× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দিনে দিনে ঘুরে আসুন

গোলাম কিবরিয়া

প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২২ ১২:৩৯ পিএম

আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২২ ১৭:৪৩ পিএম

ছবি: জিন্দা পার্ক

ছবি: জিন্দা পার্ক

শত ব্যস্ততা ও ছুটির ঝামেলার কারণে আমাদের দূরে কোথাও যাওয়া হয়ে ওঠে না। তবে ব্যস্ততার ক্লান্তির বোঝা লাঘব করতে চাইলে কিছুটা সময় বের করে ঢাকার আশপাশেই কোথাও ঘুরে আসতে পারেন। যেখানে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসা যায়, যাকে আমরা বলি ডে ট্রিপ। এখানে রইল তেমন কিছু লোকেশনের খোঁজ।

মহেড়া জমিদার বাড়ি

গ্রামের মধ্য দিয়ে পিচঢালা পথ বয়ে গেছে। চারপাশটা সবুজে আচ্ছাদিত। মূল ফটকের কাছে এসেই অনুভব করবেন বীরদর্পে দাঁড়িয়ে থাকা জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য। জনপ্রতি টিকিট ৮০ টাকা। এক হাজার ১৭৪ শতাংশ জমির ওপর এই মহেড়া জমিদারবাড়ি অবস্থিত। একে একে দেখে নিতে পারবেন  চারটি ঐতিহাসিক ভবন- চৌধুরী লজ, মহারাজ লজ, আনন্দ লজ ও কালীচরণ লজ। ছুটির দিনে পরিবারকে নিয়ে এমন একটি স্থানে আপনি ভ্রমণ করতে পারেন নির্দি্বধায়।

যেভাবে যেতে হবে 

ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলগামী বাসে নাটিয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডে নেমে অপেক্ষমাণ সিএনজি বেবিট্যাক্সিযোগে (ভাড়া ৭৫ টাকা, শেয়ারে জনপ্রতি ১৫ টাকা) তিন কিলোমিটার পূর্বদিকে মহেড়া জমিদারবাড়ি। মহাসড়কে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, মহেড়া, টাঙ্গাইল নামে দিকনির্দেশনা ফলক (বিশাল সাইনবোর্ড) আছে। আর যারা উত্তরবঙ্গ থেকে আসবেন, তারা ঢাকাগামী যে কোনো বাসে টাঙ্গাইল পার হয়ে ১৭ কিলোমিটার পর নাটিয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডে নেমে একইভাবে যেতে পারেন।

নুহাশ পল্লী

দক্ষ শিল্পীর অকৃত্রিম হাতে সাজানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার যেন নুহাশ পল্লী। আর সে শিল্পী আর কেউ নন তিনি হলেন বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি হুমায়ুন আহমেদ।

ঢাকার অদূরে গাজীপুর জেলার  সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পিরুজালী গ্রামে নুহাশ পল্লী গড়ে তোলেন এ সাহিত্যিক। বর্তমানে নুহাশ পল্লীর আয়তন প্রায় ৪০ বিঘা। একদিনেই খুব সহজে যে কেউ পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এই পল্লী থেকে।

ছবি : নুহাশ পল্লী

প্রবেশ মূল্য : অসাধারণ এই পল্লীতে প্রবেশ জনপ্রতি ২০০ টাকা। তবে ১২ বছরের নিচের কারও জন্য ফি লাগবে না। পিকনিক এবং শুটিংয়ের জন্য নুহাশ পল্লী ভাড়া দেওয়া হয়। যার জন্য গুণতে হবে ৪০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা। তবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছুটা ছাড় রয়েছে। একটি পিকনিক গ্রপে সর্বোচ্চ ২৫০ জন থেকে ৩০০ জনের প্রবেশাধিকারের অনুমতি রয়েছে। সাপ্তাহের প্রতিদিন নুহাশ পল্লী খোলা থাকে।

যা দেখবেন 

নুহাশ পল্লীতেই হুমায়ূন আহমেদ গড়ে তুলেছেন স্যুটিং স্পট, দিঘি আর তিনটি সুদৃশ্য বাংলো। একটিতে থাকতেন আর বাকি দুটি ছিল তার শৈল্পিক চিন্তাধারার আরেক রূপ। শানবাঁধানো ঘাটের দিঘির দিকে মুখ করে বানানো বাংলোর নাম দিয়েছেন ‘ভূত বিলাস’। দুর্লভসব ঔষধি গাছ নিয়ে যে বাগান তৈরি করা হয়েছে তার পেছনেই রূপকথার মৎস্যকন্যা আর রাক্ষস। আরও রয়েছে পদ্মপুকুর, অর্গানিক ফর্মে ডিজাইন করা অ্যাবড়োখেবড়ো সুইমিং পুল। এখানে ২৫০ প্রজাতির দুর্লভ ঔষধি, মসলা জাতীয়, ফলদ ও বনজ গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছের গায়ে সেটে দেওয়া আছে পরিচিতি ফলক, যা দেখে গাছ চেনা যাবে সহজেই। সবুজ মাঠের মাঝখানে একটি বড় গাছের উপর ছোট ছোট ঘর তৈরি করা হয়েছে। উদ্যানের পূর্ব দিকে রয়েছে খেজুর বাগান। বাগনের এক পাশে “বৃষ্টি বিলাস” নমে অত্যাধুনিক একটি বাড়ি রয়েছে। নুহাশ পল্লীর আরেক আকর্ষণ “লীলাবতী দিঘি”। দিঘির চারপাশজুড়ে নানা রকমের গাছ। রয়েছে সানবাঁধানো ঘাট। পুকুরের মাঝখানে একটি দ্বীপ। সেখানে অনেকগুলো নরিকেল গাছ।

কীভাবে যাবেন

রাজধানী থেকে যাবেন যারা, তারা গাজীপুরগামী যে কোনো বাসে করে গাজীপুর চৌরাস্তায় নেমে যাবেন। গাজীপুর চৌরাস্তায় বিভিন্ন জায়গার বাস পাওয়া যায়। সেখান থেকে হোতাপাড়া হয়ে যে বাসগুলো যায় সেই বাসে করে হোতাপাড়া বাজারে নেমে যাবেন। তারপর সেখান থেকে রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজি বা লেগুনা করে সোজা নুহাশ পল্লী চলে যাবেন।

সায়েদাবাদ থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত বাস ভাড়া জনপ্রতি ১২০ টাকা। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে হোতাপাড়া বাজার পর্যন্ত বাস ভাড়া জনপ্রতি ৪০ টাকা। হোতাপাড়া থেকে নুহাশ পল্লীর লেগুনা ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা। রিজার্ভে যেতে চাইলে ৩০০।

জিন্দা পার্ক

নাগরিক জীবনের ব্যস্ততার ফাক গলে খুব কম মানুষেরই সময় হয় একটু বেরিয়ে আসার। সপ্তাহের একটি ছুটির দিনে তাই অনেকেই চান না দূরে কোথাও যেতে। মন কখনো কখনো প্রকৃতির সান্নিধ্যে যেতে চায়। কিন্তু সময়তো মেলাতে হবে। তাই ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার অদূরে জিন্দা পার্ক থেকে। ভালো সময়তো কাটবেই সঙ্গে সবুজ প্রকৃতির সান্নিধ্যে থেকে মনে প্রশান্তিও আসবে।

ঢাকার পাশে নারায়ণগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নে প্রায় ১৫০ একর জমির উপর অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা জিন্দা পার্ক। গাছপালা, পাখপাখালি, জলাধারে ভরপুর এই পার্কটি। এটি এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে গড়ে উঠেছে। প্রায় ৩৫ বছর পূর্বে ১৯৮০ সালে ৫ হাজার সদস্য নিয়ে এই পার্কের যাত্রা শুরু হয়। সেই থেকে শুরু করে এলাকাবাসীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে গড়ে উঠেছে এই পার্কটি।  যেখানে রয়েছে মাটির রাস্তা এবং চারদিকে সবুজ আর সবুজের অরণ্য। প্রায় ২৫০ প্রজাতির গাছ রয়েছে এখানে। পুরো পার্কজুড়ে প্রায় ১০ হাজারের বেশি গাছ রয়েছে।  কোলাহলপূর্ণ জীবনে পাখির ডাক শুনতে চাইলে অবশ্যই ঘুরে আসবেন পাখপাখালিতে ভরপুর জিন্দা পার্কে।

পার্কে গাছপালা এবং পাখপাখালি ছাড়াও আছে বিশাল জলাধার। প্রায় ৫টি জলাধার নিয়ে ঘেড়ানো আছে এই পার্কটি।

বিশাল লেকে  নৌবিহারেরও ব্যবস্থা রয়েছে। লেকের পাশে ৮টি নৌকা রাখা আছে অতিথিদের জন্য। পার্কে অবস্থিত অসাধারণ স্থাপত্য শৈলীর লাইব্রেরিটি যে কারও নজর কাড়বে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই পার্কে বসে আপনি আপনার পছন্দের বইটিও পড়তে পারবেন। মনোরম পরিবেশে অবস্থিত এই পার্কে রয়েছে ট্রি হাউস। গাছের উপর ছোট করে ঘর বানিয়ে রাখা হয়েছে বাচ্চাদের জন্য। ছোট ছোট বাচ্চারা এখানে খেলাধুলা করতে পারবে।

জলাধারের ভেতর ঘুরে বেড়ানোর জন্য আছে সাঁকো।  

ছবি : জিন্দাপার্ক

প্রবেশমূল্য : জিন্দাপার্কে প্রবেশ করতে বড়দের লাগবে ১০০ টাকা এবং বাচ্চাদের লাগবে ৫০ টাকা করে। এ ছাড়া পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও আছে এই পার্কে। পার্কিংয়ের জন্য ৫০ টাকা করে দিতে হবে।

যেভাবে যাবেন

মাত্র ৩৭ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত জিন্দা পার্ক যাওয়ার সবচেয়ে সহজ এবং সুন্দর রাস্তা হলো কুড়িল বিশ্বরোডে পুর্বাচল হাইওয়ে। অর্থাৎ ৩০০ ফিট রোড দিয়ে গেলে সবচেয়ে সহজ উপায়ে যেতে পারবেন এই পার্কে। প্রথমে কুড়িল বিশ্বরোড চলে আসুন। ৩০০ ফিট রাস্তার মাথায় লোকাল প্রাইভেট কার (privet car), সি এন জি (C.N.G) বা লেগুনা দিয়ে কাঞ্চন ব্রিজ যাবেন। কাঞ্চন ব্রিজের আগে বাইপাস মোড়ে গিয়ে লোকাল অটোতে করে জিন্দাপার্ক যেতে ৫ থেকে ১০ মিনিট লাগবে। এ ছাড়া কুড়িল ৩০০ ফিট রাস্তা থেকে সিএনজি  কিংবা অটোরিকশ রিজার্ভ করে নিয়েও একেবারে যেতে পারেন।  সিএনজি  কিংবা অটোরিকশায় গেলে একটু সময় নিলেও চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করে যেতে পারবেন।

টঙ্গী থেকে জিন্দা পার্কের দূরত্ব ২৮ কিলোমিটার। আপনি চাইলে ঢাকা থেকে টঙ্গী মীরেরবাজার গিয়ে বাইপাস রাস্তা দিয়েও জিন্দা পার্ক যেতে পারেন।

এ ছাড়া চাইলে ঢাকা থেকে কাঁচপুর ব্রিজ পাড় হয়ে ভুলতা যাবেন তারপর বাইপাস হয়ে জিন্দা পার্ক যেতে পারেন। ভুলতা থেকে জিন্দা পার্কের দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। এইখানে লোকাল কার, সিএনজি এবং অটো আছে। আপনি চাইলে রিজার্ভ নিয়ে একেবারে পার্কে যেতে পারেন। প্রতিদিন সকাল ৯টায় খোলা হয় এই পার্ক এবং সপ্তাহে প্রতিদিনই খোলা থাকে। তাই আর দেরি না করে ব্যস্ততার ফাক গলে কোনো একদিন ঘুরে আসুন জিন্দা পার্ক থেকে।

সাবদি, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ বন্দর এর একটি জায়গার নাম হচ্ছে সাবদি। সাবদির গ্রাম্য পরিবেশ, রাস্তার দুধারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কিংবা ব্রহ্মপুত্র নদ সবটাই আপনার অবসাদ দূর করিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট! ঘণ্টাপ্রতি ১৫০-২০০ টাকায় নৌকা ভাড়া করে নদে নৌভ্রমণ করতে পারেন। সাবদি ঘাট পাড় হয়ে অন্য পাড়ে ও ঘুরে আসতে পারেন ইচ্ছে করলে। সাবদি এলাকা ফুল চাষের জন্য জনপ্রিয়। রাস্তার দু ধারে কিংবা প্রতি বাড়িতে ফুলের গাছ দেখতে পাবেন। বিশেষ করে কাঁঠবেলী ফুলের গাছ রাস্তার দুধারে সারি সারি করে আছে। শীতকালে ফুলের চাষ বেশি হয়ে থাকে সাবদিতে। অনান্য সময় সেভাবে ফুলের ক্ষেত দেখা যায় না। তবে সাবদি যাওয়ার পথে ছোট্ট একটা ফুলের বাগান নজরে আসবে। চাইলে মাঝপথে থেমে মালিকের অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে পারেন। ব্যস্ততার ফাঁকে একটু সময় গ্রাম্য পরিবেশে হারিয়ে যেতে পারবেন খুব কম খরচে।

ছবি : সাবদি, নারায়ণগঞ্জ

যেভাবে যাবেন

গুলিস্থান থেকে নারায়ণগঞ্জ এর বাস হিমাচল/বন্ধন/উৎসব যেকোনো বাসে উঠে পড়বেন। ভাড়া ৩৬ টাকা। এসি বাস এ আসতে চাইলে শীতলে আসতে পারেন,ভাড়া- ৫৫ টাকা। নারায়ণগঞ্জ নেমে বন্দর ঘাট এ যেয়ে নদী পাড় হতে হবে।নৌকা ভাড়া জনপ্রতি ৫ টাকা।বন্দর ঘাট পাড় হয়ে সিএনজি / অটো রিজার্ভ ১২০  টাকা করে সাবদি বাজার। জনপ্রতি ২০ টাকা করে।

এ ছাড়া দিনে দিনে ঘুরে আসার জন্য ঢাকার আশপাশের এমন মনোরম কিছু দর্শনীয় স্থান হলো পদ্মা রিসোর্ট, নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বর, নরসিংদী ড্রিম হলিডে পার্ক, মানিকগঞ্জ বালিয়াটি জমিদার বাড়ি, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, সাদুল্লাপুর গোলাপ গ্রাম, পানাম ও মেঘনার পার, মৈনট ঘাট, কুমিল্লা শালবন বিহার, গাজীপুরের বেলাইবিল, আড়াইহাজার মেঘনার চর, মুন্সীগঞ্জের ইদ্রাকপুর কেল্লা, সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর, নারায়ণগঞ্জের মায়াদ্বীপ, নেত্রকোনার বিরিশিরি । 

প্রবা/জিকে/ এসআর

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা