× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বান্দরবান ভ্রমণ

ভুলতে না পারা সৌন্দর্য

আহসান রনি

প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭:০৬ পিএম

আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭:১০ পিএম

ভুলতে না পারা সৌন্দর্য
ভুলতে না পারা সৌন্দর্য
ভুলতে না পারা সৌন্দর্য
ভুলতে না পারা সৌন্দর্য

আমরা ভ্রমণ করতে হলে যেকোনো যানবাহনে উঠে একটি নির্দিষ্ট সময় পর গন্তব্যে নেমে তারপর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখি। কিন্তু কিছু কিছু ভ্রমণ হয় কিছুটা ভিন্ন। যেমন, নেপালে গেলে আপনি বিমান থেকেই হিমালয়ের পাহাড়ের সারির অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পারবেন, মেরিন ড্রাইভে চাঁদের গাড়ি বা সিএনজিতে যখন চলবেন তখন একই সঙ্গে পাহাড় ও সমুদ্রের দ্বিগুণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। কিংবা দার্জিলিংয়ে ট্রেনে চড়ে পাহাড় ও প্রকৃতিকে উপভোগ করতে পারেন। বাংলাদেশে এ রকম অনেকগুলো রুট আছে যেগুলো আপনাকে অবশ্যই মুগ্ধ করবে। টেকনাফ থেকে জাহাজে সেন্টমার্টিন যাওয়া, নৌকায় সুন্দরবন ঘুরে দেখা, মেরিন ড্রাইভে চাঁদের গাড়িতে ঘোরা বা সাজেকে যাওয়ার পথ আমাদের অনেকেরই পরিচিত। কিন্তু বান্দরবান টু থানচি এবং থানচি টু আলীকদমের অপরূপ পথ আমাদের তেমন পরিচিত নয়। 

এই পথ যেমন অপরূপ তেমনি এই পথের পাশে যেসব দর্শনীয় স্থান আছে প্রতিটিই নজরকাড়া এবং যেকোনো প্রকৃতিপ্রেমীর জন্য পরম চাওয়ার অভিজ্ঞতা। আজকের লেখাটি বান্দরবান টু থানচি এবং থানচি টু আলীকদম রোড ও এর আশপাশের দর্শনীয় স্থানগুলো নিয়ে।

বাংলাদেশকে যদি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বলতে হয় তাহলে বান্দরবানকে সেই লীলাভূমির সবচেয়ে সুন্দর একটি অংশ বলতে হবে। বান্দরবানের যেদিকেই যাওয়া যায় প্রকৃতিকে একদম কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। তাই বান্দরবানে গিয়ে যদি আপনি কোনো প্ল্যান ছাড়াই ঘুরতে বের হয়ে পড়েন তাহলেও অসাধারণ অভিজ্ঞতা পাবেন তা হলফ করে বলতে পারি। দীর্ঘ পাহাড়ি রাস্তাও যে কতটা আনন্দময় ও অ্যাডভেঞ্চারে পরিপূর্ণ হতে পারে তা বান্দরবান আমাদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।

বান্দরবান থেকে থানচির পথে

বান্দরবান শহর থেকে থানচি যাওয়ার সাধারণ উপায় হচ্ছে বাস অথবা চাঁদের গাড়ি। থানচির দূরত্ব প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। বাসে গেলে প্রায় ৪ ঘণ্টার জার্নি আর চাঁদের গাড়িতে ৩ ঘণ্টা লাগে। সকাল ৭টা ৩০ থেকে থানচির বাস শুরু চলা শুরু হয় এবং দেড় ঘণ্টা পর পর একটি বাস ছাড়ে। আর বাসস্ট্যান্ডের পাশেই আছে চাঁদের গাড়ির কাউন্টার, সেখান থেকে যেকোনো সময় গাড়ি বুক করা যায়। 

বান্দরবান শহর থেকে রওনা দিলে কয়েক মিনিট পরেই একের পর এক পাহাড়ি গ্রামের দেখা মেলে আর সঙ্গে দিগন্তবিস্তৃত পাহাড়ের সারি। যেদিকে তাকাবেন যেন সবুজ আর সবুজ। কোনো ছবিতে যেন আর্টিস্ট সবুজ রঙটি ঢেলে দিয়েছে! চোখের প্রশান্তির সঙ্গে আছে প্রাণ ভরে বিশুদ্ধ বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার শান্তি। শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে গেলেই একটি ঝরনার দেখা মিলবে। স্বচ্ছ ও ঠান্ডা পানির 'শৈলপ্রপাত ঝরনাটি বর্ষার সময় এর প্রকৃত রূপ ধারণ করে। ঝরনার পাশেই অবস্থিত বাজার ও পাহাড়ি গ্রামেও কিছু সময় কাটাতে পারেন।

আবার গাড়ি চলতে শুরু করবে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে। মাঝে মাঝে মনে হবে যেন উঁচু পাহাড় থেকে গাড়িটি এই না পড়ে গেল। গাড়ির ডানপাশে তাকালে হয়তো দেখছেন এক বিশাল পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে, আর বামপাশে দূরপাহাড়ের মাঝে আদিবাসী গ্রাম। শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে পৌঁছলেই হাতের ডানে পড়বে চিম্বুক পাহাড়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৫০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এই পাহাড়ে উঠতে আপনাকে তাই ট্রেকিং শুরু করতে হবে। কিছুটা কষ্ট হলেও যখন উঁচু থেকে একদিকে সাঙ্গু নদীর বয়ে চলা এবং পাহাড়ের সারি দেখবেন তখন কষ্টের কথা ভুলেই যাবেন।

এই পথেই শহর থেকে ৪৬ কিলোমিটার দূরে বাংলার দার্জিলিংখ্যাত নীলগিরি পর্যটনকেন্দ্র। এই কেন্দ্রে দেখা হয়ে যেতে পারে মেঘের সঙ্গে। মেঘ আপনাকে ছুঁয়ে দেবে। আর যদি পরিষ্কার দিনে যান তাহলে কেওক্রাডংসহ বিশাল বিশাল পাহাড়ের সারি, সাঙ্গু নদী ও বগা লেকের দেখা পেয়ে যেতে পারেন। 

পথ দিয়ে চলতে চলতে আদিবাসী বাজার, আদিবাসী গ্রাম, জুম চাষ, পাহাড়ি পশু-পাখি, নতুন নানা রকমের গাছ ও বিশাল বিশাল ফলের বাগানের দেখা পেয়ে যাবেন। আশপাশের সৌন্দর্য আপনাকে চোখ ফেরাতে দিতে চাইবে না। কিন্তু এরপর যখন ৪ ঘণ্টা জার্নি করে থানচি বাজারে পৌঁছবেন তখন চারপাশের পাহাড়ের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা সাঙ্গু নদী আপনাকে আরও বেশি মুগ্ধ করবে। বাজারে ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে নদীতে তাকালে দেখতে পাবেন একের পর এক ইঞ্জিন নৌকা সাজিয়ে রাখা। এই অপরূপ দৃশ্য যেন ছবিতে আঁকা কোনো ক্যানভাসের মতো!

থানচি থেকেই আপনি সাকা হাফং, নাফাখুম জলপ্রপাত, আমিয়াখুম জলপ্রপাত, ছোট পাথর (তিন্দু), বড় পাথর বা রাজা পাথর, তমা তুঙ্গী, বাকলাই জলপ্রপাতসহ অপরূপ সব স্থানে ঘুরতে যেতে পারবেন। মূলত এই বাজার থেকেই সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করলে ওরা একজন গাইড দিয়ে দেয়, সেই গাইডের মাধ্যমে নৌকা বা ট্রলার ভাড়া করে রেমাক্রি যেতে হয় এবং সেখান থেকে বিভিন্ন জলপ্রপাতে যাওয়া যায়।

থানচি থেকে আলীকদম

থানচি একদম প্রত্যন্ত থানা শহর আর পাশেই অবস্থিত আলীকদম একটু উন্নত থানা শহর। ৩৫ কিলোমিটারের পথ, কিন্তু এই পথটুকু পার হতে গিয়ে আপনি প্রতি পদে পদে মুগ্ধ হতে বাধ্য। চাঁদের গাড়ি বা বাইকে করে আলীকদম যেতে পারেন। এই রাস্তাটির মূল বৈশিষ্ট্য হলো এটি অনেক উঁচুনিচু এবং ঝুঁকিপূর্ণও বলা চলে। এই পথ দিয়ে যাওয়া কোনো একটি বড় অ্যাডভেঞ্চার থেকে কম নয়, বিশেষ করে যাত্রাটি যদি হয় বাইকের মাধ্যমে। খাড়া খাড়া রাস্তা দিয়ে ওঠা-নামা করতে গিয়ে আপনার বুক কিছুক্ষণ পর পর কেঁপে উঠবে কিন্তু চারপাশের সৌন্দর্য আপনাকে আরও বেশি মুগ্ধ করবে। কিছুদূর এগোলেই সাঙ্গু নদীর বয়ে চলা দেখতে পাবেন এবং পাহাড়ের ওপর থেকে পাহাড়ের ভ্যালিতে সারি সারি পাহাড়ি গ্রামের দেখা পাবেন। মাঝে মাঝেই থেমে থেমে ছবি তুলতে ইচ্ছে হবে।

কিছুদূর এগোলেই মেঘ পাহাড়ে গিয়ে আর্মি ক্যাম্পে থামতে হবে। এই পাহাড়ে মেঘের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। হঠাৎ দেখবেন মেঘের ভেলা আপনার পাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে, হঠাৎ কুয়াশা দিয়ে চারপাশ ভর্তি আবার হঠাৎ চারপাশ পরিষ্কার। এখানে পাহাড়ের পাশে বেঞ্চে বসে প্রকৃতির নানা রঙ উপভোগ করার দারুণ সুযোগ রয়েছে। 

এই রাস্তায় মেঘ পাহাড় থেকে ৪-৫ কিলোমিটার গেলেই ডিম পাহাড়ের দেখা পাবেন। পাহাড়টি দুই উপজেলার মাঝে অবস্থিত আর এই পাহাড়ের ওপর দিয়ে দেশের সবচেয়ে উঁচু রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। ডিমের মতো দেখতে এই পাহাড়ের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় চারপাশে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করে রাখবে। এত সুন্দর রাস্তা বাংলাদেশে খুব কমই আছে।

কিছুদূর এগোলেই চোখ পড়বে দামতুয়া ঝরনায় যাওয়ার রাস্তা। আপনি যদি দুর্গম পাহাড়ে ট্রেকিং করতে যেতে চান তাহলে সময় বের করে দেশের অন্যতম সেরা এই ঝরনাটি দেখার জন্য বেরিয়ে পড়তে পারেন। পথে ওয়াংপা ঝরনা ও তুক অ ঝিরির দেখাও মিলবে।

আলীকদমে পৌঁছানোর আগে হাতের বামে কিছুদূর গেলেই দেখা পেয়ে যাবেন আলীর গুহার। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এই গুহাটি মাতামুহুরী ও টোয়াইন খাল ঘেঁষা দুটি পাহাড়ে ওপরের দিকে অবস্থিত। দুই পাহাড়ের মধ্য দিয়ে দুর্গম রাস্তা পার হয়ে গেলে ৩টি গুহা দেখতে পাবেন। গুহার ভেতরের অন্ধকার ও গা ছমছমে পরিবেশ আপনার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।

প্রবা/জিকে/জেআই


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা