নওসাদ আল সাইম
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২২ ১৩:৪৯ পিএম
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২২ ১৪:১৪ পিএম
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্ম নেওয়া সুরাইয়া জাহান পড়তে চান বিশ্ববিদ্যালয়ে
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন কৃষক পরিবারের সন্তান মো. সৈকত খান
জন্মের পরই সুরাইয়া জাহানের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা চোখে পড়ে তার পরিবারের। শেরপুর সদরের আন্দারিয়া সুতিরপাড়ে বড় হয়ে উঠেছে সুরাইয়া। বাবা সফির উদ্দিন চরপক্ষীমারি স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক। মা মুরশিদা সফির গৃহিণী। সংকট মনে হলেও বাবা-মায়ের কাছে বোঝা হয়ে নয় বরং আশার আলো নিয়েই স্বপ্ন দেখছেন সুরাইয়ার বাবা-মা। তিন সন্তানের মধ্যে বড় ও ছোট দুই সন্তানের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও পড়াশোনায় উচ্চশিক্ষিত করতে চায় তার পরিবার।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন সুরাইয়া। পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে। সেখানেই কথা হয় সুরাইয়া জাহানের মা মুরশিদা সফির সঙ্গে। তিনি বলেন, চলতে, লিখতে না পাড়া আমার বড় মেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়, তাই আমরাও তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি যতটা ভালো রাখা যায়। এই লড়াই করে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলে আমাদের খুশির শেষ থাকবে না। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলে আমাদের জন্যও ভালো ছিল। সুরাইয়াও এখানে ভর্তি হতে চায়। আল্লাহর ইচ্ছা কপালে থাকলে হবে। স্যাররা যদি প্রতিবন্ধী কোটায় হলেও ভর্তি করাতেন আমাদের স্বপ্ন পূরণ হতো। সুরাইয়া চরকান্দারিয়া হাইস্কুল থেকে মানবিক শাখায় এসএসসিতে ৪.১১ এবং এইচএসসিতে শেরপুর মডেল গার্লস কলেজ থেকে ৪.০০ পেয়ে পাস করেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্ম নেওয়া সুরাইয়া জাহান পড়তে চান বিশ্ববিদ্যালয়ে। হাতে না লিখতে পারলেও লেখেন পা দিয়ে। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে পৌঁছতে একটু বিলম্ব হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অতিরিক্ত ১০ মিনিট সময় দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের নির্দেশে।
সুরাইয়ার মতো শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন দেখা দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান মো. সৈকত খান। দিন আনা কৃষক-মজুর পিতা মো. সবুজ খানের তিন সন্তানের দুই সন্তান শারীরিক প্রতিবন্ধী। কৃষি কাজ থেকে আসা অর্থ দিয়েই সন্তানের স্বপ্নপূরণে পড়ালেখা করাতে চান দরিদ্র এই বাবা। সৈকত সুনামঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার জনতা মডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় পান ৩.৫০ এবং ধর্মপাশা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় পান ৩.৫৮। সৈকত নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে পড়ার স্বপ্ন দেখেন। সৈকত বলেন, আমি অনেক কিছুতে অক্ষম হলেও পড়াশোনা করতে ভালোবাসি। বেঁচে থাকা পর্যন্ত পড়াশোনা করতে চাই।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, আমরা নিয়ম অনুযায়ী তাদের সহযোগিতা করেছি যেন পরীক্ষায় ভালোভাবে অংশ নিতে পারে। এমনকি তাদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বিবেচনায় নিয়ে অতিরিক্ত সময়ও প্রদান করেছি। উল্লেখ্য, ১৩ আগস্ট সারা দেশে গুচ্ছভুক্ত পদ্ধতিতে ‘বি’ ইউনিট তথা মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রবা/জিকে/এসআর