প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:৪৮ পিএম
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:১২ পিএম
স্যাম ব্যাঙ্কম্যান-ফ্রাইড। ছবি : সংগৃহীত
এফটিক্সের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম ব্যাঙ্কম্যান-ফ্রাইডকে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটরদের নির্দেশে বাহামাসে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগের দিন কংগ্রেসের সামনে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জের গত মাসে আকস্মিক ব্যর্থতার বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল।
ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মানহাটনের অ্যাটর্নি অফিসের মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন যে, বাহামাসে স্যাম ব্যাঙ্কম্যান-ফ্রাইডকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে স্যামের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য করতে তিনি অস্বীকার করেছেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটররা বলছেন, স্যামের বিরুদ্ধে সিল করা অভিযোগ রয়েছে। মঙ্গলবার তা প্রকাশ করা হবে। নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে।
ইউএস সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন পৃথকভাবে ব্যাংকম্যান-ফ্রাইডের সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন সম্পর্কিত অভিযোগ অনুমোদন করেছে।
৩০ বছর বয়সি স্যাম এক সময় ক্রিপ্টোজগতের ওয়ারেন বাফেট হিসেবে পরিচিত ছিল। তার প্রতিষ্ঠিত এফটিএক্স ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয় ক্রিপ্টো কেনাবেচা ও বিনিময় প্ল্যাটফরম।
২০১৯ সালে চালু হওয়া বাহামাসভিত্তিক এক্সচেঞ্জটি ১১ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে দেউলিয়া হওয়ার আবেদন করে। অনেক গ্রাহকের টাকা এখন আটকে আছে এফটিএক্সে।
স্যামের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ট্রেডিং ব্যবসায় গোপনে গ্রাহকের ১ হাজার কোটি ডলার ব্যবহার করেছেন। যদিও গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতির যেকোনো অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।
গত ৩০ নভেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসের ডিলবুক সামিটে এফটিএক্সের পতনের পর এক সাক্ষাৎকারে স্যাম বলেন, ‘আমি কখনওই প্রতারণা করার চেষ্টা করিনি এবং ইচ্ছাকৃতভাবে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করিনি।’
যদিও স্যাম জানান, তার আইনজীবীরা তাকে জনসমক্ষে কথা না বলার পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তা উপেক্ষা করেন।
ব্যক্তিগতভাবে এফটিএক্সের তহবিল থেকে অর্থ স্থানান্তরিত করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।
স্যাম দাবি করেছিলেন, এখন তার কাছে কিছুই নেই।
বরং উল্টো তিনি জানান, তার ক্রেডিট কার্ডে ১ লাখ ডলার ঋণই রয়েছে। অথচ একসময় ওয়ারেন বাফেটের সঙ্গে তুলনা করা স্যাম অক্টোবরেও ছিলেন ১৫ বিলিয়ন ডলারের মালিক!
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, নভেম্বর স্যামের জন্য খারাপ মাস ছিল। একসময়ের ক্রিপ্টো রাজার এখন কোনো অর্থই অবশিষ্ট নেই!
এফটিএক্সের অনেক বিনিয়োগকারী দেউলিয়া হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটি থেকে তাদের অর্থ তুলতে পারেননি।
একমাস আগেও কেউ কল্পনা করতে পারেনি যে, এফটিএক্স সাম্রাজ্য ভেঙে পড়তে পারে। এরই মধ্যে অস্থির ক্রিপ্টোকারেন্সির দরদামে এর প্রভাব পড়েছে।
স্যাম এক টুইট বার্তায় বলেছিলেন, ‘আমি সত্যিই দুঃখিত আমরা এখানে শেষ করছি। আশা করি এটি পুনরুদ্ধারের উপায় খুঁজে পাওয়া যাবে।’
গত মাসের শুরুর দিকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, এফটিএক্স ও ব্যাঙ্কম্যানের মালিকানাধীন সংস্থাগুলো আর্থিকভাবে নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। ফলে অনেক গ্রাহক এফটিএক্স থেকে তাদের তহবিল উঠিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
এতে প্রতিষ্ঠানটি নগদ অর্থ সংকটের মুখোমুখি হয়। স্যাম ব্যাঙ্কম্যান বেলআউটের অর্থ জোগাড়ের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অনেক গ্রাহকই অর্থ তুলতে পারেননি।
এফটিএক্সের এমন পরিণতিকে ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতের জন্য শঙ্কার বলে মনে করেন এফটিএক্সের একসময়ের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী বিন্যান্সের প্রধান নির্বাহী চ্যাংপেং ঝাও, যিনি ক্রিপ্টোজগতে সিজে নামে পরিচিত।
সিজে বলেন, ‘এফটিএক্সের নিচে নেমে যাওয়া এ শিল্পের (ক্রিপ্টোজগতের) কারও জন্য ভালো নয়। এটিকে আমাদের জন্য একটি জয় হিসেবে দেখবেন না। এতে ব্যবহারকারীর আস্থা মারাত্মকভাবে নড়বড়ে হয়েছে।’