× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পিঙ্গল বুনো উকরি

আ ন ম আমিনুর রহমান

প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:০৯ পিএম

আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:০১ এএম

পিঙ্গল বুনো উকরি

দশ দিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষ প্রাণিচিকিৎসার (ডিভিএম) ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ঘুরছি। দিনটি ছিল শিক্ষা সফরের শেষ দিন। রাতে গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা হব। এত দিন ধরে ঘুরতে ঘুরতে দর্শনীয় স্থানগুলোর মায়ায় পড়ে গেছি যেন! এত সুন্দর আমাদের এই দেশ। প্রায় প্রতিবছরই ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা সফরের টিম লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। কিন্তু প্রতিবারই যেন প্রকৃতিকে নতুনভাবে আবিষ্কার করছি। দর্শনীয় স্থানগুলো যেন আমার কাছে নতুনভাবে ধরা দেয়! আর আমিও ওদের রূপসুধায় অবগাহন করি।

সফরের শেষ দিন আমরা রাঙামাটির কাপ্তাই লেক ঘুরব। সকাল ৯টায় ট্রলার বোট ছাড়বে। কিন্তু নয়জন নেপালিসহ সাতান্নজন ছাত্রছাত্রীকে বোটে তুলতে তুলতে ১০টা বেজে গেল। এরপর মাঝি ট্রলার ছাড়ল। ২০১৯ সালের পর এই প্রথম কাপ্তাই লেকে নৌভ্রমণ করছি। ভ্রমণের শুরুতেই দেখা হয়ে গেল ছোট পানকৌড়ি বিশাল এক ঝাঁকের সঙ্গে। লেকের মাঝে ছোট্ট একচিলতে পাহাড়ের বড় এক গাছে কয়েকশ পাখি বসেছিল। আর দু-চারটি করে পানিতে মাছ ধরায় ব্যস্ত ছিল। খানিক পর দেখা হলো গাংচিল-গঙ্গাকৈতরের বিশাল এক ঝাঁকের সঙ্গে। ঝাঁকে দরিয়ার চিল (Whiskered Tern) ও বদরকৈতরের (Brown-headed Gull) সংখ্যাই বেশি ছিল।

লেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে সামনের দিকে এগোচ্ছি। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ স্বর্ণমন্দির-সংলগ্ন একটি আদিবাসী বাজারে এসে বোট থামল। সকলেই বোট থেকে নামলাম। ২০১৯ সালে প্রথম এই বাজারে নেমেছিলাম। মূলত আদিবাসীদের তৈরি জামা-কাপড়, লুঙ্গি, চাদর, শাল, বাঁশের তৈরি হস্তশিল্প ও খাবার-দাবাড় বিক্রি হয় এখানে। ছাত্রছাত্রীরা খাওয়া-দাওয়া ও কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আমি ও অধ্যাপক ড. তৈমুর ইসলাম জয় চাকমার ফলের দোকানে বসলাম। আনারস খেলাম। ছোট্ট আনারস, কিন্তু বেশ মিষ্টি। এরপর জয় ডাব কেটে দিল। ডাবের সুমিষ্ট পানি ও শাঁসে দেহ-মন জুড়িয়ে গেল। তবে এখানে দাম বেশ কম। অন্তত ঢাকার অর্ধেক।

জয়ের দোকানের ডাবের পানি পান করার সময়ই বেশ কিছু প্রজাপতির আনাগোনা লক্ষ করেছি। আসলে আনারস প্রজাপতির প্রিয় খাবার। তাই এত আনাগোনা। কাজেই জয়ের দোকানের খাওয়ার পাট চুকিয়ে প্রজাপতির পেছনে ছুটলাম। সাকিব নামে এক ছাত্র আমার সঙ্গে থাকল। তবে দূরন্ত প্রজাপতিগুলো বেশ ছটফট করছিল। গাছ বা মাটির ওপর কোথাওই বসতে চাচ্ছিল না, শুধুই উড়ো উড়ো ভাব। তাই ওদের ছবি তুলতে বেশ বেগ পেতে হলো। বহু প্রজাতির প্রজাপতির দেখা পেলেও মাত্র সাত প্রজাতির ছবি তুলতে পারলাম। কিন্তু ওদের সঙ্গে অন্য একটি সুন্দর পতঙ্গেরও দেখা পেলাম। একমাত্র এটিই শান্ত ছিল। চুপচাপ একটি ঝোপের গাছের সরু ডালের আগায় বসেছিল। কাজেই ওর ছবি তুলতে মোটেও কষ্ট হলো না। পিঙ্গল বর্ণের এই পতঙ্গটি ছিল পুরুষ। ইতঃপূর্বে বহুবার ওর ছবি তুলেছি। স্ত্রীটিরও ছবি তুলেছি বারকয়েক।

রাঙামাটির স্বর্ণমন্দিরের আদিবাসী বাজারের গাছের ডালে বসে থাকা পতঙ্গটি হলো এ দেশের এক বহুল দৃশ্যমান ও স্বল্প ঝুঁকিসম্পন্ন ফড়িং বা গঙ্গাফড়িং। এর কোনো প্রচলিত বাংলা নাম নেই। আসলে এ দেশের কোনো ফড়িংয়েরই বাংলা নাম আমি পাইনি কোথাও। তাই ২০২২ সালে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের ‘চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর’ থেকে ‘বাংলাদেশের প্রজাপতি ও ফড়িং’ নামে আমার যে বইটি (ফটোগ্রাফিক অ্যালবাম) প্রকাশিত হয়েছে, তাতে যে ২১টি ফড়িংয়ের বর্ণনা দিয়েছি, বাধ্য হয়ে সবগুলোর বাংলা নাম আমাকেই তৈরি করতে হয়েছে। ফড়িংটির ইংরেজি নাম ‘Fulvous Forest Skim-mer’, যার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায় ‘পিঙ্গল বুনো উকড়ি বা পানিকাটা’। লিবেলুলিডি গোত্রের সুঠামদেহী ফড়িংটির বৈজ্ঞানিক নাম Neurothemis ful-via (নিউরোথেমিস ফুলভিয়া)। দেশের সকল এলাকায় এদের দেখা মেলে। আর বিশ্বব্যাপী দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়।

পিঙ্গল বুনো উকরির উদর ২১ থেকে ২৬ মিলিমিটার লম্বা। পেছনের ডানার মাপ ২৭ থেকে ৩২ মিলিমিটার। ফড়িংটির দেহ মরচে রঙের। চোখ অর্থাৎ পুঞ্জাক্ষি গাঢ় লালচে। স্বচ্ছ আগাসহ পুরুষের ডানা মরচে লাল। স্ত্রী একই রকম হলেও ডানা ও দেহের রঙ বেশ ফ্যাকাশে।

এরা মূলত আর্দ্র বনাঞ্চলে বাস করে। তবে বর্ষাকালে বনের বাইরে চলে যায়। সচরাচর পতিত লগ (বা গাছ) ও ঝোপঝাড়ের ওপর ওদের সহজাত ‘ডানা বিছানো’ পদ্ধতিতে বসে থাকতে দেখা যায়। বছরজুড়ে উড়লেও মে থেকে সেপ্টেম্বরে বেশি উড়তে দেখা যায়। বনাঞ্চলের জলপ্রবাহ ও নদীতে প্রজনন করে।

লেখক: পাখি ও বন্য প্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা