শত দেশের শত গল্প
রেজাউল বাহার
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৫২ এএম
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ১০:৪১ এএম
সাত মহাদেশের শততম দেশ ভ্রমণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন রেজাউল ও শারমীন দম্পতি। শত দেশের শত গল্প প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর পাঠকের জন্য তুলে ধরেছেন রেজাউল বাহার। আজ থাকছে এল সালভাদোর, ইতালি, নরওয়ে, সুইডেন, ভ্যাটিকান সিটি, কানাডা, অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, মরোক্কোর ভ্রমণ নিয়ে তৃতীয় পর্ব...
মারাকেশ থেকে পূর্বে সাগরঘেষা পোর্ট শহর আসোরা, দক্ষিণে এটলাস পর্বতে আজাদেন ভ্যালিতে বার্বার গ্রাম। দু'দিনের ভ্রমণ ওই দুই জায়গায়। অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতা, পাহাড়ের পথ ধরে হাট বাজার পেরিয়ে বার্বার গ্রামে পৌঁছানো। মারাকেশ থেকেই আমাদের যাত্রা শুরু সাহারার পথে।
ভ্রমণে স্মরণে রাখার মতো যা কিছু ঘটে, সবই অপরিকল্পিত। মরোক্কোর মারাকেশ থেকে সকাল সকাল বের হয়েছি, যাবো আটলাস পর্বতমালার পথ ধরে বার্বার গ্রামে।
পাহাড়ের উপর আমাদের গাড়ি থামলো। সাথে আছে গাইড মোহাম্মদ আর ড্রাইভার মুস্তফা। এখানে আমাদের চা বানিয়ে খাওয়াবে। জীবনে ছোট ছোট এই ব্যাপার গুলোতে থাকে অনেক আনন্দ-উত্তেজনা। চুলা নেই, চারপাশ থেকে কিছু কাঠখড়ি জোগাড় করে ছোট এক কেতলিতে চা বানানো হচ্ছে। একটা চাদর বিছানো হয়েছে, পাহাড়ে অথিতিয়তা। তেমন কিছুই নয়, এক কাপ চা। একটু পরেই একলার এক লোক তার ঘোড়া, আর কিছু বোঝা নিয়ে হেটে যাচ্ছে। মোহাম্মদ তাকে ডেকে একটু আমাদের পাশ ঘেঁষে হেটে যেতে বললো। মোহাম্মদ ছবি তুলবে আমাদের।
ছবি ও সময়টা ঘিরে অপরিকল্পিত স্মৃতিগুলো হয়ে গেলো চিরন্তন, অমূল্য। জীবন কি পরিকল্পনায় চলে? আনন্দ কি ডেকে আনা যায়? হোক বিলাসিতা, হোক আনন্দ বিলাসে ভ্রমণ।
ভ্রমণ শেষের দিকে মোহাম্মদ আমার জন্য, শারমীনের জন্য উপহার নিয়ে এসেছে। কী অদ্ভুত, এই ছেলেটা ট্যুর গাইড হিসাবে কাজ করে, সংসার চালায়। ঘরে তার স্ত্রী আছে, বাচ্চা আছে। ছেলেটা তার নিজের পালক খুলে আমাদের দিতে চাচ্ছে। অনেক না হলেও একটা পালক আমরা নিয়ে আসলাম, নয়তো ছেলেটা কষ্ট পাবে। আমরাও তার জন্য রেখে এলাম পালক। ফেরার সময় ছেলেটা আড়াল করে চোখ মুছছে। তার ভেজা চোখ বহু বছর পরেও আমাকে ভাবায় আমি সেই জলের যোগ্য কিনা। কোনো একদিন আমি আবার ফিরে যাবো মরক্কোতে, ছেলেটাকে খুঁজে বের করবো। আবার আমরা কোথাও ঘুরতে যাবো একসঙ্গে। ভ্রমণ আমাকে এটুকুই দিয়েছে।
এল সালভাদর দেশটির ভূপ্রকৃতির অধিকাংশই আগ্নেয় পর্বতসারি নিয়ে গঠিত। ফলে এখানে কফি চাষ খুবই সুবিধাজনক।
নরওয়েতে ট্রেন যাত্রা। মানবযন্ত্র প্রকৃতির বুক ছিড়ে দ্রুত এগুচ্ছে। এখানে শুধু মানুষেরই এতো তাড়া। কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে, কেন এই তাড়াহুড়া - সবই অজানা, তবু মানুষ ছুটছে।
ট্রেনের কামরা পেরিয়ে জানালার ওপাশটাতে বুনো ফুল, ছেয়ে গেছে চারপাশ। শারমীন অবাক হয়ে দেখছে, দৃষ্টি আটকে আছে বুনোদের সাথে। মানুষ যখন অবাক হয়ে পৃথিবী দেখে, অবাক পৃথিবীও দ্বার খুলে দৃষ্টিসীমানায়।
তিবের নদীর কূল ঘেঁষে ভ্যাটিকান সিটি অবস্থিত। এই নদী পুরো রোম নগরীর মাঝবরাবর চলে গেছে। আয়তন ও জনসংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্র স্বাধীন রাষ্ট্র ভ্যাটিকান সিটি।
সুইডেনের গোথেনবার্গ শহরে হাটছি আমি আর শারমীন। হঠাৎ এক লোকের দিকে দৃষ্টি আটকে গেলো। কিছু একটা বলতে চাইছে, কিন্তু বলছেনা। একে বলে সাইলেন্ট স্ট্রীট আর্ট। লোকটি কি মেসেজ দিচ্ছিলো সবাইকে? প্রশ্নটি তোলা রইলো পাঠকের জন্যই।
বইয়ে দেখে কত মুগ্ধ হয়েছি। জীবন্ত ছবির মতো সে জলপ্রপাতের সামনে দাঁড়িয়ে যেন চক্ষু চড়ক গাছ! যেন এক স্বপ্নপুরীতে হাজির হয়েছি হঠাৎ করে—এমনই এক অনুভূতি। কানাডায় নায়াগ্রাসহ বিভিন্ন জলপ্রপাত দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমাদের।