প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২২ ১৭:৪৮ পিএম
আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২২ ২৩:৪৫ পিএম
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ওয়াসফিয়া নাজরীন। ছবি: প্রবা
'কেটু (K2) সামিট জয় করে মাটিতে নেমে আমি অনেক আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। অপেক্ষা করছিলাম কবে দেশে ফিরে আসবো। আপনাদের সঙ্গে এই আনন্দ ভাগ করে নিব'- কথাগুলো প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং অন্যতম কঠিন পর্বতশৃঙ্গ কেটু (K2) সামিট সম্পূর্ণ করা ওয়াসফিয়া নাজরীনের।
নেপালের কাঠমান্ডু থেকে বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইটে করে আজ (১৭ আগস্ট) দেশে ফিরেছেন ৩৯ বছর বয়সী এই পর্বতারোহী। ১৯৫৪ সালের পর পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম ও ভয়ঙ্কর পর্বতশৃঙ্গ হিসেবে পরিচিত কে-টু -তে আরোহণ করা ৪০ নারী পর্বতারোহীর একজন তিনি। ঢাকায় অবতরণ করে রাজধানীর বনানী শেরাটন হোটেলে দুই মাসব্যাপী কারাকোরাম অভিযানের রোমাঞ্চকর যাত্রা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে তার অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ওয়াসফিয়া বলেন, 'বাংলাদেশ যখন ৪০ এ পা দেয়, তখন আমি সেভেন সামিট জয় করার যাত্রা শুরু করি। দেশের ৫০ বছরে আমি চেয়েছিলাম কে-টু জয় করতে। এ জন্য আমি ১০ বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করে কে-টু যাত্রার জন্য নিজেকে গড়ে তুলেছি।'
দূর্গম এই অভিযানে ছিলো মৃত্যুভয়। প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে ছিল পদে পদে হাজারো বাঁধা বিপত্তি। তবুও দমে যাননি ওয়াসফিয়া। এ বিষয়ে তিনি বলেন, 'কে-টু আমার আহোরন করা সবচেয়ে দুর্গম পর্বত, যেখানে বেশ কয়েকবার আমি পাথরে আঘাত পেয়েছি। আবার কিছু ক্ষেত্রে ভাগ্যও সহায়তা করেছে। কে-টু স্থানীয়ভাবে ছোগোরি বা পর্বতের রাজা হিসেবে পরিচিত। প্রতি পদক্ষেপেই সেখানে মৃত্যু ঝুকি রয়েছে।'
টিম ওয়ার্ক ছাড়া এমন সফল অভিযান প্রায় অসম্ভব। তাই দিন শেষে দলের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি ওয়াসফিয়া। তিনি বলেন, 'ডেথ জোন পর্বত সমুহ আরোহন করতে অনেক মানুষের প্রয়োজন হয়। আর এ সাফল্যের জন্য আমি আমার দলের প্রতি কৃতজ্ঞ।'
অভিযান শেষে দেশে ফেরার আকুতি ছিলো তার প্রবল। ওয়াসফিয়া বলেন, 'মাটিতে নেমে আমি অনেক আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। অপেক্ষা করছিলাম কবে দেশে ফিরে আসবো। আপনাদের সঙ্গে এই আনন্দ ভাগ করে নিব।'
উল্লেখ্য, গত ২২ জুলাই প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং অন্যতম কঠিন পর্বতশৃঙ্গ কেটু (K2) সামিট সম্পূর্ণ করেন ওয়াসফিয়া। হিমালয় পর্বতমালার কারাকোরাম পর্বত রেঞ্জের অন্তর্গত এই পর্বতশৃঙ্গটি আজাদ কাশ্মীরের গিলগিত-বালতিস্তান ও চীনের জিংজিয়ানের তাক্সকোরগান সীমান্তে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ৮,৬১১ মিটার (২৮,২৫১ ফুট)। গত ১৭ জুলাই কে-টুর চূড়ায় উঠার জন্য যাত্রা শুরু করেন ৩৯ বছর বয়সী ওয়াসফিয়া। বিপদসংকুল পরিবেশ, প্রায় পিরামিড-সদৃশ ঢাল এবং অনিশ্চিত আবহাওয়ার এই ‘স্যাভেজ মাউন্টেন’ -এর চূড়ায় পা রাখতে পেরেছেন মাত্র ৪শ’ পর্বতারোহী, যাদের অনেকেই আর নিচে নামার সুযোগ পাননি। তার দলের অনেকেই পৃথিবী-বিখ্যাত পর্বতারোহী, যাদের মধ্যে মিংমা তেনজি শেরপা, মিংমা ডেভিড শেরপা এবং নির্মল পুরজাকে নিয়ে ‘১৪ পিকস’ নামে একটি ডকুমেন্টারি করেছে নেটফ্লিক্স। ওয়াসফিয়ার এই ঐতিহাসিক অভিযানের স্পন্সর রেনাটা লিমিটেড।
এর আগে ওয়াসফিয়া দ্বিতীয় বাংলাদেশি নারী হিসেবে ২০১২ সালের ২৬ মে এভারেস্ট জয় করেন। এরপর বাংলাদেশের প্রথম পর্বতারোহী হিসেবে সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গও জয় (সেভেন সামিট) করেন তিনি।
প্রবা/জিকে/আশা