× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ধান নদী খাল এই তিনে বরিশাল

ইকরামুজ্জামান খান

প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৪৭ পিএম

আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:৩২ পিএম

বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে আছে নদী-খাল-বিল 	ছবি : তারেক মাহমুদ

বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে আছে নদী-খাল-বিল ছবি : তারেক মাহমুদ

বিলের যত ভেতরে যাবেন, ততই চোখে পড়বে শাপলা ফুলের গালিচা

বিলের যত ভেতরে যাবেন, ততই চোখে পড়বে শাপলা ফুলের গালিচা

অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল ও সবুজবেষ্টনী ঘেরা প্রাচ্যের ভেনিস এই বরিশাল। প্রতিদিন এখানে প্রকৃতি রূপ বদলায়। জোয়ার-ভাটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যা ভিন্ন ভিন্ন রূপ নিয়ে আসে। লিখেছেন ইকরামুজ্জামান খান

বরিশাল অঞ্চলের নানা দিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নদী, খাল। দিনে-রাতে এসব নদী-খালে চলে জোয়ার-ভাটার অপূর্ব খেলা। আর ধানের মৌসুমে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। বরিশাল বিভাগে রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান; যার মাধ্যমে স্থানীয়, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটকরা তাদের ভ্রমণ তৃষ্ণা নিবারণ করেন। বরিশাল বিভাগ মূলত ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা ও ভোলা জেলা নিয়ে গঠিত এবং প্রতিটি জেলায় রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থান। বাংলার ভেনিসখ্যাত বরিশাল জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো পর্যটকদের সবসময়ই মন জুড়াতে সক্ষম। বরিশাল জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে এসে আজ তুলে ধরছি কিছু তথ্য।

বরিশাল সদর উপজেলার উত্তর কড়াপুর গ্রামে মিয়াবাড়ি মসজিদ ছবি : তারেক মাহমুদ

মিয়াবাড়ি মসজিদ

মিয়াবাড়ি মসজিদের অবস্থান বরিশাল সদর উপজেলার উত্তর কড়াপুর গ্রামে। এখানে আমরা দেখলাম কয়েকশ বছরের পুরোনো মিয়াবাড়ি মসজিদ। মনে হয় ১৮০০ শতকে এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এর অসম্ভব সুন্দর স্থাপত্যশৈলী মুগ্ধ করবে যে কাউকে। আটঘর কুড়িয়ানা যাওয়ার পথেই পড়ে এই কড়াপুর মিয়াবাড়ি মসজিদ, যেটা পেয়ারাবাজার ঘুরতে আসা অনেক ট্যুরিস্ট-ই মিস করেন।

গুঠিয়া মসজিদ

বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স। স্থানীয়দের কাছে যা গুঠিয়া মসজিদ নামে পরিচিত। বরিশাল জেলাধীন উজিরপুর থানায় গুঠিয়া ইউনিয়নের চাংগুরিয়া গ্রামে অপূর্ব কারুকার্যে তৈরি মসজিদটির অবস্থান। সুবিশাল মসজিদটি গড়ে তোলা হয়েছে প্রায় ১৪ একর জমির ওপর। সারা বছরই মসজিদটিতে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। শুধু মুসলিমরাই নন, এখানে আনাগোনা রয়েছে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষেরই। প্রায় ১৪ একর জমির ওপর স্থাপিত এই মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। এটি নির্মাণে প্রায় দুই লাখ শ্রমিকের সময় লেগেছে প্রায় তিন বছর। ২০টি গম্বুজের স্থাপত্যকলায় সাজানো হয়েছে মসজিদটি। মসজিদটির দক্ষিণ দিকে রয়েছে প্রায় ১৯৩ ফুট উচ্চতার একটি মিনার। পুরো মসজিদজুড়ে রয়েছে ছোট-বড় ৯টি গম্বুজ। বরিশাল শহরের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বাস বা মাহিন্দ্রায় করে আধঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছানো যায় গুঠিয়া মসজিদে। বরিশাল-বানারীপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে হওয়ায় বাস বা অটো থেকে নেমেই মসজিদটি চোখে পড়বে। 

ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর দীঘির সৌন্দর্য দেখতে অসংখ্য লোকের আগমন ঘটে             ছবি : তারেক মাহমুদ

দুর্গাসাগর দীঘি

বরিশাল শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে স্বরূপকাঠি-বরিশাল সড়কে মাধবপাশায় অবস্থিত দুর্গাসাগর দীঘি। এই জেলাটি প্রাচীন যুগে ‘চন্দ্রদ্বীপ’ নামে পরিচিত ছিল এবং দুর্গাসাগর দীঘি এমন একটি ঐতিহাসিক স্থান, যা এই সময়ে নির্মিত হয়েছিল। এই অঞ্চলটি প্রায় ২০০ বছর ধরে চন্দ্রদ্বীপ রাজবংশ দ্বারা শাসিত ছিল। ঐতিহাসিক এই দীঘিটির জলাভূমির আয়তন ২৭ একর এবং পাড় ও জমিসহ মোট আয়তন ৪৫.৪২ একর। স্থানীয়দের কাছে এই দুর্গাসাগর মাধবপাশা দীঘি নামেও ব্যাপক পরিচিত। চারপাশে নারকেল, সুপারি, শিশু, মেহগনি বৃক্ষ দিয়ে ঘেরা দীঘির উত্তর পাশে একটি বড় বাঁধানো ঘাট আছে। বছরের যেকোনো সময় দুর্গাসাগর দীঘি দেখতে যাওয়া যায়, তবে শীতকালে দুর্গাসাগরের বুকে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। সরাইল ও বালিহাঁসসহ প্রায় ৬ প্রজাতির হাজার হাজার পাখির কলরবে চারপাশ মুখরিত থাকে। প্রায় আড়াইশ বছর পুরোনো ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর দীঘির সৌন্দর্য দেখতে অসংখ্য লোকের আগমন ঘটে।

বরিশাল থেকে চাখার যাওয়ার বাসে চড়লে দুর্গাসাগর দীঘির একদম সামনে নামতে পারবেন। এ ছাড়া লঞ্চঘাট থেকে ব্যাটারিচালিত লেগুনা দুর্গাসাগর দীঘির উদ্দেশে ছেড়ে যায়। চাইলে সিএনজি কিংবা অটোরিকশা রিজার্ভ করে ঘুরে আসতে পারবেন দুর্গাসাগর থেকে।

লাকুটিয়া জমিদারবাড়ি

ইট, পাথর আর সুড়কি দিয়ে গাঁথা ও একসময়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত বরিশালের লাকুটিয়া জমিদারবাড়ি। জমিদারবাড়িটি আনুমানিক ১৬০০ কিংবা ১৭০০ সালে রূপচন্দ্র রায়ের ছেলে জমিদার রাজচন্দ্র রায়ের হাত ধরে ইট-পাথর আর সুড়কি গাঁথুনিতে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে পুরোনো লাকুটিয়া জমিদারবাড়ি। পুরোনো ভবনের চারদিকে নানা শিল্পকর্ম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এখানে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন একটি মঠ, সুবিশাল দীঘি, মাঠ এবং কারুকার্যমণ্ডিত জমিদারবাড়ি।

পুরোনো ভবনের চারদিকে নানা শিল্পকর্ম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে       ছবি : তারেক মাহমুদ

বরিশাল শহর থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরে লাকুটিয়া বাজার। এরপর ইট বিছানো পথ কিছুদূর যাওয়ার পর রাস্তার ডান পাশে মিলবে জমিদারদের অনেক প্রাচীন মন্দির আর সমাধিসৌধ। এগুলোর বেশিরভাগই আটচালা দেউলরীতিতে তৈরি এবং শিখর রীতির মন্দির। পাঁচটি মন্দির এখনও অক্ষতই আছে মনে হয়। জমিদারবাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন পরিত্যক্ত ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। অথচ এই জমিদারবাড়ি ঘিরে রয়েছে প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো ইতিহাস।

শাপলার রাজ্য সাতলা গ্রাম

বরিশাল উপজেলা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে বিশাল এক বিলের মধ্যে দেখা মিলবে ফুলের রাজ্যের। বিলের যত ভেতরে যাবেন, ততই চোখে পড়বে শাপলা ফুলের গালিচা। এ যেন এক শাপলার রাজ্য। বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামে অবস্থিত এই রাজ্য। সাতলা গ্রামের বিলের আগাছা আর লতাপাতায়ঘেরা হাজারো শাপলা চোখ জুড়াবে পথচারীদের। এই বিল স্থানীয়দের কাছে শাপলার বিল নামে পরিচিত। এখানে কবে থেকে শাপলা ফোটা শুরু হয়েছে, তা কারও জানা নেই। কিন্তু গ্রামের বৃদ্ধদের কাছ থেকে জানা যায়, জন্মের পর থেকেই তারা এই বিলে শাপলা ফুটতে দেখেন। স্থানীয়রা প্রায় ৮০ শতাংশ শাপলার চাষ করে থাকেন। তিন ধরনের শাপলার দেখা মিলবে এই বিলে- লাল, সাদা ও বেগুনি। তবে লাল শাপলাই বেশি দেখা যায়।

শাপলা গ্রাম থেকেই সারা দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে শাপলা ফুল সরবরাহ করা হয়   ছবি : সংগৃহীত 

সাতলার প্রায় ১০ হাজার একর জলাভূমিতে শাপলার চাষ করা হয়। শাপলা গ্রাম থেকেই সারা দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে শাপলা ফুল সরবরাহ করা হয়। সারা বছরই কম-বেশি শাপলা ফুল ফুটে থাকে এই বিলে। মার্চ থেকে শুরু করে অক্টোবর পর্যন্ত শাপলার সমারোহ থাকে। আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে বেশি শাপলা ফুটে থাকে। তাই এই তিন মাসের মধ্যে গেলে শাপলার অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। আর হ্যাঁ, শাপলা দেখতে চাইলে অবশ্যই খুব ভোরে যাবেন। বেলা পরে গেলে শাপলা ফুলগুলো শুকিয়ে যায় কিংবা ব্যবসায়ীরা বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যান। তাই সবচেয়ে ভালো হয় এক রাত গ্রামে থেকে সকালে শাপলা বিল দেখতে গেলে। ছবি তোলার জন্য ফটোগ্রাফারদের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা এই শাপলা গ্রাম।

লঞ্চ কিংবা বাস থেকে বরিশাল সদরে নামার পর আবার বাসে করে শিকারপুর আসতে হবে। শিকারপুর থেকে অটো ভাড়া করে উত্তর সাতলা যেতে হবে। বরিশালের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে সাতলা ও বাগধা গ্রামে যাওয়ার সরাসরি বাসে পৌঁছে যেতে পারবেন আপনার গন্তব্যে। এক্ষেত্রে সময় লাগবে ২ ঘণ্টা। তা ছাড়া বরিশাল থেকে মাহেন্দ্র গাড়িতে করে ঘুরে আসতে পারবেন শাপলা গ্রাম।

ভাসমান পেয়ারাবাজার

এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম পেয়ারাবাজার গড়ে উঠেছে ঝালকাঠি, বরিশাল ও পিরোজপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায়। জেলাগুলোর ২৬টি গ্রামের প্রায় ৩১ হাজার একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে এই পেয়ারা বাগান। পানির ওপরই গড়ে উঠেছে এই পেয়ারার বাজার, যেখানে প্রতিদিন পেয়ারার হাট বসে। নৌকায় করে শত শত মণ পেয়ারা আসে, আবার নৌকায় করেই কিনে নিয়ে যান অনেকে।

জুলাই থেকে পিরোজপুর, বরিশাল ও ঝালকাঠি জেলার পেয়ারাচাষিরা শত শত ছোট-বড় নৌকা নিয়ে হাজির হন ভাসমান বাজারে। বাগানের সেরা পেয়ারাগুলো দিয়ে ভর্তি থাকে প্রতিটি নৌকা। পেয়ারাবাজার যেতে বরিশালের নতুল্লাবাদ থেকে বাসে অথবা সিএনজিতে করে যেতে হবে বানারীপাড়া। তারপর সেখান থেকে নসিমনে  যাবেন কুড়িয়ানা। একটু হেঁটে একটা ব্রিজ পার হয়ে আবার ইজিবাইকে করে চলে যেতে পারবেন আটঘর ও কুড়িয়ানা বাজারে। আর ভিমরুলি যেতে চাইলে বানারীপাড়া থেকে নৌকা বা ট্রলারে যাওয়াই ভালো।

অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

এ ছাড়াও ঘুরে দেখতে পারেন অক্সফোর্ড মিশন চার্চ, ছারছীনা দরবার শরিফ, উলানিয়া জমিদারবাড়ি, কলসকাঠী জমিদারবাড়ি, কীর্তনখোলা নদী, পাদ্রিশিবপুর গির্জা, শের-ই-বাংলা স্মৃতি জাদুঘর।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা