× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিশ্ব পর্যটন দিবস

চাই পরিবেশবান্ধব পর্যটন

গোলাম কিবরিয়া

প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০১:২৩ এএম

আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:০১ পিএম

 দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে

দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে

আজ বিশ্ব পর্যটন দিবস।  বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পর্যটন দিবস  পালিত হবে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘ট্যুরিজম অ্যান্ড গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট’ বা পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ। 

'সমুদ্র আত্মার সঙ্গে কথা বলে'- কথাটি বলেছিলেন আমেরিকান সাহিত্যিক কেট চোপিন। আর সেন্ট অগাস্টিন বলেছেন, 'পৃথিবী একটা বই আর যারা ভ্রমণ করে না তারা বইটি পড়তে পারে না'। এ রকম অোনেক বড় বড় সাহিত্যিক কিংবা মনীষী ভ্রমণ নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। মানুষের মন কখনোই ঘরে বদ্ধ হয়ে থাকতে পারে না! মন সারাক্ষণই বলে যায় আহারে আহারে, কবে যাব পাহাড়ে? আর তাই ভ্রমণপিপাসু মানুষ ছুঁটে বেড়ায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে। 

১৯৭০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের পর্যটন শাখার বার্ষিক সম্মেলনের নাম, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। তখন থেকে এর নাম ‘বিশ্ব পর্যটন সংস্থা’ (ইউএনডব্লিউটিও) করার বিষয়ে সদস্যরা একমত হয়। নতুন নামে ১৯৭৪ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করে সংস্থাটি। ১৯৮০ সাল থেকে প্রতিবছর ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপিত হচ্ছে। এর লক্ষ্য পর্যটনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পর্যটনের অবদান সম্পর্কে অবহিত করা। 

কেমন চলছে এ সময়ের পর্যটন, পরিব্রাজক হয়ে কোথায় ছুটে বেড়াচ্ছে মানুষ? এমন অনেক প্রশ্ন নিয়ে কথা হয়েছিল পর্যটন সংশ্নিষ্ট একাধিক মানুষের সঙ্গে। বাংলাদেশে হেরিটেজ ট্রাভেল নিয়ে কাজ করছেন এলিজা বিনতে এলাহী। নতুন এ সময়ের পর্যটন নিয়ে এলিজা বলেন, প্রতি বছর ২৭ সেপ্টেম্বর একটি প্রতিপাদ্য বিষয়কে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় পর্যটন দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ট্যুরিজম অ্যান্ড গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট’ বা পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ। দেশের আনাচে-কানাচে পর্যটন শিল্পকে পৌঁছে দিতে এই শিল্পে তরুণ উদ্যোক্তা তৈরির পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আমি মনে করি, সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটালাইজেশনের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য তুলে ধরে পর্যটকদের ভ্রমণে উৎসাহিত করতে হবে।

দেশের পর্যটনে নতুন ধারা যুক্ত করেছে অনলাইনভিত্তিক ট্রাভেল গ্রুপগুলো। তরুণদের হাত ধরে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনারই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বেঙ্গল ট্রেকার্স ট্যুর গ্ৰুপের কো-ফাউন্ডার ও পর্যটন উদ্যোক্তা শূন্য সাগর বলেন, বিগত কয়েক বছরে অপার সম্ভাবনাময় একটি সেক্টর হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে পর্যটন। গত ৭-৮ বছরে দেশে এবং বিদেশে পর্যটকের সংখ্যাও বেড়ে যায় অনেক গুণ; যার সুফল বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে অনেকটা। যদিও অনাকাঙ্ক্ষিত করোনা সিচুয়েশনে এই সেক্টরের বেশ অনেকটাই ক্ষতি হয়েছে; তবে পর্যটন আবারও আগের রূপ ফিরে পেতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে। আমরা প্রায় সবাই আমাদের জীবনে ভ্রমণের গুরুত্ব কিছুটা হলেও টের পেয়েছি। শরীর এবং মনকে চাঙ্গা রাখতে হলে ভ্রমণের বিকল্প খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে। ভ্রমণের মাধ্যমে একদিকে আমরা যেমন নতুন অনেক জায়গা এবং অনেক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করি, অন্যদিকে মনও খুব স্নিগ্ধ একটা সময়ের মধ্য দিয়ে যায়। ফলে নিজেদের জীবনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। মাদক, অবসাদ, হতাশাসহ অনেক কিছু থেকে মুক্ত রাখতে ভ্রমণ বেশ ভালো প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। পর্যটন দিবস উপলক্ষে আমার চাওয়া যে, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প আমাদের-আপনাদের সবার ভালোবাসায় সারাবিশ্বের কাছে ভালো একটি অবস্থানে থাকবে।

ভ্রমণে নতুন গন্তব্য ও ভিন্নধর্মী স্থাপত্যশৈলী পর্যটকদের ভ্রমণে আকৃষ্ট করে     ছবি : বনবাস ইকো ভিলেজ

ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ট্রিয়াব) এর ফাউন্ডিং প্রেসিডেন্ট খবির উদ্দিন আহমেদ পর্যটন শিল্পে রিসোর্টের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ তথা সমগ্র বিশ্বেই বিভিন্ন সার্ভিসের মধ্যে রিসোর্ট হচ্ছে পর্যটকদের সুস্বাস্থ্যের জন্য এক অনন্য স্থান। রিসোর্টগুলো বিশেষ করে গ্রামীণ রিসোর্ট স্বাস্থ্যনিবাস হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০১৯ সালে প্রণীত বিধিমালায় রিসোর্টের ডেফিনেশন হচ্ছে, রিসোর্টগুলো সমুদ্র বা নদী, হ্রদ বা বিল, ঝিল বা দিঘি, হাওর বা বাঁওড়, ডোবা-নালা বা খাল, পাহাড়, বন-জঙ্গল বা বাগানসহ উন্মুক্ত স্থানে হতে হবে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় রিসোর্টগুলো শহর থেকে দূরে গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর পরিমাণ ফরমালিনমুক্ত শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, মাংস ঔষধি গুণাগুণসমৃদ্ধ খাবার, প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত শাকসবজি, ফলমূলসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য পাওয়া যায়, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এ ছাড়া এখানে আয়ুর্বেদিক সবকিছু উৎপাদন হয়, যা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে অতিথিদের পরিবেশন করা হয়ে থাকে। 

পরিবেশবান্ধব পর্যটন শিল্প 

পর্যটনের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে বিশ্ব পর্যটন সংস্থার সম্মেলনে পরিবেশবান্ধব পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার জন্য একটি আন্তর্জাতিক খসড়া প্রস্তাব অনুমোদিত হয়, যা এজেন্ডা-২১ নামে পরিচিত। সুন্দর ও দূষণমুক্ত জলবায়ু পর্যটন শিল্পের অন্যতম উপাদান। কেননা পর্যটকদের ভ্রমণস্থান, গমন ও গমনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই পর্যটন শিল্প জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা প্রভাবিত হয়। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, দূষণমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব পর্যটন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকায়ও পর্যটন শিল্পে ধস নেমেছে। আমাদেরও মনে রাখা দরকার, সিডরের কারণে সুন্দরবনের বিধ্বস্ত অবস্থা বাংলাদেশের পর্যটন অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য চাই সুন্দর, দূষণমুক্ত, গুণগত মানসম্পন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ।

বিশ্ব পর্যটন দিবসে ৪ দিনের ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল’:-বিশ্ব পর্যটন দিবসকে সামনে রেখে চার দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল’ আয়োজন করতে যাচ্ছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড।  ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই উৎসব শুরু হবে। চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।  ফেস্টিভ্যালটি বাংলাদেশের সব ঐতিহ্যকে যেমন আপনার কাছে উপস্থাপন করবে তেমনি অপরূপ এই বাংলার আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ানোর সব সুযোগ সুবিধা তুলে ধরবে।

বাংলাদেশে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। রয়েছে সর্ববৃহৎ সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। সবুজ পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় বান্দরবনের অপরূপ সব পাহাড় ঘুরে। আমাদের পুরো পার্বত্য অঞ্চলই অঘোষিত পর্যটন কেন্দ্র। এ ছাড়া আছে বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, কৃষি, মৎস্য শিকার, ধর্মীয় রীতিনীতি, আদিবাসী সংস্কৃতি ও গ্রামীণ জীবন ঘিরে পর্যটনের আলাদা আলাদা সম্ভাবনা।

সিলেটের চা বাগান, জাফলং, রাতারগুল জলাবন, হাকালুকি হাওর, লালাখাল, ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, তামাবিল, মাধবকুণ্ডের জলপ্রপাত, পাহাড়, ঝরনা সব মিলিয়ে নানা বৈচিত্র্যের সম্ভার রয়েছে সীমান্তঘেঁষা বিস্তীর্ণ সবুজ লীলাভূমি। ঐতিহ্যময় বাংলার সৌন্দর্য সুন্দরবন, বগুড়ার মহাস্থানগড়, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির, রামসাগরসহ সারাদেশের আকর্ষণীয় সব পর্যটন কেন্দ্র পর্যটকদের সামনে তুলে ধরতে হবে। এ দেশের গ্রাম অনিন্দ্য সুন্দর। গ্রামগুলো কেন্দ্র করে অনায়াসেই গ্রামীণ পর্যটন গড়ে তোলা সম্ভব। 

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যুগে যুগে ভ্রমণকারীরা মুগ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে ঐতিহাসিক মসজিদ ও মিনার, পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকত, পাহাড়, অরণ্য প্রভৃতি। এ দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি এলাকা বিভিন্ন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে বিশেষায়িত। নতুন এ সময়ের পর্যটন নতুন করে স্বাগত জানাবে পর্যটকদের। করোনার সব হতাশার মেঘ দূর করে সম্ভাবনার সূর্য উঁকি দেবে পর্যটনকে ঘিরে, এ প্রত্যাশা এখন সংশ্নিষ্ট সবার।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা