প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৩ ১৭:০৯ পিএম
আপডেট : ৩১ মে ২০২৩ ১৮:২৬ পিএম
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় অবদান রাখার জন্য টুরিং পুরস্কার পেয়েছিলেন কানাডীয় কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ ইয়োশুয়া বেঙ্গিও। ছবি : সংগৃহীত
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এত দ্রুত বিকশিত হবে তা যদি কানাডীয় কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ ও টুরিং পুরস্কারজয়ী অধ্যাপক ইয়োশুয়া বেঙ্গিও জানতেন, তবে তিনি এর উপযোগিতার চেয়ে সুরক্ষাকেই বেশি প্রাধান্য দিতেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটিই বলেছেন এআই প্রযুক্তি জগতের গডফাদারদের একজন হিসেবে পরিচিত এ অধ্যাপক।
সাক্ষাৎকারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এত দিন কাজ করে আসায় আক্ষেপও ফুটে উঠেছে তার কথায়। তবে এখনও এআই-সম্পর্কিত ঝুঁকি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
বেঙ্গিও বলেন, ‘যেসব কোম্পানি শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে, তাদের প্রত্যেককে নিবন্ধিত হতে হবে। সরকারকে অবশ্যই তারা কী করছে তা ট্র্যাক করতে হবে। তাদের নিয়মিত অডিট করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ’এআই-সম্পর্কিত কোনো প্রযুক্তি সামরিক বাহিনীকে দেওয়া যাবে না।’ তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিশেষজ্ঞ এই অধ্যাপক স্বীকার করে বলেন, ‘বিষয়গুলো চ্যালেঞ্জিং, আবেগগতভাবে বলতে গেলে যারা (এআই সেক্টরের) ভেতরে আছেন তাদের জন্য। কিন্ত আপনাকে চালিয়ে যেতে হবে এবং আপনাকে জড়িত থাকতে হবে, আলোচনা করতে হবে এবং অন্যদের আপনার সঙ্গে চিন্তা করতে উৎসাহিত করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এআই মানবতাকে ধ্বংস করবে এমন অনুমানমূলক ঝুঁকির পরিবর্তে আমাদের সেদিকে মনোনিবেশ করা উচিত।’
বেঙ্গিও এমন সময় সাক্ষাৎকারটি দিলেন যখন মঙ্গলবারই (৩০ মে) এক খোলা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন চ্যাটজিপিটির নির্মাতা কোম্পানি ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অল্টম্যানসহ আরও অনেক প্রভাবশালী প্রযুক্তিবিদ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও রাজনীতিবিদ। যেখানে শঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, মানব প্রজাতিই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জেরে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
‘সেন্টার ফর এআই সেফটি’-এর প্রকাশ করা সেই এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মানুষের বিলুপ্তির ক্ষেত্রে মহামারি ও পারমাণবিক যুদ্ধের মতো ঝুঁকিগুলোর সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ঝুঁকিকেও বিবেচনায় এনে এ-সংক্রান্ত ঝুঁকি কমিয়ে আনা—বিশ্বব্যাপী অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
এর আগে চলতি মাসেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আসন্ন ভয়াবহতা নিয়ে কথা বলতে টেক জায়ান্ট গুগলে নিজের অবস্থান ছেড়ে দিয়েছেন ‘এআই’-এর আরেক গডফাদার ব্রিটিশ কানাডীয় কগনেটিভ মনোবিজ্ঞানী ও কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ জিওফ্রে হিন্টন। তিনি গুগলের সঙ্গে এক দশক ধরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু এখন এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করায় ও এটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় নিজের ভূমিকার জন্যও তিনি উদ্বিগ্ন।
হিন্টন নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছিলেন, আমি স্বাভাবিক অজুহাত দিয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দিই—যদি আমি এটি না করতাম তবে অন্য কেউ করত। সেই নিউইয়র্ক টাইমসই তার গুগল ছাড়া নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ৭৫ বছর বয়সি এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ এআইকে বেশ ভীতিকর উল্লেখ করে বলেছিলেন, এখনও তারা আমাদের থেকে বুদ্ধিমান নয়। আমি যতদূর বলতে পারি, সম্ভবত শিগগিরই তারা তা হবে (মানুষের থেকেও বুদ্ধিমান)।
এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতা, কয়েকটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ এবং এ প্রযুক্তির অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার এবং চাকরি থেকে মানুষকে হটানোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত চ্যাটবটগুলোর ভূমিকা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এর আগে গত মার্চে ইলন মাস্ক-সমর্থিত ‘ফিউচার অব লাইফ’ নামের একটি সংগঠন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে প্রশিক্ষিত করার ওপর ৬ মাসের স্থগিতাদেশের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল। সেখানেও শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
এদিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপকারী প্রয়োগও রয়েছে। চিকিৎসাক্ষেত্রে রোগ শনাক্তে ও বিরল উপকারী অ্যান্টিবায়োটিকের খোঁজেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি