ভারত বাংলা ফ্রেন্ডশিপ বাইসাইকেল রাইড
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২২ ১৩:২৩ পিএম
আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২২ ১৬:১৮ পিএম
ছবি: কুমিল্লা সাইক্লিস্ট
আগেই পরিকল্পনা করেছিলাম এবার আর দেশের মধ্যে নয়, দেশের বাইরে গিয়ে সাইকেলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের সংস্কৃতি দেখা হবে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা ভারতের আগরতলা সাইক্লিস্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাদের অভূতপূর্ব সাড়া পেলাম। আমাদের লক্ষ্য ছিল ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়ন। কথাগুলো বলছিলেন কুমিল্লা সাইক্লিস্টের ভলান্টিয়ার ও রাইডের টিম লিডার আরিফুর রহমান উজ্জ্বল।
উজ্জ্বল বাংলাদেশে ট্রাভেলার হিসেবে পরিচিত। উজ্জ্বল বলেন, গত ১ জুলাই কুমিল্লা শহর থেকে আমরা সাইকেলে যাত্রা শুরু করি। আখাউড়া স্থল বন্দর দিয়ে আমরা ভারতে প্রবেশ করি। আখাউড়া পর্যন্ত কুমিল্লা সাইক্লিস্টের ১২ জনের একটি দল আমাদের এগিয়ে দেয়। বেলা ৩টায় বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সেরে আমরা ভারতে প্রবেশ করি। ওই সময়ে আমাদের স্বাগত জানায় আগরতলা সাইক্লোহলিকস ফাউন্ডেশন। ওরা আগরতলার প্রসিদ্ধ সাইক্লিং সংগঠন। আমরা এই ইভেন্টের নাম দিয়েছিলাম ‘বাংলাদেশ ভারত ফ্রেন্ডশিপ রাইড’। আমাদের স্পন্সর করে বাফারলেস,হোটেল ছন্দু ও ত্রিপুরা ট্যুরিজম।
তিনি আরো বলেন, আমাদের আনুষ্ঠানিক সাইক্লিং শুরু হয় ২ জুলাই থেকে। সেদিন আমরা আগরতলা রাজবাড়ি উজ্জয়ন্ত প্যালেস থেকে যাত্রা শুরু করি। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ত্রিপুরা ট্যুরিজমের পরিচালক তরিত কান্তি চাকমা আইপিএস। আমাদের দলে আরও ছিলেন ইউরোপে সাইকেল রাইডে অভিজ্ঞ মোহাম্মদ গোলাম হাক্কানী ও বাংলা চ্যানেল ফিনিশার আল আমিন আকিক। এ ছাড়া আমাদের সঙ্গে ভারতের ৮ জন সাইক্লিস্টও অংশগ্রহণ করেন। রাইডের বিস্তারিত জানাতে গিয়ে উজ্জ্বল বলেন, আখাউড়া থেকে দক্ষিণ ত্রিপুরার বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাস্তা ধরে আমরা রাইড শুরু করি। প্রথম দিন আমরা ত্রিপুরার বক্সনগর বৌদ্ধ বিহার, মেলাঘর নিরমহল হয়ে কুমিল্লা শহর সীমান্তবর্তী সোনামুড়া শহরে যাই। সেদিন সোনামুড়া রাত যাপন করি। দ্বিতীয় দিন বিলুনিয়া হয়ে জলাইবাড়ি দিকে সাইক্লিং করি। তৃষ্ণা অভয়ারণ্য, ছবি টিলা ঘুরে সেদিনের মতো রাইড বন্ধ করে রাত যাপন করি। তৃতীয় দিনে পিলাক প্রত্নতত্ত্ব স্থাপনা পরিদর্শন করে যতনবাড়ির দিকে সাইক্লিং করি। পথে ত্রিপুরার তৃতীয় সর্বোচ্চ পাহাড় শিলাছড়িতে রাইড করি।শিলাছড়ি থেকে বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি উপজেলার পানছড়ি, সাজেকের পাহাড়শ্রেণি স্পষ্ট দেখা যায়। চতুর্থ দিন যতনবাড়ি থেকে ডাম্বুর লেকের নারকেলকুঞ্জ পর্যন্ত ৭৬ কিমি রাইড করি। ওই এলাকাটি পাহাড়বেষ্টিত। এটা আসলে কুমিল্লার ওপর দিয়ে যে গোমতী নদী বয়ে গেছে, সে নদীর উৎপত্তিস্থল। নারকেলকুঞ্জতে আমরা ক্যাম্পিং করে রাত যাপন করি। পঞ্চম দিন আমরা নারকেলকুঞ্জ থেকে অমরপুরের ছবিমুড়া যাই। সেখানে নদীর দুই পাড়ে পাহাড়ের গায়ে প্রাগৈতিহাসিক দেবদেবির মূর্তি খোদাই করা আছে। ষষ্ঠ দিন আমরা কালাঝারি পাহাড়ে রাইড করি।এটা ত্রিপুরার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ, যার উচ্চতা প্রায় ২২০০ মিটার। এরপর চলে যাই উদয়পুরে।সেখানে ত্রিপুরা রাজাদের পুরনো রাজবাড়িসহ অন্যান্য স্থাপনা ঘুরে দেখেছি। পরে আগরতলা শহীদ বগতসিং সরকারি ইয়ুথ হোস্টেলে রাত যাপন করি।
কুমিল্লা সাইক্লিং দলের অন্য দুই সদস্য মোহাম্মদ গোলাম হাক্কানী ও আলামিন আকিক তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, আগরতলা ও ত্রিপুরার আশেপাশের শহরগুলোতে রাইড করে অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আমরা যখন বিভিন্ন এলাকা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম তখন অন্তত ৩৭টি স্পটে নিস্বার্থভাবে আমাদের স্থানীয় লোকজন পানি, ফলমূল দিয়ে আপ্যায়ন করেছে। এই অনুভূতির কথা বলে বুঝানো যাবে না। এ ক’দিনে তারা দক্ষিণ ত্রিপুরার প্রধান প্রধান শহর সাইক্লিং করে সাড়ে ৪ শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়। ফেরার দিন ৮ জুলাই আগরতলায় নিযুক্ত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি ও ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি হাইকমিশনার রেজাউল হক চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে দলটি। সন্ধ্যায় আখাউড়া ইমিগ্রেশন পার হয়ে কুমিল্লা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার সাইক্লিং করে তারা কুমিল্লা টাউনহলে পৌঁছে অফিসিয়ালি রাইডের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
প্রবা/জিকে/এমজে