× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঘুরে আসুন ঐতিহাসিক আতিয়া মসজিদ

আবীর বসাক

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:১৭ পিএম

আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:৩০ পিএম

ঘুরে আসুন ঐতিহাসিক আতিয়া মসজিদ

ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ আমাদের বাংলাদেশ৷ দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শতবর্ষী প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যার প্রতিটিই বহন করে চলেছে সোনালি স্মৃতি, তুলে ধরছে নিজস্ব স্বকীয়তা৷ তেমনি এক নিদর্শন আতিয়া মসজিদ৷ মোঘল আমলে ১৬০৯ সালে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আতিয়া গ্রামে মসজিদটি নির্মাণ করেন করটিয়ার জমিদার সাঈদ খান পন্নী।

আশির দশকে দশ টাকার নোটে এই মসজিদটির ছবি ছাপা হলে তখন থেকেই এর পরিচিতি বাড়তে থাকে৷ জেলা শহরটিতে বেশকিছু পুরোনো নিদর্শন থাকলেও মসজিদটির নির্মাণশৈলী ও গাঠনিক রুপ নজর কাড়ছে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের৷ জায়গাটি ভ্রমণের ইচ্ছে ছিলো বহুদিনের৷ কিন্তু অফিসের কাজের চাপে সময় হয়ে উঠছিলো না মসজিদটিকে স্বচক্ষে দেখার৷ অবশেষে শহুরে হাজারো ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে হুট করেই ঘুরে আসলাম ষোড়শ শতকের গোঁড়ার দিকে নির্মিত ঐতিহাসিক এই স্থাপনায়৷ 

পৌঁছানোর সড়কটি পিচঢালা হলেও মাঝে মিনিট দশেকের মেঠো পথ, চারপাশের সবুজ ধানক্ষেত আর নৈসর্গিক বাংলার রুপ আপনাকে মুগ্ধ করবেই৷ আতিয়ায় যখন পৌঁছাই সূর্য তখন হেলে পড়েছে প্রায় পশ্চিমে৷ পথের ধারেই টংয়ের দোকান৷ চায়ের কাপে গলা ভিজিয়ে এগিয়ে গেলাম মসজিদটির দিকে৷ এর প্রবেশমুখে রয়েছে শানবাঁধানো অতি প্রাচীন বিশালাকার একটি পুকুড়৷ প্রাচীরঘেরা বর্গাকৃতি মসজিদটির প্রধান কক্ষের উপরে একটি বৃত্তাকার গম্বুজসহ বারান্দার উপর ছোট তিনটি গম্বুজ রয়েছে।

পূর্বদিকে খিলান বিশিষ্ট রয়েছে তিনটি প্রবেশপথ, যার উপরে আরবি এবং একটি ফার্সি শিলালিপি পরিলক্ষিত। মাঝের প্রবেশপথটি অপেক্ষাকৃত উঁচু। এছাড়া উত্তর ও দক্ষিণদিকে আরও দুটি প্রবেশপথসহ মোট আটটি দ্বার রয়েছে। চারটি অষ্টকোণাকৃতির মিনারসহ পুরো মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪২ ফুট, প্রস্থ ৩২ ফুট এবং উচ্চতা ৪৪ ফুট। দেয়াল সাড়ে সাত ফুট পুরু। 

ঘুরতে ঘুরতে অপলকভাবে দেখছিলাম কারিগরদের মন্ত্রমুগ্ধকর হাতের নিখুঁত কাজ৷ গম্বুজ আর দেয়ালগুলোর গায়ে বিভিন্ন রকমের দুর্লভ নকশা মসজিদটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ, যা বিমোহিত করবে যেকোনো দর্শনার্থীকেই। তবে সংস্কারের অভাবে লালচে দেয়ালের বিভিন্ন জায়গায় খসে পড়েছে পলেস্তারা আর টেরাকোটায় জমেছে শেওলার সবুজাভ আস্তর৷ মসজিদের পূর্বদিকে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে এক সুফির পাকা কবর দেখতে পাওয়া যায়৷ কবরের পাশে ছিলো একসময় পাকা সুড়ঙ্গ পথ, যার স্থানীয় নাম আন্ধার মানিক।

বর্তমানে সুড়ঙ্গটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, শতবছরের প্রাচীন মসজিদটি চালুর পর থেকে রোজ নামাজ আদায় চলছে। মুহম্মদ খাঁ নামক তৎকালীন এক প্রখ্যাত স্থপতি এই মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন৷ এটি নির্মাণের পর ১৮৩৭ সালে রওশন খাতুন চৌধুরানী ও ১৯০৯ সালে আবু আহমেদ খান গজনবি এ মসজিদ সংস্কার করেন। দীর্ঘদিন অযত্ন-অবহেলায় থাকার পরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৭৮ সালে মসজিদটির দেখভালের দায়িত্ব নেয়। 

নয়নাভিরাম মসজিদটির নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে মূল্যবান টেরাকোটা৷ বক্রাকার কার্নিশ, দ্বি-কেন্দ্রিক সূঁচালো খিলানযুক্ত মসজিদে প্রতিটি ইটের গাধুঁনি সুলতানি ও মোঘল আমলের স্থাপত্যরীতির সুষম সমন্বয় মনে করিয়ে দেবে ভ্রমণপিপাসুদের। পশ্চিমে পুকুড়পাড়ের সামনের আঙ্গিনাকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে বাহারি ফুল গাছের সমারোহে৷ নামাজ কক্ষে সর্বোচ্চ ছয় কাতার মুসল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। লাল ইট দ্বারা নির্মিত আকারে ছোট হলেও মসজিদটি ইতিহাসগতভাবে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

আতিয়া জামে মসজিদকে কেন্দ্র করে প্রায় দুই কিলোমিটার স্থানজুড়ে বহু প্রাচীন কীর্তি ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন রয়েছে। মোঘল আমলে এটি ছিল প্রশাসনিক কেন্দ্র। মসজিদটি থেকে মিনিট পাঁচেকের হাঁটা দূরত্বে রয়েছে ৯১৩ হিজরিতে ভারতের কাশ্মীর থেকে আতিয়ায় আগত হযরত শাহান শাহ (রহ.) কাশ্মিরীর মাজার। আতিয়া মসজিদের কাছেই কালের পরিক্রমায় ধ্বংসপ্রাপ্ত রংচটা এক গম্বুজীয় সওদাগরি মসজিদটি মনে করিয়ে দিলো দীর্ঘকাল ধরে সংস্কার না হওয়ার স্পষ্ট ছাপ৷   

জনশ্রুতি আছে, আতিয়া মসজিদ প্রাঙ্গণের পূর্বদিকের কূপের কাছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনে বাসন-কোসন, অলংকার চাইলে অলৌকিকভাবে পাওয়া যেত, যদিও কূপটি এখন পরিত্যাক্ত৷ ইতিহাসপ্রেমীদের কাছে ভ্রমণ তালিকায় স্থান পেতে পারে লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা প্রাচীন এই মসজিদটি৷ 

যেভাবে যাবেন:

ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের দূরত্ব ৮৪ কিলোমিটারের মতন৷ ট্রেনে কিংবা মহাখালী বা কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে টাঙ্গাইলগামী যেকোনো বাসে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে৷ ভাড়া পড়বে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা৷ সেখান থেকে অটোরিক্সা বা সিএনজিতে শান্তিকুঞ্জ মোড় হয়ে কাগমারী-দেলদুয়ার সড়কেও যেতে পারবেন অথবা পাথরাইল বটতলা বাজারে এসে অটোরিক্সায় চলে যেতে পারবেন আতিয়াতে৷ 

কোথায় থাকবেন:

ঢাকা থেকে স্বল্প দূরত্বে স্থাপনাটির অবস্থান হওয়ায় দিনে গিয়ে দিনেই ফেরা সম্ভব। তবে চাইলে টাঙ্গাইল শহরে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে রাত্রিযাপন করে এই জেলার অন্যান্য পর্যটন স্পট যেমন দেলদুয়ার, করটিয়া, ধনবাড়ি, হেমনগর, মহেড়া জমিদার বাড়ি, মাওলানা ভাসানীর সমাধি ও জাদুঘর, প্রখ্যাত জাদুশিল্পী পিসি সরকারের বাড়ি, পাথরাইলের তাঁতপল্লী, মধুপুর জাতীয় উদ্যান ও বন ঘুরে আসতে পারেন৷ 






শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা