে সংশয়ের কথা জানালেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদেকুর রহমান। তার ভাষ্য, ‘দেশের যে রাজনৈতিক অবস্থা, পাশাপাশি বিএনপিসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। যার জন্য নির্বাচনে ভোট দেব কি না সংশয়ে আছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহানা ইসলাম এবার প্রথম ভোটার হয়েছেন। ভোট নিয়ে তার মনে রয়েছে শঙ্কা, ‘আমি এবারই প্রথম ভোটার, তাই ভোট দিতে চাই। কিন্তু আমার ভোট দেওয়া-না দেওয়ার ওপর কি কিছু নির্ভর করছে? জানি না আসলে নির্বাচন কতটা অবাধ হবে। এটা নিয়ে এখনও শঙ্কা কাজ করছে।’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসনিমা জাহান বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ এখনও ভালো মনে হচ্ছে। ভোটের দিন পরিবেশ এ রকম থাকলে আমি, আমার বন্ধুরা অবশ্যই ভোট দিতে যাব।’

ভোটের রাজনীতিতে তরুণদের অনাগ্রহ নিয়ে শাবি শিক্ষার্থী শাদমান শাবাব বলেন, বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস অ্যান্ড জাস্টিস সেন্টারের ‘‌ইয়ুথ ম্যাটার্স সার্ভে ২০২৩’ জরিপে দেখা যায়, শিক্ষিত তরুণের প্রায় অর্ধেক বা ৪২ শতাংশ দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে চায়। অনিশ্চিত আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ, দক্ষতা অনুযায়ী চাকরির বাজার তৈরি না হওয়া, গুণগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের স্বল্পতা, উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগের অভাব এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা শঙ্কার কারণেই তাদের এ আগ্রহ। তাই রাজনীতি ও ভোট নিয়ে বর্তমান প্রজন্মের মাঝে অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে। রাজনীতিবিদদের এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত। গতানুগতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে তরুণদের অংশগ্রহণও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। যোগ্য প্রার্থীকে ভোট প্রদানে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তরুণ প্রজন্মই আগামীর দেশ পরিচালনার কর্ণধার। সেজন্য সঠিক প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অযোগ্য প্রার্থীর হাতে নেতৃত্ব গেলেই দেশ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে। তাই এ ক্ষেত্রে তরুণদের ভূমিকাও অপরিসীম।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহানা মৌ বলেন, ‘আমি প্রত্যক্ষভাবে কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত নই। তবে এমন সরকার চাই যারা জনগণের জন্য কাজ করবে। দুর্নীতিমুক্ত ও শিক্ষাবান্ধব বাংলাদেশ গড়বে। বিশেষ করে দেশের উন্নয়ন যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ রাখবে নতুন সরকার। আর নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু হয়; জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে এসে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে সেই কামনা করি।’

ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের শিক্ষার্থী স্নিগ্ধা বলেন, ‘আশা করি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। এজন্য নিরলসভাবে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। আর বর্তমান সরকারও নির্বাচনবান্ধব একটা পরিবেশ এরই মধ্যে তৈরি করেছে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করে এবং আগামীতে উন্নয়ন ও শান্তির ধারা বজায় রাখবে তাদেরই ভোট দেব।’

শেষ পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু থাকলে ভোট দেওয়ার কথা বলছেন নবীন ভোটাররা। তা ছাড়া গতবার যারা প্রথমবার ভোটার ছিলেন, সেই তরুণরাও এবার ভোটে উৎসাহ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা