× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সীতাপ জলপ্রপাত

পাহাড়-জলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য

ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার ও সাদিকুর রহমান সামু, কমলগঞ্জ

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:১৭ এএম

আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৪৪ এএম

সীতাপ জলপ্রপাত। প্রবা ফটো

সীতাপ জলপ্রপাত। প্রবা ফটো

২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে ইকো ট্যুর গাইড শ্যামল দেববর্মাসহ একদল রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটক ঢুকে পড়েন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে। কুরমা বন বিটের গভীর অরণ্যে ভারতীয় সীমান্তে তারা খুঁজে পান হামহাম জলপ্রপাত। অসম্ভব সৌন্দর্যময় এ জলপ্রপাতটি এরপর দেশের ভ্রমণপিপাসুদের হৃদয়পটে স্থান করে নেয়।

এর ঠিক এক বছর পর ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষদিকে একই বন বিটের গভীর অরণ্যে একটি জলপ্রপাতের সন্ধান পাওয়া যায়। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় একদল পর্যটকের খুঁজে পাওয়া এ জলপ্রপাতের নাম দেওয়া হয় ‘সীতাপ জলপ্রপাত’। যদিও হামহামের মতো এতটা আলোচনায় আসেনি এ জলপ্রপাত, পায়নি তেমন একট প্রচার-প্রচারণাও। তারপরও এটি দেখতে প্রতিদিনই দেশি-বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা লক্ষণীয়।

হামহাম জলপ্রপাতের কাছেই অবস্থিত এ জলপ্রপাত উচ্চতার দিক থেকে হামহামের চেয়ে কম। তবে এটির সৌন্দর্য হামহামের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। বর্ষা মৌসুমে জলপ্রপাতটির ওপর থেকে প্রচণ্ড শব্দে গড়িয়ে পড়ে ঝরনাধারা। তখন গড়িয়ে পড়া পানির শব্দ শুনে মনে হয় পাহাড়ের কান্না চলছে। এটি মৌলভীবাজার জেলার চতুর্থ জলপ্রপাত। এর আগের তিনটি জলপ্রপাত হলো মাধবকুণ্ড, পরীকুণ্ড ও হামহাম জলপ্রপাত।

সিলেট বন বিভাগের আওতাধীন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কুরমা বন বিটের আয়তন ৭ হাজার ৯৭০ একর। এ বন বিট এলাকার পশ্চিম দিকে চাম্পারায় চা-বাগান, পূর্ব-দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত। কুরমা বন বিটের পাশে শ্রমিকপল্লী কলাবনপাড়া পেরিয়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার গহিন অরণ্যের অভ্যন্তরেই অবস্থান সীতাপ জলপ্রপাতের। এটি থেকে হামহাম জলপ্রপাতের দূরত্ব আরও চার কিলোমিটার।

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাস, ট্রেন বা অন্য কোনো যানবাহনে মৌলভীবাজার জেলা সদর বা শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহরে এসে সহজেই যাওয়া যায় সীতাপ জলপ্রপাতে। তবে মৌলভীবাজার জেলা সদর না হয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা সদর থেকে একটু হলেও সহজসাধ্য। শ্রীমঙ্গল শহরের ভানুগাছ সড়কে চাম্পারায় চা বাগানগামী জিপ গাড়ি পাওয়া যায়। জিপ গাড়িতে করে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রবেশ মুখে নুরজাহান চা বাগানের সাইনবোর্ড থেকে ডানে মোড় নিয়ে লেবু-আনারস-চা বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আঁকাবাঁকা পীচঢালা ও ইট সলিং পাহাড়ি রাস্তা ধরে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মাধবপুর চা বাগানের ভেতর দিয়ে পৌঁছতে হবে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ হামিদুর রহমান সড়কে। এ সড়ক ধরে পাত্রখোলা চা বাগানের বামের পাহাড়ি সড়ক ধরে ধলাই নদ পেরিয়ে পৌঁছতে হবে কুরমা ঘাটে।

কুরমা ঘাট থেকেই শুরু মাটির রাস্তা। এ রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলেই পাওয়া যাবে চাম্পারায় চা বাগান। চাম্পারায় চা বাগানের চা তৈরির কারখানা ডানে রেখে সোজা রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে হবে। অল্পক্ষণের মধ্যে পৌঁছে যাবেন কলাবন চা শ্রমিক পাড়ায়। সেখান থেকে আরেকটু সামনেই আদিবাসী ত্রিপুরাপাড়া ‘তৈইলং’। তৈইলং পাড়ায় পৌঁছে হামহাম অথবা সীতাপ যেখানেই যান না কেন হালকা পোশাক পরিধান বিশেষ করে হাফপ্যান্ট বা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরিধান করলে যাত্রা হবে কিছুটা সহজসাধ্য।

তৈইলংপাড়া থেকে দুটো কাঠের তৈরি সেতু পার হয়ে জারুল ও বেতবাগান পেছনে ফেলে প্যাড নামক স্থানে গেলে পুকুরের মতো জলাশয়টি বামে রেখে ডানে মোড় নিতে হবে। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছতে হবে দুর্গম পাহাড়ি অরণ্যের সীতাপ জলপ্রপাতে। কলাবন চা শ্রমিকপাড়া থেকে সীতাপ জলপ্রপাত পর্যন্ত রাস্তাটি অত্যন্ত পিচ্ছিল। সীতাপে যেতে কখনও পাহাড়ি পাথুরে ছড়া, কখনও বিশালাকার বাঁশবন, কাঁটাবন ইত্যাদি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পাড়ি দিতে হবে। এ ছাড়া ঘন ঝোপঝাড় তো রয়েছেই।

পানিতে ভেজা পাথরের পথ পাড়ি দিতে নিতে হবে কাঠ বা বাঁশের তৈরি লম্বা লাঠি। পিচ্ছিল পাথরের পথে হাঁটা অত্যন্ত কঠিন কাজ। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ছড়ায় মাঝেমধ্যে কোমর সমান পানি পাবেন। তাই অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে ধীরে ধীরে হাঁটতে হবে। পাহাড়ের ভেতরে প্রবেশের পর সূর্যের দেখা মেলা অনেকটা দুরূহ। অন্ধকারাচ্ছন্ন ও শীতল এ পথে সাবধানতা অবলম্বন না করলে নেমে আসতে পারে দুর্ভোগ। পড়তে পারেন কোনো দুর্ঘটনায়। এ ছাড়া পথ হারানোর ভয়তো সবসময়ই রয়েছে। যাতে করে রোমাঞ্চকর এ ভ্রমণ হতে পারে বিব্রতকর অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ।

তবে শত প্রতিকূলতা জয় করে সীতাপ জলপ্রপাতে পৌঁছতে পারলে আপনার দেহ-মনে প্রশান্তির ছোঁয়া লাগবেই। এ জলপ্রপাতের ওপর থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ পাহাড়ি জল অবশ্যই মুগ্ধতায় ভরিয়ে দেবে। এখানকার নয়নাভিরাম ও মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ সবার মন কেড়ে নেয়। তবে হামহাম বা সীতাপ যে জলপ্রপাতেই যান না কেনÑ ট্যুর গাইডের সহায়তা নিলে ভ্রমণ হবে নিরাপদ। শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, কলাবনপাড়া চা শ্রমিকপল্লী অথবা তৈইলং ত্রিপুরাপল্লীতে ট্যুর গাইড পাওয়া যায়।

সীতাপ জলপ্রপাত যেতে হলে জিপ গাড়ি বা সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে যাওয়া যাবে চাম্পারায় চা বাগান পর্যন্ত। জিপ ভাড়া ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, সেখান থেকে হাঁটা পথ। তবে এ জলপ্রপাতে যেতে হলে শ্রীমঙ্গল থেকে খুব ভোরে রওনা হলেই ভালো। নতুবা দিনের আলো থাকতে ফিরে আসা অত্যন্ত কষ্টকর হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা